রোজগারের নতুন দিশা দেখাচ্ছে ইউটিউব, লাখ লাখ টাকা আয় ইউটিউবারদের, চাঙ্গা হচ্ছে অর্থনীতি

রোজগারের নতুন দিশা দেখাচ্ছে ইউটিউব, লাখ লাখ টাকা আয় ইউটিউবারদের, চাঙ্গা হচ্ছে অর্থনীতি

3 stocks recomended

কলকাতা: স্মার্ট ফোন আর ইন্টারনেটের দৌলতে বিশ্ব জুড়ে বিনোদনের সংজ্ঞা বদলে দিয়েছে ইউটিউব। সারা বিশ্বের মতো আমাদের দেশেও লাফিয়ে বাড়ছে ইউটিউবের দর্শক সংখ্যা। আট থেকে আশি, যে কোনও প্রয়োজনে মানুষ এখন দ্বারস্থ হচ্ছেন ইউটিউবের৷ শুধু দর্শক হিসাবেই নয়, নতুন প্রজন্মের কাছে ইউটিউব এখন উপার্জনের অন্যতম পথ৷ বহু যুবক-যুবতীই অন্য পেশা ছেড়ে ইউটিউবার হতে চাইছেন। নিজস্ব একটি ইউটিউব চ্যানেল তৈরি করতে পারলেই কেল্লাফতে৷ সেখানে বিভিন্ন ধরনের ভিডিয়ো পোস্ট করে আপনিও হতে পারবেন লাখপতি৷ চ্যানেলের সদস্য সংখ্যা যত বাড়বে ততই বাড়বে ইউটিউবারের পরিচিতি। বাড়বে উপার্জন৷ 

প্রতিদিন, লাখ লাখ ভারতীয় ইউটিউবে ঢু দিয়ে নতুন নতুন দক্ষতা অর্জন করতে চাইছেন৷ নিজেদের জীবনকে অন্যভাবে সাজাতে চাইছেন৷ কারণ ইউটিউব এমন একটি প্ল্যাটফর্ম, যেখানে রয়েছে অসংখ্য বিষয়বস্তুর সম্ভার৷ কনটেন্ট ক্রিয়েটাররা বিভিন্ন বিষয়ের উপর ভিডিয়ো তৈরি করে তা পৌঁছে দিচ্ছে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রান্তে৷ যা ইউটিউবের দর্শকদের সমৃদ্ধ করছে৷

ভারতে ইউটিউব এমএসএমই সেক্টরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে৷ বিনামূল্যে এখানে রয়েছে তথ্যের ভাণ্ডার, কর্মীদের প্রশিক্ষণের উপায়৷ হাজার হাজার ইউটিউবার আজ এই অ্যাপের মাধ্যমে খুঁজে নিচ্ছেন উপার্জনের পথ৷ 

অন্যদিকে, ইউটিউব ইউজাররা এই অ্যাপের মাধ্যমে বর্তমান ঘটনাবলী সম্পর্কে অবগত থাকতে পারেন৷ এখানে রয়েছে অসংখ্য নিউড চ্যানেল৷ এছাড়াও ইউটিউবে বিভিন্ন বয়সের শিক্ষার্থীদের জ্ঞানার্জনের জন্য রয়েছে বিভিন্ন কোর্স, রয়েছে অসংখ্য তথ্য এবং গাইডলাইন৷  বিভিন্ন ধরনের শিক্ষামূলক ভিডিয়ো অভিভাবক ও শিক্ষক-শিক্ষিকাদের জন্যেও অত্যন্ত উপযোগী৷ 

আজকাল টেলিভিশনের জনপ্রিয়তাকে প্রায় ছুঁয়ে ফেলেছে ইউটিউব। কোনও কোনও ক্ষেত্রে টেলিভিশনকেও ছাপিয়ে গিয়েছে৷ এমনটা বললে অত্যুক্তি হবে না। প্রতি দিন যাঁদের টেলিভিশনের পর্দায় দেখা যায়, তাঁদের মধ্যেও অনেকেই ইদানীং এক-একটি করে ইউটিউব চ্যানেল খুলে ফেলেছেন। নিজেদের জীবনের রোজনামচা দর্শকদের সামনে তুলে ধরছেন তাঁরা।  আমাদের দেশে এমন কিছু ইউটিউবার আছেন, যাঁরা শুধুমাত্র ইউটিউবের মাধ্যমে বিপুল জনপ্রিয়তা কুড়িয়েছেন৷ তাঁদের মধ্যে একজন হলেন বিজু৷ ২০২০ সালে তিনি ইউটিউব চ্যানেলে নিজের জীবনের রোজনামচা নিয়ে আসেন৷  কেরলের এক প্রত্যন্ত গ্রামের বাসিন্দা তিনি৷ বাড়ির রোজকার রান্না থেকে প্রিয় রেসিপি, বিয়ের আচার অনুষ্ঠান, এই সব দেখা যায় তাঁর চ্যানেলে৷ মাত্র ৩ বছরের মধ্যে বিজুর চ্যানেলের সাবস্ক্রাইবার সংখ্যা পৌঁছে গিয়েছে ২ কোটিতে৷

আরেক জনের কথা বলি৷ নাম নেহা আগরওয়াল৷ ২০১৭ সালে ইউটিউব চ্যানেল শুরু করেন নেহা৷ শিক্ষামূলক ভিডিয়ো তৈরি করে থাকেন তিনি৷ বিভিন্ন রকম জিঙ্গেল এবং গল্পের মাধ্যমে ভিডিয়োর জন্য কনটেন্ট তৈরি করেন এই ইউটিউবার৷ যা একাধারে এন্টারটেইনিং অন্যদিকে পড়ুয়াদের জন্য প্রাসঙ্গিক৷ প্রায় ১৫ লক্ষ সাবস্ক্রাইবার রয়েছে তাঁর৷ 

অর্পন কুমার ছান্ডেল যিনি @King নামেই অধিক পরিচিত, ইউটিউবে তাঁর জার্নি শুরু করেন ২০১২ সালে৷ ২০১৯ সালে একটি মিউজিক রিয়্যালিটি শো-এ অংশ নেন কিং৷ তবে ইউটিউব চ্যানেলে তাঁর গানের স্বতন্ত্র শৈলী তাঁর জনপ্রিয়তাকে অন্য উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছে৷ ইউটিউবে ৫৮ লক্ষ ভক্ত রয়েছে তাঁর৷  

তবে এই তালিকাটা বেশ দীর্ঘ৷ ইউটিউবে কারও রয়েছে বুটিক, কেউ আবার বিশাল বাগানের মালি৷ কারও অস্ত্র লাইফ স্টাইল৷ কলকাতাতেও অসংখ্য ব্লগার এবং ইউটিউবার রয়েছেন৷ যাঁরা সাফল্যের সঙ্গে নিজেদের কাজ করে চলেছেন৷  

কিন্তু, ইউটিউবারদের রোজগার হয় কী ভাবে? অনেকেই মনে করেন, চ্যানেলে সাবস্ক্রাইবারের সংখ্যা বাড়লেই হয়তো ইউটিউবের তরফ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা ঢুকবে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে। এটা কি আদৌ ঠিক? আসলে আপনি যেই ভিডিয়োটি পোস্ট করলেছেন, তাতে কত সংখ্যক ‘ভিউ’ হল, প্রত্যক্ষ ভাবে তার উপরেও রোজগার নির্ভর করে না। বরং আপনার পোস্ট করা ভিডিয়োয় বিজ্ঞাপন আসছে কি না, সেটাই আসল কথা।

চ্যানেলে পোস্ট করা ভিডিয়োয় বিজ্ঞাপনের কমিশন থেকে নির্দিষ্ট টাকার অঙ্ক ছাড়াও পেড-প্রোমোশন থেকেও টাকা পেয়ে থাকেন ইউটিউবাররা। অনেক সময়ে, কোনও কোনও ব্র্যান্ড তাদের প্রোডাক্টকে আরও বেশি জনপ্রিয় করে তুলতে ‘সোশ্যাল ইনফ্লুয়েন্সার’দের সঙ্গে যোগাযোগ করেন৷ এ ক্ষেত্রে তারা অনেক সময়ে ইউটিউবারদের বেছে নেন। ওই ইউটিউবারকে তাদের প্রোডাক্টের প্রচার করতে বলা হয়। এর বিনিময়ে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য একটি নির্দেষ্ট অঙ্কের টাকা পেয়ে থাকেন ইউটিউবাররা।

সবচেয়ে বড় বিষয় হল, ভারতীয় জিডিপিতে ১৬ হাজার কোটির টাকা জুগিয়েছে ইউটিউব। পূর্ণ সময়ের জন্য সাড়ে ৭ লক্ষ যুবক-যবতীর কর্মসংস্থান তৈরি করেছে বলে সমীক্ষা রিপোর্ট প্রকাশ করেছে ইউটিউব ইন্ডিয়া৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *