বিহারে ধনী-দরিদ্র বিধায়কের ফারাক চরমে! ২০২৫ ভোটের আগে এডিআর রিপোর্টে চাঞ্চল্য

বিহার বিধানসভা নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে, ততই রাজ্যের রাজনীতি ঘিরে বাড়ছে বিতর্ক ও বিশ্লেষণ। এবার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে বিধায়কদের সম্পত্তির পরিসংখ্যান। অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্রেটিক রিফর্মস (ADR)…

Bihar MLA Wealth Disparity

বিহার বিধানসভা নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে, ততই রাজ্যের রাজনীতি ঘিরে বাড়ছে বিতর্ক ও বিশ্লেষণ। এবার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে বিধায়কদের সম্পত্তির পরিসংখ্যান। অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্রেটিক রিফর্মস (ADR) এবং Bihar Election Watch-এর এক যৌথ সমীক্ষায় উঠে এসেছে চমকে দেওয়ার মতো তথ্য- রাজ্যের ২৪১ জন বিধায়কের মধ্যে সর্বাধিক সম্পদশালী বিধায়কের সম্পত্তি ৮০ কোটিরও বেশি, আর সর্বনিম্ন সম্পদধারী বিধায়কের হাতে মাত্র ৭০ হাজার টাকা!

নীতীশ কুমারের দলের বিধায়ক নীলম দেবী তালিকার শীর্ষে

বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের জনতা দল (ইউনাইটেড) বা জেডিইউ-র মোকামা কেন্দ্রের বিধায়ক নীলম দেবী রয়েছেন এই তালিকার শীর্ষে। ২০২২ সালের উপনির্বাচনে জিতে আসা এই বিধায়ক নিজের শপথপত্রে মোট ৮০ কোটিরও বেশি সম্পত্তির উল্লেখ করেছেন। এর মধ্যে প্রায় ২৯.৮ কোটি টাকার স্থাবর সম্পদ এবং ৫০.৬ কোটি টাকার অস্থাবর সম্পদ রয়েছে।

এই বিপুল সম্পদ শুধু বিহারের নয়, গোটা দেশের অন্যতম ধনী বিধায়ক হিসেবে তাঁকে চিহ্নিত করেছে ADR। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এটি রাজ্য রাজনীতিতে অর্থবল ও প্রভাবের গভীর সম্পর্কের এক প্রতিচ্ছবি।

দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে মানোরমা দেবী ও অজিত শর্মা Bihar MLA Wealth Disparity

দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন গয়ার বেলাগঞ্জ কেন্দ্রের জেডিইউ বিধায়ক মানোরমা দেবী। তাঁর ঘোষিত সম্পত্তি ৭২.৮ কোটি টাকা। তৃতীয় স্থানে রয়েছেন কংগ্রেসের ভাগলপুরের বিধায়ক অজিত শর্মা, যার সম্পদ ৪৩.২ কোটি টাকা।

দারিদ্র্যের প্রতীক আরজেডি বিধায়ক

অন্য প্রান্তে, খাগাড়িয়ার আলাউলি (সংরক্ষিত) কেন্দ্রের আরজেডি বিধায়ক রামবৃক্ষ সাদা। তাঁর ঘোষিত মোট সম্পদ মাত্র ৭০ হাজার টাকা— এর মধ্যে ৩০ হাজার টাকার অস্থাবর সম্পত্তি এবং ৪০ হাজার টাকার স্থাবর সম্পত্তি।

তিনি বহুদিন ধরেই কৃষি সংকট ও গ্রামীণ বেকারত্ব নিয়ে সরব, তাঁর সম্পদের অঙ্ক যেন বিহারের বাস্তব চিত্রের প্রতিফলন।

এর পরেই রয়েছেন সিপিআই(এমএল) লিবারেশন-এর ফুলওয়ারির বিধায়ক গোপাল রবিদাস (১.৫৯ লক্ষ টাকা) এবং পালিগঞ্জের বিধায়ক সন্দীপ সওরভ (৩.৪৫ লক্ষ টাকা)।

ধনী–গরিব ব্যবধান ১,১৪,০০০ গুণ!

ADR-এর বিশ্লেষণ বলছে, বিহারের বিধায়কদের মধ্যে সম্পদের ফারাক ৮০ কোটিরও বেশি— যা ধনী ও গরিব বিধায়কের মধ্যে ১,১৪,০০০ গুণ বৈষম্য তৈরি করেছে। এই তথ্য বিহারের সমাজ–অর্থনীতির অসমতার প্রতিচ্ছবি বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।

নির্বাচনের আগে নতুন বিতর্ক

বিহার বিধানসভা নির্বাচন ২০২৫-এর নভেম্বরেই অনুষ্ঠিত হতে চলেছে। তার ঠিক আগে প্রকাশিত এই প্রতিবেদন রাজনীতির ময়দানে নতুন বিতর্ক উসকে দিয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই তথ্য ভোটারদের মনে এক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তুলবে— অর্থবল না আদর্শ, কোন শক্তিই শেষ পর্যন্ত নির্বাচনের ভাগ্য নির্ধারণ করবে?

ADR-এর মুখপাত্র জানিয়েছেন, “এই পরিসংখ্যান দেখাচ্ছে কীভাবে সম্পদ কিছুজনের হাতে কেন্দ্রীভূত হচ্ছে, অন্যদিকে অনেকে রাজনৈতিক ব্যবস্থায় থেকেও অর্থনৈতিকভাবে বঞ্চিত। তাই আর্থিক ঘোষণায় স্বচ্ছতা বজায় রাখা এখন অত্যন্ত জরুরি।”