সিন্ধু চুক্তি বাতিলের জের! জলসঙ্কটে বিপর্যস্ত পাকিস্তানের গ্রীষ্মকালীন বপন

Indus Waters Treaty Suspension নয়াদিল্লি: ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে ১৯৬০ সালে স্বাক্ষরিত সিন্ধু জলচুক্তি ছিল এক ঐতিহাসিক সমঝোতা, যা দীর্ঘ দশক ধরে উভয় দেশের মধ্যে জলবণ্টনের ভিত্তি…

Indus Waters Treaty Suspension

Indus Waters Treaty Suspension

নয়াদিল্লি: ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে ১৯৬০ সালে স্বাক্ষরিত সিন্ধু জলচুক্তি ছিল এক ঐতিহাসিক সমঝোতা, যা দীর্ঘ দশক ধরে উভয় দেশের মধ্যে জলবণ্টনের ভিত্তি রচনা করেছিল। কিন্তু সাম্প্রকির ঘটনাপ্রবাহের জেরে সেই চুক্তির ভবিষ্যৎই এখন প্রশ্নের মুখে।

সম্প্রতি জম্মু-কাশ্মীরের পাহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার জবাবে ভারত যেসব শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নিয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম এই চুক্তি কার্যত স্থগিত রাখা। যার সরাসরি প্রভাব পড়েছে পাকিস্তানের কৃষি খাতে, বিশেষ করে পাঞ্জাব ও সিন্ধ প্রদেশে, যাদের সেচের নির্ভরযোগ্য উৎস বিতস্তা (ঝেলাম) ও সিন্ধু (ইন্ডাস) নদীর জলাধার মঙ্গলা ও তারবেলা বাঁধ। এই দুই বাঁধে জলের পরিমাণ কমতে কমতে প্রায় অর্ধেক হয়ে গিয়েছে। আচমকা কমতে শুরু করেছে চন্দ্রভাগার জলপ্রবাহও।

জল নেই, চাষ নেই: সংকটে খরিফ মরসুম

পাকিস্তানের ইন্ডাস রিভার সিস্টেম অথরিটি (IRSA) জানিয়েছে, বর্তমানে নদীগুলির জলপ্রবাহ ২১% হ্রাস পেয়েছে এবং বাঁধগুলির জীবন্ত জলসঞ্চয় প্রায় ৫০% কমে গিয়েছে। এর ফলে এবারের খরিফ মৌসুমে ধান, তুলো ও অন্যান্য গ্রীষ্মকালীন শস্য চাষ কার্যত অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এমন অবস্থায় কৃষিপ্রধান পাকিস্তান ব্যাপক খাদ্যসংকট ও মূল্যবৃদ্ধির মুখোমুখি হতে পারে।

পাকিস্তানে বর্তমানে গ্রীষ্মকালীন বীজ বপনের সময় চলছে, যা জলবদ্ধতাকে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় করে তোলে। এই প্রেক্ষাপটে, আইআরএসএ ভারতের জল সরবরাহ কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তাদের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “ভারত থেকে জল সরবরাহ কম হওয়ায় চন্দ্রভাগা নদীতে হঠাৎ জলপ্রবাহের উল্লেখযোগ্য পতন ঘটেছে, যা খারিফ মরসুমের শুরুতে জলাধারে জলের ঘাটতির মাত্রা আরও বাড়িয়ে দেবে।”

পাকিস্তানের ‘জল এবং বিদ্যুৎ ডেভেলপমেন্ট অথরিটি’ (ডব্লিউপিডিএ) সম্প্রতি একটি রিপোর্টে দাবি করেছে, দু’দিনে চন্দ্রভাগার জলপ্রবাহ ৯১ হাজার কিউসেকক কমে গিয়েছে। ভারতের সিন্ধুচুক্তি স্থগিতের সিদ্ধান্তই এর জন্য দায়ী, দাবি ইসলামাবাদের।

আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অভিযোগ, দিল্লির পালটা জবাব Indus Waters Treaty Suspension

এই সংকটকে আন্তর্জাতিকভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। তাজিকিস্তানের দুশানবে-তে অনুষ্ঠিত  রাষ্ট্রসংঘের হিমবাহ সংরক্ষণ সম্মেলনে তিনি ভারতের বিরুদ্ধে একতরফাভাবে চুক্তি বাতিলের অভিযোগ তোলেন।

ভারতের পক্ষ থেকে পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় কেন্দ্রীয় পরিবেশ প্রতিমন্ত্রী কীর্তি বর্ধন সিং স্পষ্ট জানান, “চুক্তির স্পিরিট ছিল পারস্পরিক আস্থা ও সদিচ্ছার ওপর ভিত্তি করে। অথচ পাকিস্তান ক্রমাগত সীমান্ত পেরিয়ে সন্ত্রাস ছড়াচ্ছে। এটাই প্রকৃত চুক্তি লঙ্ঘন।”

তিনি আরও বলেন, জলবণ্টন ব্যবস্থায় সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রযুক্তিগত অগ্রগতি, জনসংখ্যা বৃদ্ধি, জলবায়ু পরিবর্তন এবং নিরাপত্তা উদ্বেগ—সবকিছু মিলিয়ে চুক্তির পুনর্মূল্যায়ন একান্ত প্রয়োজনীয়।

কূটনীতির নতুন মোড়

বিশ্লেষকদের মতে, এই চুক্তি দীর্ঘদিন ধরেই ভারতের ‘সৌজন্য কূটনীতির’ একটি মুখ ছিল। কিন্তু বারবার সীমান্তে সন্ত্রাস, আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারতের বিরুদ্ধে অভিযোগ এবং দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় অনীহার কারণে ভারত শেষমেশ কঠোর পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়েছে।

এখন প্রশ্ন উঠছে—চুক্তি বাতিলের পর ভারত কি নদীর জল পুরোপুরি নিজের দিকে ঘুরিয়ে নেবে? তা কি আন্তর্জাতিক আইন বা পরিবেশের দিক থেকে গ্রহণযোগ্য হবে? এক্ষেত্রে বিশ্বব্যাংক, যিনি এই চুক্তির তৃতীয় পক্ষ, তাঁর ভূমিকা কতটা কার্যকর হবে?

ভারত-পাক জলচুক্তির স্থগিতাদেশ শুধুমাত্র দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কে উত্তাপই বাড়াচ্ছে না, বরং গোটা দক্ষিণ এশিয়ার জলনীতি, পরিবেশনীতি ও খাদ্য নিরাপত্তা-কে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করছে।

India: The 1960 Indus Waters Treaty faces uncertainty as India effectively suspends it following the Pahalgam attack, severely impacting Pakistan’s agriculture. Mangla and Tarbela dams are nearly half empty, jeopardizing the kharif season. Pakistan accuses India of unilateral action at the UN, while India cites cross-border terrorism.