১৪০ বছরের অপেক্ষার অবসান! রেল পথে কাশ্মীর জুড়ল কন্যাকুমারীর সঙ্গে

kashmir kanyakumari rail link নয়াদিল্লি: ১৮৮৪ সাল। জম্মু ও কাশ্মীরের মহারাজা প্রতাপ সিংহ তাঁর প্রধানমন্ত্রী দেওয়ান অনন্ত রামের মাধ্যমে ব্রিটিশ ভারতের কাছে একটি দূরদর্শী প্রস্তাব…

kashmir kanyakumari rail link

kashmir kanyakumari rail link

নয়াদিল্লি: ১৮৮৪ সাল। জম্মু ও কাশ্মীরের মহারাজা প্রতাপ সিংহ তাঁর প্রধানমন্ত্রী দেওয়ান অনন্ত রামের মাধ্যমে ব্রিটিশ ভারতের কাছে একটি দূরদর্শী প্রস্তাব পাঠান৷ সেটা ছিল কাশ্মীরকে উপমহাদেশের রেল নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত করার প্রস্তাব। ১৪১ বছর পেরিয়ে সেই স্বপ্ন আজ বাস্তবে রূপ নিল। চেনাব (চন্দ্রভাগা) ও অঞ্জি খাদ নদীর ওপর নির্মিত অভূতপূর্ব রেলসেতুর উদ্বোধনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কাশ্মীরকে ভারতের জাতীয় রেলপথের সঙ্গে সম্পূর্ণরূপে সংযুক্ত করলেন। এটি কেবল একটি প্রকল্পের সমাপ্তি নয়, বরং একটি যুগান্তকারী ঐতিহাসিক মুহূর্ত, যা ভারতীয় ঐক্য, প্রযুক্তির অগ্রগতি এবং রাজনৈতিক অঙ্গীকারের প্রতীক।

মহারাজার রেলস্বপ্ন: ইতিহাসের পাতায় আঁকা ভবিষ্যৎ

উনবিংশ শতকের শেষদিকে মহারাজা প্রতাপ সিংহ তিনটি রেলপথের পরিকল্পনা করেন-অ্যাবোটাবাদ থেকে শ্রীনগর, জম্মু থেকে শ্রীনগর (ইলেকট্রিক ট্র্যাকশন সহ) এবং জম্মু থেকে শিয়ালকোট। এর মধ্যে কেবল শিয়ালকোট-জম্মু রেলপথটি কার্যকর হয়েছিল, যা দেশভাগের পর ১৯৪৭ সালে ছিন্ন হয়ে যায়।

অন্য দুটি পরিকল্পনা কাগজেই থেকে যায়৷ বিশ্বযুদ্ধ, স্বাধীনতা আন্দোলন এবং রাজনৈতিক টালমাটাল পরিস্থিতির ভেতরে হারিয়ে যায় মহারাজার রেল স্বপ্ন।

স্বাধীন ভারতের সংকল্প ও সংগ্রাম kashmir kanyakumari rail link

প্রায় এক শতাব্দী পর, ১৯৮৩ সালে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী জম্মু-উধমপুর-শ্রীনগর রেললাইন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। তবে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে দীর্ঘ সময় লাগে। একদিকে ছিল ভৌগোলিক দুর্ভেদ্যতা, অন্যদিকে ছিল অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তাজনিত চ্যালেঞ্জ।

২০০৫ সালে চালু হয় জম্মু-উধমপুর রুট। ২০০৯ সালে চালু হয় উপত্যকার মধ্যে বারামুল্লা-শ্রীনগর-কাজিগুন্ড রেলপথ। ২০১৪ সালে যাত্রা শুরু করে উধমপুর-কটরা রেলপথ, যা বৈষ্ণো দেবীর দর্শনার্থীদের জন্য বড় সুযোগ এনে দেয়। তবে প্রকৃত সমন্বয় এল ২০২৩-২৪ সালে। বনিহাল-সাংগালদান ও কটরা-সাংগালদান সেকশন চালু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পূর্ণতা পেল ভারতীয় রেলের ‘কাশ্মীর কানেক্ট’।

চেনাব সেতু: ইস্পাতে লেখা সাহস ও শৌর্যের কাহিনি

চেনাব নদীর ওপর নির্মিত সেতুটি এখন বিশ্বের সর্বোচ্চ রেলওয়ে আর্চ ব্রিজ৷ যার উচ্চতা ৩৫৯ মিটার৷ আইফেল টাওয়ারের থেকেও ৩৫ মিটার উঁচু। প্রকল্পে রয়েছে ৩৮টি টানেল, ৯২৭টি সেতু এবং প্রায় ২১৫ কিমি কঠিন পাহাড়ি সড়কপথ। সন্ত্রাসবাদ, খারাপ আবহাওয়া ও ভূপ্রকৃতিগত জটিলতা সত্ত্বেও প্রকল্পটি থেমে যায়নি। ইরকন (IRCON)-এর ইঞ্জিনিয়ার ও শ্রমিকদের অবদানে এই অসম্ভবকেই সম্ভব করা গিয়েছে৷

“কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী” এখন আর শুধু স্লোগান নয়

আজ ‘কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী’ শ্লোগানটি বাস্তব রূপ নিয়েছে। ভৌগোলিক দুরত্ব নয়, মানসিক দূরত্বও কমেছে একটি রেলপথের মাধ্যমে৷ যেটি শুধু ইস্পাতের নয়, ইতিহাস, সংহতি আর বিশ্বাসের উপর দাঁড়িয়ে।

মহারাজা প্রতাপ সিংহের প্রপৌত্র, বিক্রমাদিত্য সিংহ বলছেন, “প্রথমবার এই রেললাইন পরিকল্পনা করা হয়েছিল আমার পূর্বপুরুষের আমলে। প্রধানমন্ত্রী মোদীর নেতৃত্বে তা আজ বাস্তবায়িত হওয়ায় গর্বে বুক ভরে যাচ্ছে।”

রেললাইন এসেছে, কিন্তু এটি শুধু একটি অবকাঠামো প্রকল্প নয়। এটি ভারতের দীর্ঘমেয়াদি ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালনের গল্প। ১৪১ বছরের প্রতীক্ষা, অসংখ্য বাঁধা, ত্যাগ ও সংকল্প—সব মিলিয়ে এই রেলপথ আমাদের জাতীয় একতার প্রতীক।

India: After 141 years, Maharaja Pratap Singh’s dream of connecting Kashmir by rail is fulfilled! PM Modi inaugurated the Chenab and Anji Khad bridges, fully integrating Kashmir into India’s national railway network. This historic moment symbolizes Indian unity & technological advancement. Discover the journey.