নয়াদিল্লি: জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁও-এ সন্ত্রাসবাদী হামলায় ২৬ জন নিরীহ মানুষের মৃত্যুর পর ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক। এই আবহে আজ রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে (UNSC) অনুষ্ঠিত হচ্ছে রুদ্ধদ্বার বৈঠক। এই গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছে দুই পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশী দেশের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার প্রশ্ন।
বর্তমানে নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্য পাকিস্তান এই বৈঠকের আহ্বান জানিয়েছে। গ্রিস এই মাসে নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতিত্ব করছে এবং তাদের স্থায়ী প্রতিনিধি ইভানজেলোস সেকেরিস বৈঠকের সময়সূচি নির্ধারণ করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, বিষয়টি “অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ” এবং আলোচনার মাধ্যমে কিছুটা হলেও উত্তেজনা প্রশমনের সুযোগ রয়েছে।
পহেলগাঁও হামলার প্রতিক্রিয়ায় ভারতের কড়া অবস্থান
গত ২২ এপ্রিল পহেলগাঁও-এ ভয়াবহ জঙ্গি হামলায় প্রাণ হারান ২৬ জন নিরীহ মানুষ, যাদের অধিকাংশই ছিলেন পর্যটক। দিল্লি সরাসরি ইসলামাবাদকে এই হামলার জন্য দায়ী করেছে এবং একাধিক কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক পদক্ষেপের মাধ্যমে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে চাপ বাড়িয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে সিন্ধু জলচুক্তি স্থগিত, পাকিস্তানের নাগরিকদের জারি করা সমস্ত ভিসা বাতিল এবং ইসলামাবাদ থেকে আমদানি পুরোপুরি নিষিদ্ধ করার মতো পদক্ষেপ।
ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এই হামলাকে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের একটি উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরে রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের অধিকাংশ সদস্য রাষ্ট্রের সঙ্গে কথা বলেছেন। তবে তিনি চিন ও পাকিস্তানের সঙ্গে কোনও আলোচনা করেননি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ব্রিটেন, ফ্রান্স ও রাষ্ট্রসংঘের মহাসচিবের সঙ্গে তাঁর পৃথক আলোচনা হয়েছে। গ্রিসের বিদেশমন্ত্রীর সঙ্গে আলাপে জয়শঙ্কর জানান, তিনি ভারত ‘সীমান্তপারের সন্ত্রাস’ নিয়ে গ্রিসের অবস্থানকে স্বাগত জানান।
জাতিসংঘের অবস্থান: ন্যায়বিচার ও সংযমের বার্তা UNSC Meeting on India-Pakistan
রাষ্ট্রসংঘের মহাসচিব অ্যান্টোনিও গুতেরেস পৃথকভাবে ভারত ও পাকিস্তানের রাষ্ট্রনায়কদের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং পহেলগাঁও-এর ‘ঘৃণ্য’ হামলার নিন্দা জানিয়েছেন। রাষ্ট্রসংঘের মুখপাত্র স্টেফানে দুজারিক বলেন, “দুই দেশের উচিত পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আগেই সর্বোচ্চ সংযম দেখানো এবং শান্তিপূর্ণ সংলাপের মাধ্যমে সমাধানে পৌঁছনো।”
কূটনৈতিক রণনীতি ও আঞ্চলিক বাস্তবতা
বিশ্লেষকদের মতে, ভারত এবার শুধু সন্ত্রাসবাদের শিকার দেশ হিসেবে নয়, বরং আঞ্চলিক নীতি নির্ধারকের ভূমিকায় উঠে আসতে চাইছে। পাকিস্তান চায় আন্তর্জাতিক ফোরামে ‘বড় শক্তিগুলির’ হস্তক্ষেপ, কিন্তু ভারতের লক্ষ্য—সন্ত্রাসবাদকে আন্তর্জাতিকভাবে বিচ্ছিন্ন করে সরাসরি দায় নির্ধারণ।
অন্যদিকে, UNSC-তে ভারতের কূটনৈতিক যোগাযোগ ও পাকিস্তানের আবেদনের মধ্যে পার্থক্য স্পষ্ট—একটি প্রতিরোধমূলক অবস্থান, অন্যটি প্রতিক্রিয়াশীল। সেক্ষেত্রে আজকের রুদ্ধদ্বার বৈঠক শুধু পরিস্থিতির মূল্যায়ন নয়, আগামী দিনগুলিতে উপমহাদেশের ভূ-কৌশলগত সমীকরণকেও প্রভাবিত করতে পারে।
India: UNSC holds closed-door meeting on escalating India-Pakistan tensions after Pahalgaon terror attack. Pakistan called for the meeting. Focus on regional stability. India blames Pakistan, takes strong measures.