নয়াদিল্লি: রাতারাতি গায়েব কয়েক কোটি টাকা! দেশের অর্থনীতির হিসাব ওলটপালট করে উধাও ৮৮ হাজার কোটি টাকা! ভারত সরকারের টাঁকশালে চরম গোপনীয়তা এবং নিরাপত্তার ঘেরাটোপে ছাপা হয়েছিল নোটগুলো। অথচ তার একটা অংশ পৌঁছলই না দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক আরবিআই-এর সিন্দুকে! সব মিলিয়ে যার পরিমাণ ৮৮,০৩২.০৫ কোটি টাকা। গোটাটাই ছিল নতুন ডিজাইনের ৫০০ টাকার নোট। এই বিপুল পরিমাণ টাকা গেল কোথায়?
সম্প্রতি তথ্য জানার অধিকার (আরটিআই) আইনে সরকারের উদ্দেশে করা এক প্রশ্ন জাতীয় অর্থনীতির নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। প্রশ্নের মুখে দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের ভল্টে নোটের সুরক্ষা ব্যবস্থা নিয়েও। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, মনোরঞ্জন রায় নামে এক আরটিআই কর্মী বিষয়টি জানতে চেয়ে প্রশ্ন করেছিলেন। তার প্রেক্ষিতে যে উত্তর মেলে, তা রীতিমতো চাঞ্চল্যকর। কারণ কেন্দ্রীয় সরকার জানায়, তিনটি টাঁকশালে নতুন নকশার ৫০০ টাকার নোট মোট ছাপা হয়েছে ৮৮১ কোটি ৬৫ হাজার৷ সেখানে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার সিন্দুকে আসে ৭২৬ কোটি নোট৷ তাহলে কি মাঝপথেই উধাও ১৭৬ কোটি ৬৫ হাজার নোট? যার মোট মূল্য ৮৮ হাজার ৩২ কোটি টাকা! টাকা উধাও নিয়ে শোরগোল শুরু হতেই শনিবার রাত পৌনে ১১টা নাগাদ টুইট করে বিবৃতি দেয় আরবিআই। জানায়, এই খবর ঠিক নয়। আরটিআইয়ে প্রাপ্ত তথ্যের ভুল ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
মনোরঞ্জন রায়ের তথ্যের অধিকার আইনে করা আরও একটি প্রশ্নের জবাবে নাশিকের কারেন্সি নোট প্রেস তথ্য দিয়ে জানায়, ২০১৬-১৭ অর্থবর্ষে রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে ৫০০ টাকার ১৬৬ কোটি ২০ লক্ষ নোট সরবরাহ করেছিল নাসিক টাঁকশাল। বেঙ্গালুরু টাঁকশালে মুদ্রিত নতুন নকশার ৫০০ টাকা নোটের সংখ্যা ছিল ৫১৯ কোটি ৫৬ লক্ষ ৫০ হাজার এবং দেওয়াস টাঁকশালে ১৯৫ কোটি ৩০ লক্ষ। সবমিলিয়ে ৮৮১ কোটি ৬৫ হাজার নোট ছাপা হয়। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের কাছে পৌঁছয় পাঁচশো টাকার ৭২৬ কোটি নোট।
গতমাসে আরটিআইয়ে প্রাপ্ত অন্য তথ্য অনুসারে, নাসিক টাঁকশাল ২০১৫ সালের এপ্রিল থেকে ২০১৬ সালের ডিসেম্বর মাসের মধ্যে ৩৭ কোটি ৫৪ লক্ষ ৫০ হাজার নতুন নকশার ৫০০ টাকার নোট ছাপা হয়েছিল। কিন্তু রিজার্ভ ব্যাঙ্কের রেকর্ডে দেখা যাচ্ছে, এর মধ্যে মাত্র ৩৪ কোটি ৫০ লক্ষ নোট পৌঁছেছে কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কে। তাহলে বাকি নোট গেল কোথায়? আবার ২০১৫ সালের মার্চ থেকে ২০১৬ সালের এপ্রিল পর্যন্ত উধাও হওয়া ১৭৬ কোটি ৬৫ হাজার নোটের মধ্যে ২১ কোটি ছাপানো হয়েছিল এই নাসিকেই৷ সেই সময় আরবিআই গভর্নর ছিলেন রঘুরাম রাজন।
এই বিপুল পরিমাণ আর্থিক অসঙ্গতির তদন্তের দাবি জানিয়েছেন মনোরঞ্জনবাবু। সেন্ট্রাল ইকনমিক ইন্টেলিজেস ব্যুরো ও এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)-র কাছেও আরটিআইয়ে প্রাপ্ত তথ্যের কপি পাঠিয়েছেন তিনি। মনোরঞ্জনবাবুর বক্তব্য, এভাবে বিপুল পরিমাণ নোট উধাও হয়ে যাওয়াটা মোটেই সাধারণ ব্যাপার নয়। হিসাবের এই গড়মিল দেশের অর্থনীতির পক্ষে বিপজ্জনক। অথচ রিজার্ভ ব্যাঙ্ক উদাসীন৷ এই ঘটনায় সেন্ট্রাল ইকনমিক ইন্টেলিজেন্স বুরো ও ইডিকে চিঠি পাঠিয়েছেন তিনি।
এর পর শনিবার রাতেই রিজার্ভ ব্যাঙ্কের তরফে এক বিবৃতিতে জানানো হয়, তথ্যের অধিকার আইনে টাঁকশাল থেকে পাওয়া তথ্যের ভুল ব্যাখ্যা করা হয়েছে। প্রসঙ্গত, তিনটি সরকারি টাঁকশালে ভারতীয় নোট ছাপার কাজ চলে। এগুলি হল, বেঙ্গালুরুর ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক নোট মুদ্রণ (পি) লিমিটেড, নাশিকের কারেন্সি নোট প্রেস এবং মধ্যপ্রদেশের দেওয়সের ব্যাঙ্ক নোট প্রেস। ছাপার পরে সেই সব নোট পাঠানো হয় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ভল্ট বা সিন্দুকে। সেখান থেকে ব্যাঙ্কের মাধ্যমে বাজারে আসে নোট।
” style=”border: 0px; overflow: hidden”” title=”YouTube video player” width=”560″>