প্রতি ৩০ ঘণ্টায় জন্ম নিচ্ছে ১ জন নতুন বিলিয়নেয়ার! চরম দারিদ্রে ১০ লক্ষ

প্রতি ৩০ ঘণ্টায় জন্ম নিচ্ছে ১ জন নতুন বিলিয়নেয়ার! চরম দারিদ্রে ১০ লক্ষ

নয়াদিল্লি: কথায় বলে কারও পৌষ মাস, কারও সর্বনাশ৷ এই প্রবাদ যেন অক্ষরে অক্ষরে সত্যি প্রমাণিত হয়েছিল করোনা পরিস্থিতিতে৷ একদিকে মৃত্যু মিছিল৷ স্বজনহারা কান্না৷ পরিবারের একমাত্র রোজগেরের মৃত্যুতে হাহাকার৷ অন্যদিকে, ফুলেফেঁপে উঠছিল ধনকুবেরদের ভাণ্ডার৷ অতিমারি পরিস্থিতিতে প্রতি ৩০ ঘণ্টায় এক জন করে ১০০ কোটি ডলারের মালিক বা বিলিওনেয়ার হয়েছেন৷ অতিমারি পর্বে বিলিওনেয়ার হয়েছেন ৫৭৩ জন৷

শুধু তা-ই নয়, বিশ্বজুড়ে বিলিওনেয়ারদের এলিড র সদস্যদের মোট সম্পদ গোটা বিশ্বের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের ১৩.৯ শতাংশ। অক্সফ্যাম বলছে, ২০০০-কে মাপকাঠি ধরা হলে এই বৃদ্ধি তিনগুণ। ২০০০-এ এই শতাংশ ছিল ৪.৪। দাভোসে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের বৈঠকের ঠিক আগে এই রিপোর্ট প্রকাশ করে অক্সফ্যাম৷ এই প্রতিবেদনের নাম দেওয়া হয় ‘যন্ত্রণার সময়ে মুনাফা’। এই রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, ‘কোভিড অতিমারির সময়কাল ছিল বিলিওনেয়ারদের জন্য ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ সময়।’

একটা বিপদ ধনকুবেরদের ঝুলি উপচে দিল৷ তাঁদের জীবনে এমন সোনার দিন হয়তো আসত না যদি বিপরীত পরিস্থিতি তৈরি না হত। কারণ এই অতিমারী পর্বে যেমন প্রতি তিরিশ ঘণ্টায় একজন করে নতুন বিলিওনেয়ারের জন্ম হয়েছে, তেমনই প্রতি ৩৩ ঘণ্টায় দশ লক্ষ মানুষ চরম দারিদ্রে ডুবে গিয়েছেন৷ রিপোর্ট অনুযায়ী, চলতি বছর নতুন করে চরম দারিদ্রে ডুবে যাবে ২৬ কোটি ৩০ লক্ষ মানুষ৷

বিশ্বে মোট বিলিওনেয়ারের সংখ্যা এখন ২,৬৬৮। তাঁদের মধ্যে সবচেয় ধনী ১০  ব্যক্তির মোট সম্পদ আয়ের দিক থেকে নীচে থাকে বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৪০ শতাংশের মোট সম্পদের চেয়ে বেশি। এই ৪০ শতাংশ আসলে বিশ্বের ৩১০ কোটি মানুষ। সোজা কথায়, বিশ্বের ৩১০ কোটির মানুষের মোট  সম্পদের চেয়ে  এই ১০ ধনকুবেরের সম্পদ অনেক বেশি। করোনা অতিমারী পর্বে ৯৯ শতাংশ মানুষেরই আয় কমেছে৷ অন্যদিকে, এই ১ শতাংশের আয় বেড়েছে নজিরবিহীন হারে।

বৈষম্যের এই প্রক্রিয়া একদিনের ঘটনা নয়৷ এটা চলমান৷ করোনা অতিমারী শুধু তাকে তীব্রতর করেছে। অক্সফ্যাম ইন্টারন্যাশনালের অধিকর্তা গ্যাব্রিয়েলা বুচারের কথায়, বিলিওনেয়ারদের সম্পদ এই শ্রবৃদ্ধির কারণ তাঁদের কঠোর পরিশ্রম নয়, বরং এই সম্পদ বৃদ্ধির কারণ হল চরম ঔদ্ধত্য৷ যেমন অপ্রতিহতভাবে তাঁরা দশকের পর দশক ধরে গোটা ব্যবস্থাকে লুট করেছে, তারই সুফল ঘরে তুলছে। পরিস্থিত বোঝাতে ‘রিগিং’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন বুচার।

একই সঙ্গে দেখতে গেলে গত দুই দশকে সবচেয়ে বেশি দারিদ্র বৃদ্ধি পয়েছে৷ দারিদ্র মোকাবিলায় যেটুকু অগ্রগতি হয়েছিল তা উলটোদিকে হাঁটতে শুরু করেছে। অক্সফ্যামের হিসাব এ বছরের শেষে ৮৬ কোটি মানুষ দৈনিক ১.৯০ ডলারের (ভারতীয় টাকার অঙ্কে ১৪৭টাকা) কম আয় করবেন।

রিপোর্ট বলছে, গত দুই বছরে সবচেয়ে বেশি মুনাফা লুটেছে খাদ্য ও জ্বালানির ব্যবসায়ীরা৷ অতিমারির সময়ে এই দুই ক্ষেত্রের কারবারীদের প্রতি দু’ঘণ্টায় ১০০ কোটি ডলার করে সম্পদ বৃদ্ধি হয়েছে। খাবারের দাম বাড়তে থাকায় ২৪ মাসে নতুন করে ৬২ জন খাদ্যবস্তুর কারবারী বিলিওনেয়ার হয়েছেন। এই ব্যবসা ক্রমশ একচেটিয়া রুপ নিচ্ছে। বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ খাদ্য ব্যবসায়ী কারগিল সংস্থার পরিবারের ১২জনই এখন বিলিওনেয়ার৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কার্গিলের ১৫৭ বছরের ইতিহাসে গত বছর সবচেয়ে বেশি মুনাফা করেছে। তাঁদের মুনাফা বেড়েছে ৬৩ শতাংশ। রাষ্ট্রসঙ্ঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার হিসেব অনুযায়ী, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের তুলনায় মার্চে খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে ১২.৬ শতাংশ। নতুন করে খাদ্যদ্রব্যের এই মূল্যবৃদ্ধি চরম দারিদ্রের দিকে আরও বেশি করে ঠেলে দিয়েছে মানুষকে৷ লক্ষ লক্ষ মানুষের কাছে আজ বেঁচে থাকাই দায়৷

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

1 × 3 =