কলকাতা: স্বাধীনতার ৭৫ বছর উপলক্ষে দেশজুড়ে পালিত হচ্ছে আজাদি কা মহোৎসব৷ সেই উপলক্ষে সকল দেশবাসীকে তাঁদের সোশ্যাল মিডিয়ার প্রোফাইল ছবি পাল্টে তেরঙ্গা করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী৷ কিন্তু জানেন কি স্বাধীনতার ৪০ বছর আগে উত্তোলিত হয়েছিল জাতীয় পতাকা৷ সেই পতাকা উত্তোলন করেছিলেন বীর স্বাধীনতা সংগ্রামীদের মধ্যে অন্যতম ভিকাজি প্যাটেল কামা। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে যাঁর নাম লেখা রয়েছে স্বর্ণাক্ষরে৷ বিশং শতকে নারী আন্দোলনকারীদের মধ্যে তিনি ছিলেন অগ্রগণ্য৷
আরও পড়ুন- রাজৌরির সেনা চৌকিতে জঙ্গি হামলা, নিহত তিন জওয়ান, পাল্টা গুলিতে খতম তিন জঙ্গি
১৯০৭ সালের ২ অগাস্ট জার্মানির স্টুটগার্টে আয়োজিত একটি আন্তর্জাতিক সামাজতান্ত্রিক সম্মেলনে প্রথম ভারতের পতাকা উত্তোলন করেন ভিকাজি কামা৷ সেই সঙ্গে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামকে সমর্থন করার জন্য বিশ্ব দরবারে কাছে আর্জি জানান তিনি৷ সেই মুহূর্ত দেশের ইতিহাসে লেখা রয়েছে স্বর্ণাক্ষরে৷ বিদেশের মাটিতে প্রথম ভারতের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেছিলেন ভিকাজি কামাই৷ তিনি জার্মানিতে থাকাকালীন ভারতে দুর্ভিক্ষের ভয়াবহতার কথা তুলে ধরেছিলেন৷ যে দুর্ভিক্ষ ভারতকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছিল৷ তিনি তুলে ধরেছিলেন মানবাধিকার লঙ্ঘনের কথা৷ জার্মানিতে দাঁড়িয়ে ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্তির আহ্বান জানিয়েছিলেন ভিকাজি কামা৷ তিনি জার্মানিতে যে পতাকাটি উত্তোলন করেছিলেন, সেটি পরে ভারতে ফিরিয়ে আনা হয়৷ বর্তমানে সেটি রয়েছে পুনের একটি জাদুঘরে৷
কেমন ছিল সেই পতাকা?
যৌথভাবে ওই পতাকাটির নকশা এঁকেছিলেন ভিকাইজি প্যাটেল কামা, বিনায়ক দামোদর এবং শ্যামজি কৃষ্ণবর্মা৷ যা পরবর্তী সময় স্বাধীন ভারতের জন্য তৈরি করা জাতীয় পতাকাকে অনুপ্রাণিত করেছিল। কামার উত্তোলিত পতাকাটিকে ‘দ্য কামা ফ্ল্যাগ’ও বলা হয়ে থাকে। এর উপরে ছিল গেরুয়া, মাঝে হলুদ এবং তলায় সবুজ। মাঝের হলুদ রঙে আটটা পদ্মের স্থানে আকাশের সপ্তর্ষিমণ্ডলকে ইঙ্গিত করে ছিল সাতটা পদ্ম৷ সেই সঙ্গে দেবনাগরী হরফে লেখা ছিল ‘বন্দে মাতরম্’৷ সবুজের মধ্যে ছিল একটা সূর্য আর একটা অর্ধচন্দ্র৷ এর উপর ছিল একটা তারা।
ভিকাজি প্যাটেল-কামা কে ছিলেন?
১৮৬১ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর ব্রিটিশ ভারতের বোম্বাই শহরে ধনী জরথুস্ট্রিয়ান (পার্সি) বণিক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন ভিকাজি কামা৷ তাঁর বাবা ছিলেন সোরাবজি প্যাটেল এবং মা জাইজিবাই প্যাটেল৷ তদানীন্তন বোম্বাইয়ের বাইলাকুল্লার বিখ্যাত আলেকজান্দ্রা গার্লস ইংলিশ ইনস্টিটিউশন থেকে তিনি পড়াশোনা করেন৷ বিভিন্ন ভাষার প্রতি বরাবরের আগ্রহ ছিল তাঁর৷ দ্রুত ভাষা শেখার ক্ষমতাও ছিল কামার। খুব অল্প বয়স থেকেই ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতি আকৃষ্ট হন তিনি।
বিখ্যাত আইনজীবী রুস্তমজি কামার সঙ্গে বিবাহ হয় ভিকাজির৷ রুস্তমোজি ছিলেন ব্রিটিশদের অনুরাগী৷ অন্যদিকে ভিকাজি ছিলেন মনেপ্রাণে জাতীয়তাবাদী৷ তিনি বিশ্বাস করতেন ইংরেজরা ভারতকে শোষণ করতে এসেছে। ভিন্ন মতাদর্শের জেরেই তাঁদের দাম্পত্য জীবনে সমস্যা দেখা দিয়েছিল।
১৮৯৬ সালে বোম্বে প্রেসিডেন্সিতে বিধ্বংসী বুবোনিক প্লেগ ছড়িয়ে পড়ে৷ সেই সময় ভিকাইজি কামা মেডিক্যাল কলেজের সেবামূলক কাজে যোগ দেন৷ সংক্রামিতদের সাহায্য করতে করতে এক সময় তিনি নিজেও প্লেগে আক্রান্ত হন৷ পরে সুস্থ হতে তিনি লন্ডনে পাড়ি দেন৷
১৯০৮ সালে বিপ্লবী শ্যামজী কৃষ্ণ বর্মা ও দাদাভাই নৌরোজির সঙ্গে আলাপ হয় তাঁর। তিনি নৌরোজির ব্যক্তিগত সচিব ছিলেন। ১৮৯৫ সালে প্রতিষ্ঠিত ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সঙ্গেও সক্রিয়ভাবে কাজ করেছেন। কামা হোমরুল আন্দোলনের সঙ্গেও যুক্ত হয়েছিলেন। ব্রিটিশ সরকার তাঁর এই কার্যকলাপ ভাল নজরে দেখেনি। দেশে ফেরার জন্য তাঁকে মুচলেকা দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়৷ বলা হয়, তিনি ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত রাখবেন না এই শর্তে দেশে ফিরতে পারেন৷ কামা সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। ব্রিটিশ সরকার যখন বুঝতে পারে তিনি আর রাজনীতিতে সক্রিয় হতে পারবেন না তখন তাঁকে দেশে ফিরে আসার অনুমতি দেয়। এর মধ্যে কেটে যায় ৩৩টা বছর৷ দেশে ফিরে এসে তিনি মাত্র ৯ মাস বেঁচেছিলেন কামা। ১৯৩৬ সালের ১৩ই আগস্ট ৭৫ বছর বয়সে তিনি মারা যান।
” style=”border: 0px; overflow: hidden”” title=”YouTube video player” width=”560″>
