নিজস্ব প্রতিনিধি: গুজরাট বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি বিপুল সংখ্যক আসনে জিতে ফের ক্ষমতায় আসবে, প্রত্যেকটি বুথ ফেরত সমীক্ষায় এমনটাই দেখা গিয়েছিল। আর ফলাফলে সেটাই প্রমাণিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার গুজরাটে গেরুয়া ঝড় চলতে থাকে ভোট গণনার শুরু থেকেই। আর এটা প্রত্যাশিতই ছিল। কিন্তু যেভাবে সেই রাজ্যে প্রথমবার ভোটে লড়তে নেমে চমক দেখিয়েছে আম আদমি পার্টি, তাতে সবাই কুর্নিশ জানাচ্ছেন আপ সুপ্রিমো অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে। ১৩ শতাংশের বেশি ভোট পাওয়ার পাশাপাশি পাঁচটি আসনে তারা জয় ছিনিয়ে নিয়েছে কংগ্রেস এবং বিজেপিকে পিছনে ফেলে। অন্যদিকে ৩৭ বছরে রেকর্ড ভেঙে বিজেপি এই প্রথম দেড়শ আসনের গণ্ডি পেরিয়ে গিয়েছে গুজরাটে।
এর আগে ১৯৮৫ সালে কংগ্রেস ১৪৯ আসন পেয়ে গুজরাটে ক্ষমতায় এসেছিল। তবে এবার বিজেপির আসন বেড়েছে কংগ্রেসের ভোট আম আদমি পার্টি কেটেছে বলেই। আর এরপরেই আপ নেতৃত্বের সদর্প ঘোষণা, তাঁরা জাতীয় দলে পরিণত হয়েছেন। কারণ এর আগেই দিল্লির পুরসভা নির্বাচনে বিজেপিকে হারিয়ে আম আদমি পার্টি ক্ষমতায় এসেছে। যেখানে টানা ১৫ বছর ক্ষমতায় ছিল বিজেপি। ঠিক সেই জায়গা থেকে রাজনৈতিক মহল মনে করছে আগামী লোকসভা নির্বাচনে নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে প্রধান প্রতিপক্ষ অর্থাৎ বিরোধী মুখ হয়ে উঠতে চলেছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। সেই প্রচার ইতিমধ্যেই দলীয় স্তর থেকে শুরু করে দিয়েছে আম আদমি পার্টি।
দিল্লিতে বিপুল সংখ্যক আসনে জিতে পরপর দু’বার ক্ষমতায় এসেছে আপ। এরপর পাঞ্জাবে কংগ্রেস ও বিজেপিকে হারিয়ে তারা ক্ষমতায় এসেছে। গোয়া বিধানসভা নির্বাচনেও সাফল্য পেয়েছে তারা। সেখানে দুটি আসনে তারা জয় পেয়েছে। এবার দিল্লি পুরসভায় বিজেপিকে ক্ষমতাচ্যুত করল কেজরির দল। এরপর বাকি ছিল গুজরাটে সাফল্য পাওয়া। সেটাও হয়ে গেল। আগামী দিনে গুজরাটে কংগ্রেসকে সরিয়ে আম আদমি পার্টি যে প্রধান বিরোধী দল হয়ে উঠতে চলেছে, সেই ইঙ্গিত এবারের নির্বাচনী ফলাফল দিয়ে দিয়েছে।
এবার কেজরিওয়ালের লক্ষ্য প্রতিটি রাজ্যে দলকে ছড়িয়ে দেওয়া। তাঁর নিজের রাজ্য হরিয়ানায় দু’বছর পরেই নির্বাচন হবে। কিছুদিন আগেই পঞ্চায়েত নির্বাচনে হরিয়ানায় ভাল ফল করেছে আপ। সবচাইতে বড় কথা আপ কোনও রাজ্যে পা ফেলে সেখানকার বিরোধী দলের নির্বাচিত বিধায়ক বা সাংসদদের ভাঙিয়ে নিজের দলে নিয়ে এসেছেন, এমন উদাহরণ দেখা যাবে না। যেটা করে থাকে তৃণমূল। সেখানে আম আদমি পার্টি রাজ্যগুলিতে গিয়ে সংগঠন শক্তিশালী করে নির্বাচনে লড়ে সাফল্য পাচ্ছে। গণতন্ত্রে এটাই সবচেয়ে জরুরি। আর এভাবেই আস্তে আস্তে রাজ্যগুলিতে পা ফেলে, সংগঠন মজবুত করে চব্বিশের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপিকে টক্কর দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি চালাচ্ছেন কেজরিওয়াল। উল্কার গতিতে উত্থান নয়, ‘স্লো বাট স্টেডি’ নীতিতেই বিশ্বাস রেখে আজ কেজরিওয়াল একের পর এক সাফল্য পাচ্ছেন। হিমাচলে জয়লাভ করে কংগ্রেস মুখরক্ষা করলেও প্রেস্টিজ ফাইট ছিল গুজরাটেই। সেখানে ভরাডুবি হয়েছে শতাব্দী প্রাচীন কংগ্রেসের। তাই আগামী দিনে জাতীয় রাজনীতিতে মোদি বনাম কেজরিওয়ালের লড়াইয়ের দিকেই যে রাজনৈতিক মহলের বিশেষ নজর থাকবে, তা দিন দিন স্পষ্ট হচ্ছে।