মুম্বই: জীবনে কম বেশি লড়াই সকলেরই থাকে৷ কেউ ছোট ছোট লড়াইয়ে জয়ী হয়, কেউ ছোটে লম্বা দৌড়ের জন্য৷ তেমনই একজন হলেন মুম্বইয়ের মেয়ে সরিতা মালি। মাটিতে পা রেখেই যিনি স্বপ্ন দেখতেন আকাশ ছোঁয়ার৷
আরও পড়ুন- বেঁফাস মন্তব্যের ‘বিপ্লব’! স্মৃতিতে আজও টাটকা তাঁর যে সকল বিতর্কিত ‘ডায়লগ’
মুম্বইয়ের ঘাটকোপার অঞ্চলের বাসিন্দা ২৮ বছরের তরুণী সরিতা এক সময় রাস্তায় রাস্তায় ফুল বিক্রি করতেন। তখন তিনি মাত্র ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী। ফুল বেচতে বেচতেই তাঁর দু’চোখে ভর করত স্বপ্ন৷ স্বপ্ন দেখতেন পড়াশুনা করতে একদিন বিদেশ যাবেন। কিন্তু তাঁর স্বপ্নের পথে সবচেয়ে বড় বাধা ছিল দারিদ্র৷ তার উপর দলিত হওয়ার যন্ত্রণা ভোগ করতে হত প্রতি মুহূর্তে৷ যা তাঁর স্বপ্নকে ক্ষণিকের জন্য হলেও ঝাপসা করে দিত। কিন্তু, সেই কুয়াশা সরিয়ে ফের রোদের আলোয় স্বপ্নগুলো ঝলমল করে উঠত তাঁর বাবা’র পরশে৷ তিনি যখন সরিতার মাথায় হাত রাখতেন, তাঁর স্বপ্ন পরিণত হত জেদে।
সরিতার বাবা ছিলেন নিরক্ষর৷ নামটুকু সই করতে শিখেছিলেন মাত্র। কিন্তু, তিনি চাইতেন তাঁর সন্তানেরা যেন লেখাপড়া শিখে বড় মানুষ হয়৷ তাঁর বিশ্বাস ছিল, এই অন্ধকার জীবনে আলো নিয়ে আসবে একমাত্র শিক্ষা। তাই হাজার কষ্টের মধ্যেও সন্তানদের শিক্ষা তাই যত কষ্টই হোক না কেন, তিনি সন্তানদের শিক্ষার সঙ্গে কোনও সমঝোতা করেননি৷ মাথার উপর বটগাছের ছায়ার মতো হয়ে থেকেছে তাঁর বাবার আশীর্বাদ৷ ধীরে ধীরে স্বপ্ন সফলের পথে এগিয়ে গিয়েছে সরিতাও৷ পথে ফুল বিক্রি করতে করতেই চালিয়ে গিয়েছেন পড়াশোনা।
২০১৪ সালে হিন্দি সাহিত্য নিয়ে এমএ পড়ার জন্য ভর্তি হন জেএনইউ-তে৷ মেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলেও, পরিবারের সদস্যরা জানতেনই না বিষয়টি কী। না বুঝলেও, তাঁরা কিন্তু এক মুহূর্তের জন্যেও তাঁর সঙ্গ ছাড়েননি৷ যা সরিতার মনের জোর বাড়িয়ে দিয়েছিল বহুগুণ৷ জেএনইউ-এর পাঠ শেষ করে এবার তিনি পাড়ি দিচ্ছেন বিদেশে৷ ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি করবেন সরিতা৷
মুম্বইয়ের ঘাটকোপার বস্তির বাসিন্দা সরিতার কথায়, এই লড়াই শুধু দারিদ্রের বিরুদ্ধে নয়। সমস্ত প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে৷ তাঁর কথায়, ‘‘ছোট থেকে নানা রকম প্রতিকূলতা সহ্য করে বড় হয়েছি। আমার লিঙ্গ পরিচয় এবং গায়ের রঙের জন্য অনেক সমস্যায় পড়তে হয়েছে।’’ তিনি বলেন, কালো রং-এর জন্যে নানা কটূক্তি শুনতে হয়েছে৷ তবে সবকিছুকে হারিয়ে তিনি লিখলেন সাফল্যের নতুন কাহিনী৷
” style=”border: 0px; overflow: hidden”” title=”YouTube video player” width=”560″>