নরগাঁও: যখন প্রথম পরিচয় হয়েছিল তখন জানতেন পাত্র একজন জনসংযোগ আধিকারিক। এদিকে পাত্রী দোর্দণ্ডপ্রতাপ একজন পুলিশ অফিসার। অপরাধীকে খুঁজে বের করতে এবং তাদের শাস্তি দিতে তিনি না দেখেন রাজনীতির রং, না মানেন কোনও সম্পর্কের দোহাই। আর তাই বিয়ের চূড়ান্ত প্রস্তুতি নেওয়ার পরেও যখন জানতে পারলেন জনসংযোগ আধিকারিক পরিচয় দেওয়া তাঁর নিজের হবু স্বামীই একজন ঠগ, জালিয়াত, তখন এক মুহূর্তও সময় নেননি সিদ্ধান্ত নিতে। খবর পাওয়া মাত্রই রীতিমতো কোমরে দড়ি দিয়ে হবু স্বামীকেই পুলিশ স্টেশনের নিয়ে এসে হাজির করলেন পুলিশ অফিসার পাত্রী। আলোড়ন ফেলে দেওয়ার ঘটনাটি ঘটেছে অসমের নরগাঁওয়ে। আর এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পরেই রীতিমতো শোরগোল পড়ে গিয়েছে গোটা এলাকা তথা দেশ জুড়ে।
জানা যাচ্ছে, নরগাঁওয়ের SI জোনমণি বাভা শিবসাগর জেলের এক মহিলা পুলিশ আধিকারিক। কাজে যোগ দেওয়ার খুব অল্পদিনের মধ্যেই ওই মহিলা অফিসার তাঁর সাহসিকতা এবং নিরপেক্ষতার জন্য প্রসিদ্ধ হয়েছেন গোটা এলাকায়। সম্প্রতি ওই পুলিশ আধিকারিকেরই বিয়ে ঠিক হয় রাণা পগাগ নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে। সম্বন্ধ ঠিক হওয়ার সময় পাত্র জানিয়েছিল যে তিনি ONGC-এর মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক। এই পর্যন্ত সব ঠিকই ছিল। বিয়ের প্রস্তুতিও পরিবারের তরফ থেকে নেওয়া হচ্ছিল। কিন্তু বিয়ের দিন যখন প্রায় দোরগোড়ায় এসে দাঁড়িয়েছে তখনই পাত্রী তথা ওই মহিলা পুলিশ অফিসার জানতে পারেন যে পগাগ একজন জালিয়াত। তার সমস্ত পরিচয়ই মিথ্যে। সেইসঙ্গে তিনি এও জানতে পারেন যে দীর্ঘদিন ধরে মিথ্যে পরিচয় দিয়ে লোক ঠকানোর কাজ করছে তাঁর হবু স্বামী। বিষয়টি জানার পর সিদ্ধান্ত নিতে এক মুহূর্ত দেরি করেননি জোনমণি। সঙ্গে সঙ্গেই তিনি গ্রেপ্তার করেন হবু বর রাণা পগাগকে।
সূত্রের খবর, ২০২১ সালের অক্টোবরে বাগদান পর্ব সেরেছেন ওই মহিলা পুলিশ আধিকারিক এবং রাণা পগাগ। চলতি বছরের নভেম্বরেই তাঁদের চার হাত এক হওয়ার কথা ছিল। হাতে মাত্র ৫ মাস সময়, তাই দুই পরিবারের তরফ থেকে ইতিমধ্যেই বিয়ের প্রস্তুতি নেওয়া শুরু হয়েছিল। কিন্তু তার মধ্যেই সামনে আছে রাণার আসল পরিচয়। জানা যায়, ONGC-এর যে বাড়ি-গাড়ি দেখিয়ে পাত্রপক্ষ ওই পুলিশ আধিকারিককে বিয়ের জন্য রাজি করিয়েছেন তা সবই ভাড়া করা। বাস্তবের পাত্রের সঙ্গে ONGC-এর কোনও সম্পর্কই নেই। এমনকি দিন কয়েক আগে রাণা জোনমণীকে নগাঁওতে বদলির যে কথা জানিয়েছিল সেটাও মিথ্যে বলে জানা যায়। পরে সামনে আসে রাণার ন গাঁওতেওতে আসার আসল কারণ। জানা যায় সেখানে এসেও বেশ কয়েকজনের সঙ্গে প্রতারণা করে টাকা নেওয়ার পরিকল্পনা করছিল সে। কিন্তু সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হওয়ার আগেই পুলিশের হাতে ধরা পড়ে ওই জালিয়াত। জানা যায় ONGC-এর বিভিন্ন প্রকল্পের নাম করে একাধিক ব্যক্তির কাছ থেকে টাকা নিয়ে আসছে রানা। একটি বিল পাস করিয়ে দেওয়ার জন্য এক ব্যক্তির কাছ থেকে সে ২৫ লক্ষ টাকা নিয়েছে বলেও পরবর্তীতে সে নিজেই পুলিশ জানিয়েছে। আপাতত পুলিশের হেফাজতেই রয়েছে এই জালিয়াত পাত্র। বিষয়টির তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।