আবারও ঋতু-শিক্ষার পথে ‘প্যাডম্যান’, সঙ্গী বিশ্বসুন্দরী

আবারও ঋতু-শিক্ষার পথে ‘প্যাডম্যান’, সঙ্গী বিশ্বসুন্দরী

কলকাতা: ঋতুকালীন পরিচ্ছন্নতা নিয়ে এক অনন্য লড়াই শুরু করেছিলেন ‘প্যাডম্যান’৷ কিন্তু সেই লড়াই অনেকটাই থমকে গিয়েছে কোভিড কাঁটায়৷ দীর্ঘ লকডাউনে বন্ধ দোকানপাটে মেলেনি স্যানিটারি ন্যাপকিং৷ ফলে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের ঋতুমতী মেয়েরা ফিরে গিয়েছেন সেই চিরাচরিত ছেঁড়া কাপড়ে৷ ফলে অবহেলিত হয়েছে ঋতুকালীন পরিচ্ছন্নতা৷ বলিউডের ‘প্যাডম্যান’ যে ভাবে ঋতুকালীন সমস্যা নিয়ে সমাজকে ভাবিয়ে তুলেছিল, কোভিড পর্ব সেই ভাবনাকে অনেকখানি ব্যহত করে৷ তাই আরও একবার ঋতুকালীন পরিচ্ছন্নতা নিয়ে এ দেশের নারী সমাজকে সচেতন করতে মাঠে নেমেছেন বাস্তবের প্যাডম্যান কোয়ম্বাতুরের অরুণাচলম মুরুগনন্থম। মহিলাদের ন্যাপকিনের ব্যবহারে উৎসাহ দিতে ঈরও একবার লড়াই শুরু হল তাঁর৷ এই কাজে দেশি-বিদেশি বেশ কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে এবার পাশে পেয়েছেন তিনি৷ তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছে ২০২১ সালের ভারতীয় বিশ্বসুন্দরী হরনাজ় কৌর সাঁধু। 

আরও পড়ুন- পুরোপুরি উঠে যাচ্ছে কোভিড বিধি! কবে, জানাল কেন্দ্র

অরুণাচলম বলেন, আজও আমাদের দেশের বহু মেয়ে  ন্যাপকিনের উপযোগিতা এবং তার ব্যবহার সম্পর্কে অজ্ঞাত৷ ঋতুকালীন পরিচ্ছন্নতা নিয়ে কথা খোলাখুলি কথা বলাটা এখনও লোকলজ্জার বিষয় বলে বিবেচিত হয়৷ আজও মেয়েদের একটা বড় অংশের নাগালের বাইরে রয়েছে স্যানিটারি ন্যাপকিনের মতো অত্যাবশ্যক সামগ্রী৷ বিশেষত আদিবাসী মহিলাদের কাছে ঋতুকালীন পরিচ্ছন্নতার বিষয়টি পৌঁছে দেওয়া চ্যালেঞ্জের বিষয়৷ আর অরুণাচলমের লড়াইকে আরও কঠিন করে দিয়েছে কোভিড৷ প্যাডম্যান বলেন, ‘‘লকডাউনের সময়ে ন্যাপকিন কিনতে গিয়ে যদি পুলিশের হাতে ধরা পড়েন, সেই ভয়টা ছিল পরিবারের ছেলেদের মনে। সেই সঙ্গে জোগানের অভাব, কর্মহীনতা সমস্যা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। ফলে মহিলারাও ন্যাপকিনের অপেক্ষা না করে ফিরে গিয়েছেন পুরনো পন্থায়।’’

এছাড়াও আমাদের সমাজে এই বিষয়ে সচেতনতার অভাবও রয়েছে৷ তামিলনাড়ুর দু’টি গ্রামে একটি সমীক্ষায় করা হয়েছিল৷ তাতে দেখা গিয়েছে, এ বিষয়ে আগাম জ্ঞান না থাকায় প্রথমবার পিরিয়ডের সময়ে ভয়, আতঙ্ক গ্রাস করেছে ৮৪ শতাংশ কিশোরীকে। অরুণাচলমের লক্ষ্য ২০২৫ সালের মধ্যে দেশের ৫০ লক্ষ মেয়ে ও মহিলাকে ঋতুকালীন পরিচ্ছন্নতা নিয়ে সচেতন করবেন৷ আর এই লড়াইয়ে তিনি নেমেছেন হরনাজকে সামনে রেখে৷ আগামী দিনে ভারতের গন্ডি ছাড়িয়ে ভিয়েতনাম, কাম্বোডিয়া এমনকী আফ্রিকাতেও এই প্রকল্প ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে তাঁদের। 

কিন্তু মিস ইউনির্ভাস কেন৷ পদ্মশ্রী ‘প্যাডম্যান’ বলেন, ‘‘আমি-আপনি এ বিষয়ে কথা বললে কেউই তা শুনবেন না। কিন্তু বিশ্বসুন্দরী বললে,  তা মানুষের কাছে পৌঁছবে। ন্যাপকিন নিয়ে শুধু প্রচারে ততটাও কাজ হবে না, যতটা বিশ্বসুন্দরীর কথায় হবে৷’’ এ প্রসঙ্গে সাংবাদিক বৈঠকে হরনাজ বলেন, ‘‘আমার মা স্ত্রী-রোগ বিশেষজ্ঞ৷ আমাদের দেশে মেয়েদের ঋতুকালীন চিত্রটা কেমন,  সেটা আমার জানা। এই বিষয়ে মহিলাদের সচেতন করার পাশাপাশি, ন্যাপকিনের মতো আবশ্যক সামগ্রী তাঁদের হাতে পৌঁছে দিয়ে মায়ের কাজকে আরও একটু এগিয়ে নিয়ে যেতে পারব৷’’  

পরিয়ডের সময় ভারতীয় মেয়েদের স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহারের পরিসংখ্যান রীতিমতো উদ্বেগের৷ ১৯৯৮ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত এ দেশের মহিলাদের মাত্র ১২ শতাংশ ন্যাপকিন ব্যবহার করতেন। ২০১৬ সালে পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হয়ে তা ৩৪ শতাংশে পৌঁছয়। আগাম কয়েক বছরের মধ্যে দেশের প্রতিটি মেয়েকে ঋতু-শিক্ষায় সচেতন করতে অষ্টম থেকে একাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের এ নিয়ে পাঠা দেওয়ার জব্য প্রতিটি রাজ্যকে অনুরোধ করেছেন অরুণাচলম। তাঁর কথায়, ‘‘তামিলনাড়ু, রাজস্থান সরকার ইতিমধ্যেই এ বিষয়ে সার্কুলার জারি করেছে। তবে শুধু মেয়েদের নয়, ঋতু-সমস্যা নিয়ে শিক্ষিত করতে হবে ছেলেদেরও।’’