২০০ বছর শাসনের জবাব! ইংল্যান্ডের ৪৫ লক্ষ কোটি ডলার লুঠের জবাব দিল ভারত

২০০ বছর শাসনের জবাব! ইংল্যান্ডের ৪৫ লক্ষ কোটি ডলার লুঠের জবাব দিল ভারত

 নয়াদিল্লি:   ব্রিটিশ গোলামি থেকে আজাদির ৭৫ বছর পাড়৷ দাসত্বের শৃঙ্খল ভেঙে স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনা ভারত লিখছে উত্তোরণের কাহিনী৷ ক্রমেই উন্নতির পথে এগোচ্ছে দেশ৷ এগোচ্ছে দেশের অর্থনীতি৷ যার অন্যতম প্রমাণ হল ব্লুমবার্গের রিপোর্ট৷ গত ত্রৈমাসিকের রিপোর্ট বলছে, যুক্তরাজ্যের অর্থনীতিকে ছাপিয়ে গিয়েছে ভারত৷ আর গোটা বিশ্বে ভারতীয় অর্থনীতির স্থান পঞ্চম৷  আমেরিকা, চিন, জাপান ও জার্মানির পরেই রয়েছে ভারত। 

আরও পড়ুন- বাজারে আসতে চলেছে ডেঙ্গির টিকা! কবে পাচ্ছে অনুমোদন

রিপোর্ট বলছে, বর্তমানে ভারতীয় অর্থনীতি দাঁড়িয়ে রয়েছে ৮৫৪.৭ বিলিয়ন ডলারে৷ ভারতীয় মুদ্রায় যা প্রায় ৬৮ লক্ষ কোটি টাকা। সেখানে যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি দাঁড়িয়ে ৮১৬ বিলিয়ন ডলারে৷ ভারতীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় ৬৫ লক্ষ কোটি টাকা৷ এই অর্থনৈতিকর উন্নতি নিশ্চিত ভাবেই ভারতের কাছে একটি গর্বের বিষয়। এককালে যাঁরা ভারতে উপনিবেশ গড়ে রাজত্ব করেছিল, আজ তাদের পিছনে ফেলে এগিয়ে যেতে সক্ষম দেশ৷ 

ভারতে প্রায় ২০০ বছর শাসন করেছে ব্রিটিশরা৷ আর এই ২০০ বছর ধরে চলেছে ব্রিটিশদের লুঠতরাজ৷ গোড়া সাহেবদের অত্যাচার আর শোষণে ভেঙে পড়েছিল ভারতীর অর্থনীতির শিড়দাঁড়া৷ ভারত যখন স্বাধীনতা পায়, তখন আমাদের ভাঁড়ার প্রায় শূন্য৷ সেখান থেকে একটু একটু করে ঘুরে দাঁড়িয়েছে ভারত৷ আর যারা আমাদের নিঃস্ব করে চলে গিয়েছিল, আজ তাঁদের মাত দিতে সক্ষম হয়েছি আমরা৷ ভারত থেকে শুধু বিপুল ধন সম্পত্তিই নিয়ে যায়নি ইংরেজরা, ভেঙে দিয়ে গিয়েছিল একের পর এক স্থাপত্য৷ লুঠ করে নিয়ে যায় মহা মূল্যবান কোহিনূর হিরে। 

ব্লুমবার্গের রিপোর্ট প্রাকশিত হওয়ার পর স্বগর্বে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছিলেন, ‘‘এ এক বিশেষ মুহূর্ত। যারা আড়াইশো বছর ধরে ভারত শাসন করেছে, আজ বিশ্ব অর্থনীতিতে আমরা তাদেরই পিছনে ফেলে দিয়েছি। ভারতবাসীর জন্য এটা অত্যন্ত গর্বের বিষয়।’’ ১৭৬৯-৭০ সালে দুর্ভিক্ষের মধ্য দিয়েই ভারতে শুরু হয়েছিল ব্রিটিশ রাজ৷ পরবর্তী ২০০ বছর একাধিক দুর্ভিক্ষ হয়েছে৷ যার মধ্যে কিয়দাংশ ব্রিটিশদের তৈরি বলা যেতে পারে। 

ব্রিটিশরা ভারত লুঠ করলেও, সে দেশে একটা মিথ চালু রয়েছে৷ বলা হয়, ব্রিটিশদের কাছে ভারতীয় উপনিবেশ নাকি একেবারেই লাভদায়ক ছিল না৷ উল্টে প্রশাসনিক কাজে প্রভূত অর্থ ব্যয় করতে হয়েছিল তাদের৷  তবে ব্রিটিশদের এই বদ্ধমূল ধারণায় সজোরে কুঠারাঘাত করেছে সাম্প্রতিক এক গবেষণা৷ কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটি প্রেস কর্তৃক প্রকাশিত প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ উৎসা পট্টনায়েকের গবেষণায় উঠে এসেছে সম্পূর্ণ ভিন্ন এক চিত্র। সেখানে ভারতবর্ষে ব্রিটিশদের প্রায় দুই শতকের কর ও বাণিজ্যের খতিয়ান তুলে ধরে পট্টনায়েক যে হিসাব দেখিয়েছেন তাতে, ১৭৬৫ থেকে ১৯৩৮ সালের মধ্যে ভারত থেকে ৪৫ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের সম্পদ নিজেদের দেশে নিয়ে গিয়েছে ব্রিটিশরা। ভারতীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ ৩ হাজার ৭৮০ লক্ষ কোটি টাকা।

পট্টনায়েকের গবেষণায় উঠে আসা এই তথ্য নিশ্চিতভাবেই বিস্ময়কর৷ কারণ সংখ্যাটা সুবিশাল৷ এই বিশালত্বের ব্যাখ্যা দিতে একটি ছোট্ট তথ্য তুলে ধরা যাক- ভারত থেকে লুট করা এই ৪৫ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার আজকের দিনেও ব্রিটেনের জিডিপি (গ্রস ডমেস্টিক প্রোডাক্ট)-র চেয়ে ১৭ গুণ বেশি!  কিন্তু কী ভাবে এই বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্রিটেনে পৌঁছল? সেই তথ্যও তুলে ধরেছেন পট্টনায়েক৷ 

ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারত থেকে যে কর আদায় করত, খুব চতুরতার সঙ্গে তার এক তৃতীয়াংশ ব্যবহার করত নিজেদের প্রয়োজনে৷ ওই অর্থ দিয়ে ভারতবর্ষ থেকে পণ্য ক্রয় করত তারা৷ সহজ কথায়, ভারতীয় পণ্য কেনার জন্য নিজেদের পকেট থেকে কানাকড়িও খরচ করত না ব্রিটিশরা৷ কোনও অর্থ ব্যয় না করেই চতুরতার সঙ্গে প্রয়োজনীয় দ্রব্য সংগ্রহ করতেন তাঁরা। আপাতদৃষ্টিতে মনে হবে, ব্রটিশরা কৃষক ও তাঁতিদের কাছ থেকে দাম দিয়েই পণ্য কিনছেন৷ কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তেমনটা হত না৷ কৃষক এবং তাঁতিদের কাছ থেকে সদ্য নেওয়া অর্থের ব্যবহার করেই তাদের পণ্য ‘ক্রয়’ করেছিল তারা।

সাদাসিধে ভারতীয়রা ব্রিটিশদের এই ‘চুরির’ বাণিজ্য ধরতে পারেননি। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ভারতীয়দের থেকে চুরি করা অর্থের উপর ভর করেই ব্রিটেনে শিল্প বিপ্লব এসেছিল। স্বাধীনতার ৭৫ বছর পর ভারতীয়রা এককালের স্বৈরাচারীদের বুঝিয়ে দিয়েছে ভারতের শক্তি।  যুক্তরাজ্যের অর্থনীতিকে পিছনে ফেলে দিয়েছে ভারতীয় অর্থনীতি।