দুর্ঘটনার পর চলতে থাকা রাজনৈতিক চাপানউতোর কী বন্ধ হবে না? কোন কবচে ঠিক করা যাবে ‘রাজনৈতিক কলিশন’?

দুর্ঘটনার পর চলতে থাকা রাজনৈতিক চাপানউতোর কী বন্ধ হবে না? কোন কবচে ঠিক করা যাবে ‘রাজনৈতিক কলিশন’?

 নিজস্ব প্রতিনিধি: শুক্রবার সন্ধ্যায় ওড়িশার বালেশ্বরের বাহানাগা বাজার স্টেশনের কাছে ভয়াবহ রেল দুর্ঘটনায় ২৭৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহতের সংখ্যা প্রচুর। বালেশ্বরের হাসপাতালের চতুর্দিকে মৃতদেহ মাটিতে সাদা কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে। বহু আগেই শুরু হয়েছে পচন। বহু মৃতদেহ দলা পাকিয়ে পচে গলে গিয়েছে। যে দৃশ্য চোখে দেখা যায় না। কিন্তু অবাক করার ব্যাপার হল দুর্ঘটনার সঙ্গে সঙ্গেই প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দল বিষয়টি নিয়ে একে অপরকে নিশানা করে চলেছে।

 

এই ‘সংস্কৃতি’ থেকে কী রাজনৈতিক দলগুলি কোনও দিনই বেরিয়ে আসতে পারবে না? বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দুর্ঘটনার পরদিনই সেখানে গিয়ে অভিযোগ করে বলেন করমণ্ডল এক্সপ্রেসে ‘অ্যান্টিকলিশন’ ডিভাইস থাকলে দুর্ঘটনা ঘটত না। রেলে সমন্বয়ে নেই বলেও অভিযোগ করেন তিনি। এরপর নবান্নে সাংবাদিক সম্মেলন থেকেও এ বিষয়ে কেন্দ্রকে নিশানা করেছেন তিনি। একই ভাবে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী রবিবার দুর্ঘটনাস্থলে গিয়ে তৃণমূল সরকারকে ব্যাপক আক্রমণ করেছেন। বাংলায় স্বাস্থ্য পরিকাঠামো নেই বলেই প্রতিদিন বহু মানুষ দক্ষিণ ভারতের হাসপাতালগুলিতে চিকিৎসা করাতে যান, বাংলায় কাজ নেই বলে হাজার হাজার মানুষ ট্রেনে চেপে দক্ষিণ ভারত বা অন্যত্র যান, বালেশ্বরে গিয়ে এই অভিযোগ করেছেন শুভেন্দু। আবার বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষের কটাক্ষ, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কোনও দিন দায় না নিয়ে  পালিয়ে বেরিয়েছেন। আর রেলকে ইউজ করে মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন। উল্টো দিকে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় একই ভাবে দুর্ঘটনার দায় পুরোপুরি কেন্দ্রের ঘাড়ে চাপিয়ে বিজেপিকে তীব্র আক্রমণ করেছেন।  লোকসভায় কংগ্রেসের নেতা অধীর চৌধুরী-সহ অন্যান্য নেতৃত্ব যথারীতি এই ইস্যুতে বিজেপিকে লাগাতার আক্রমণ করে চলেছেন।

 

তাই প্রশ্ন একটাই, বছর ভর বিভিন্ন ইস্যুতে যে পারস্পরিক আক্রমণ চলে তা কি এখন না করলেই নয়? এই দুঃখের সময় স্বজন হারানো মানুষের পাশে দাঁড়ানোই তো রাজনৈতিক দলগুলির প্রধান কাজ হওয়া উচিত। সেটা অবশ্য তারা করছেও। কিন্তু তার পাশাপাশি পারস্পরিক আক্রমণেও সমান ব্যস্ত তারা। এই কঠিন সময়ে এটা কি না করলেই নয়? এই প্রশ্ন স্বাভাবিক ভাবেই উঠছে। করমণ্ডল এক্সপ্রেসে অ্যান্টি কলিশন ডিভাইস ছিল কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সেটা তদন্তের রিপোর্ট সামনে এলেই পরিষ্কার হবে। কিন্তু প্রশ্ন হল দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে যে ‘রাজনৈতিক কলিশন’ তৈরি হয়েছে তা কোন ‘কবচ’ বা ‘ডিভাইস’ ঠেকাতে পারবে? গোটা দেশের মানুষ অবশ্য এসব দেখে আজ অভ্যস্ত  হয়ে গিয়েছেন। কিছু ঘটলেই শুরু হয়ে যায় রাজনৈতিক চাপানউতোর। কিন্তু এত মানুষের মৃত্যুর পরেও যেভাবে সেটা চলছে তা কি মেনে নেওয়া যায়? কোন সময় কোন কথা বলতে হবে তা কি রাজনীতিকরা এখনও বুঝতে পারছেন না, নাকি বুঝতে চান না?‌ তাই ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনার পর ফের দেখা গেল রাজনীতি আছে সেই রাজনীতিতেই।
 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

9 + twelve =