Operation Sindoor women officers
নয়াদিল্লি: কর্নেল সোফিয়া কুরেশি ও উইং কমান্ডার ব্যোমিকা—ভারতীয় সেনাবাহিনীর দুই সাহসী ও দক্ষ মহিলা অফিসার—সম্প্রতি পাকিস্তান ও পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীরে পরিচালিত ‘অপারেশন সিঁদুর’ অভিযানে নেতৃত্ব দিয়ে দেশবাসীকে গর্বিত করেছেন। তাঁদের এই অভিযান ছিল পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার প্রতিশোধ, যেখানে ভারতীয় সেনার নির্ভুল হামলায় ৯টি জঙ্গি ঘাঁটি ধ্বংস করা হয় এবং কমপক্ষে ১০০ জন জঙ্গি নিহত হন।
কর্নেল সোফিয়া কুরেশি: প্রথম মহিলা অফিসার হিসেবে আন্তর্জাতিক প্রশিক্ষণ অভিযানে নেতৃত্ব
কর্নেল সোফিয়া কুরেশি ভারতীয় সেনাবাহিনীর সিগন্যাল কোরের একজন অভিজ্ঞ অফিসার। তিনি ১৯৯৯ সালে মাত্র ১৭ বছর বয়সে শট সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন। গুজরাটের বাসিন্দা সোফিয়া বায়োকেমিস্ট্রিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি রাষ্ট্রসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে কঙ্গোতে ২০০৬ সালে অংশগ্রহণ করেন এবং পরবর্তী ৬ বছর ধরে বিভিন্ন শান্তিরক্ষা মিশনে যুক্ত ছিলেন।
মাত্র ৩৫ বছর বয়সে নজিরবিহীন সব সম্মান ঝুলিতে পুরেছেন। ২০১৬ সালে ‘এক্সারসাইজ ফোর্স ১৮’ নামে ভারতের সবচেয়ে বড় বহুজাতিক সামরিক মহড়ায় তিনি ভারতীয় সেনাবাহিনীর ৪০ সদস্যের প্রশিক্ষণ দলের নেতৃত্ব দেন। এই মহড়ায় ১৮টি দেশ অংশগ্রহণ করে, যার মধ্যে চিন, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া অন্তর্ভুক্ত ছিল। সোফিয়া ছিলেন একমাত্র মহিলা অফিসার যিনি এই মহড়ায় নেতৃত্ব দেন।
উইং কমান্ডার ব্যোমিকা: আধুনিক যুদ্ধ কৌশলে পারদর্শী Operation Sindoor women officers
উইং কমান্ডার ভূমিকা ভারতীয় বায়ুসেনার একজন দক্ষ ও প্রশিক্ষিত অফিসার। তিনি বিভিন্ন সামরিক অভিযানে অংশগ্রহণ করেছেন এবং বায়ুসেনার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁর নেতৃত্বগুণ ও কৌশলগত চিন্তাভাবনা তাঁকে ‘অপারেশন সিঁদুর’ অভিযানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনে সক্ষম করেছে।
শৈশব থেকেই আকাশের দিকে চেয়ে বড় হয়েছেন ব্যোমিকা সিং। তাঁর নিজের নামের মধ্যেই যেন ছিল ভবিষ্যতের ইঙ্গিত—‘ব্যোমিকা’, যার অর্থই আকাশ-সম্পর্কিত। ছোট থেকেই স্বপ্ন দেখতেন আকাশে উড়বেন, একদিন পাইলট হবেন। সেই স্বপ্ন শুধু কল্পনায় সীমাবদ্ধ থাকেনি, পরিশ্রম আর অদম্য ইচ্ছাশক্তির জোরে একদিন তা বাস্তবে রূপ নেয়।
স্কুলজীবনেই তিনি যুক্ত হন ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর (NCC)-এর সঙ্গে, যেখানে তাঁর প্রথম সামরিক শৃঙ্খলা ও উড়ানের প্রতি আকর্ষণের ভিত্তি গড়ে ওঠে। এরপর ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেন ব্যোমিকা। তাঁর পরিবারে তিনিই প্রথম, যিনি ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীতে নিজের জায়গা করে নিয়েছেন।
ব্যোমিকা ভারতীয় বায়ুসেনায় হেলিকপ্টার পাইলট হিসেবে কমিশন লাভ করেন এবং ২০১৯ সালের ১৮ ডিসেম্বর ফ্লাইং ব্রাঞ্চে স্থায়ী কমিশন পান। তাঁর এই সাফল্য শুধু তাঁর ব্যক্তিগত জয় নয়, বরং হাজারো মেয়ের জন্য অনুপ্রেরণার বাতিঘর। আকাশে ওড়ার স্বপ্ন যাঁরা দেখেন, তাঁদের কাছে ব্যোমিকার যাত্রা এক জীবন্ত উদাহরণ।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও প্রতিশ্রুতি
এই অভিযানের পর আন্তর্জাতিক মহলে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া এসেছে। যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ইসরায়েল, পাকিস্তান ও পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীরের বিভিন্ন অংশে এই হামলার প্রভাব পড়েছে। বিশ্ব নেতারা এই অভিযানের পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন মন্তব্য করেছেন, যা আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও কূটনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
কর্নেল সোফিয়া কুরেশি ও উইং কমান্ডার ব্যোমিকা তাঁদের সাহস, দক্ষতা ও নেতৃত্বগুণের মাধ্যমে ভারতীয় সেনাবাহিনীকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছেন। তাঁদের এই অভিযান শুধুমাত্র সামরিক দিক থেকে নয়, বরং জাতীয় গর্ব ও আন্তর্জাতিক কূটনীতিতেও একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। তাঁদের এই অবদান ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে থাকবে।
National: Meet Col. Sofia Qureshi & Wg Cdr. Byomika, the brave women officers who led India’s ‘Operation Sindoor’ strike in Pakistan, avenging Pahalgam attack.