নিজস্ব প্রতিনিধি: যাবতীয় টানাপড়েনের অবসান। শেষ পর্যন্ত কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী হতে চলেছেন সিদ্দারামাইয়া। বৃহস্পতিবার দুপুরে এই ঘোষণা করেছে কংগ্রেস। উল্লেখ্য মুখ্যমন্ত্রীর লড়াইয়ে প্রবলভাবে ছিলেন ডিকে শিবকুমার। শেষ পর্যন্ত তিনি স্বার্থত্যাগ করলেন। শিবকুমারকে উপমুখ্যমন্ত্রী করা হয়েছে। সেই সঙ্গে কর্ণাটক কংগ্রেসের সভাপতি পদেও থাকবেন তিনি। তাই সমাধান সূত্র বের হওয়ায় খুশি কংগ্রেস হাইকমান্ড। কিন্তু প্রশ্ন হল আপাতত সমাধান সূত্র বের হলেও পাকাপাকি সমস্যা মিটল তো? আগামী দিনে নতুন করে সমস্যা দেখা যাবে না তো? এই চর্চা যথারীতি শুরু হয়েছে।
ঘটনা হল ঠিক একই ফর্মুলাতে রাজস্থানে মুখ্যমন্ত্রী করা হয়েছিল অশোক গেহলটকে এবং উপমুখ্যমন্ত্রী এবং প্রদেশ সভাপতি করা হয়েছিল শচীন পাইলটকে। কিন্তু তার দু’বছর পরই দেখা যায় মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার জন্য দলের মধ্যে থেকেই বিদ্রোহ ঘোষণা করেছেন শচীন পাইলট। সেই বিদ্রোহ এখনও চলছে। শুধু তাই নয়, দলের বেশ কয়েকজন বিধায়ককে নিয়ে গিয়ে বিজেপির সমর্থনে শচীন মুখ্যমন্ত্রী হবেন এমন পরিস্থিতিও তৈরি হয়েছিল। যদিও পরিস্থিতি সামলে নিয়েছিলেন অশোক গেহলট। তবে নির্বাচনমুখী রাজস্থানে যেভাবে কংগ্রেস আড়াআড়ি ভাবে ভেঙে গিয়েছে তাতে চরম অস্বস্তির মধ্যে পড়েছে হাত শিবির। অন্যদিকে গত বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের জয়ের পর মধ্যপ্রদেশে মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন কমলনাথ। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী হতে চেয়েছিলেন তৎকালীন কংগ্রেস নেতা জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া।
একটা সময় অনুগামী বিধায়কদের নিয়ে দল ছেড়ে বিজেপিতে যোগদান করেন জ্যোতিরাদিত্য। তখনই পড়ে যায় কংগ্রেস সরকার। ক্ষমতায় আসে বিজেপি এবং মুখ্যমন্ত্রী হন শিবরাজ সিং চৌহান। কংগ্রেস শাসিত ছত্তিশগড়েও এই সমস্যা রয়েছে। গত নির্বাচনে কংগ্রেস জেতার পর ঠিক হয় প্রথম আড়াই বছর মুখ্যমন্ত্রী থাকবেন ভূপেশ বাঘেল। আর পরের আড়াই বছর মুখ্যমন্ত্রী হবেন টি এস সিংহদেও। কিন্তু আড়াই বছর কেটে যাওয়ার পরেও মুখ্যমন্ত্রীর পদ ছাড়েননি বাঘেল। এই অবস্থায় সামনেই রয়েছে ছত্তিশগড়ের বিধানসভা নির্বাচন। তাই গোষ্ঠীকোন্দলে সেখানে ফলাফল কি হবে তা নিয়ে যথেষ্ট চিন্তায় রয়েছে কংগ্রেস হাইকমান্ড। এই আবহের মধ্যে কর্ণাটকে একই সমস্যা সামনে আসে। শিবকুমার এবং সিদ্দারামাইয়ার দ্বন্দ্বে বেসামাল হয়ে পড়ে হাইকমান্ড। তাই বর্তমানে পরিস্থিতি সামলানো গেলেও ভবিষ্যতে কর্ণাটকে নতুন করে যে সমস্যা দেখা দেবে না তা কে বলতে পারে!
আসলে এটাই হচ্ছে কংগ্রেসের চিরকালীন ছবি। যুগ যুগ ধরে দলটা এভাবেই চলে আসছে। প্রত্যেকটি রাজ্যে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে জর্জরিত শতাব্দীপ্রাচীন দলটি। পশ্চিমবঙ্গেও বছরের পর বছর ধরে দুই প্রয়াত কংগ্রেস নেতা সোমেন মিত্র এবং প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির লড়াই দেখা যেত। এই পরিস্থিতিতে লোকসভা নির্বাচনের আগে বিভিন্ন রাজ্যে ঐক্যবদ্ধ কংগ্রেসকে দেখা যাবে কিনা সেটাই বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।