ট্রাম্পের ভারত সফর, পথে বসতে চলেছে বস্তির ৪৫ পরিবার

গত ১১ ফেব্রুয়ারি দেওয়া আহমেদাবাদ মিউনিসিপাল কর্পোরেশনের ওই নোটিশে বলা হয়েছে, “এএমসির জমি দখল করে আছেন  বস্তিবাসীরা। আগামী সাত দিনের মধ্যে সমস্ত জিনিসপত্র গুছিয়ে নিয়ে জায়গা খালি করতে হব। এবিষয়ে কোনো আবেদন থাকলে ১৯ ফেব্রুয়ারি বিকেল তিনটের মধ্যে জানাতে হবে।”

মিশন 'নমস্তে ট্রাম্প'। আর এই মিশনকে সফল করতে ১০০কোটি ব্যায় বরাদ্দ করে এখন সাজো সাজো রব আহমেদাবাদে। কিন্তু পাঁচিল তুলেও হয়তো সবটা আড়াল করা যাচ্ছিলো না। নিউ ইন্ডিয়া'-য় কঙ্কালসার চিত্র গোপন করতে তাই তড়িঘড়ি আস্ত একটা বস্তিকেই তুলে দেওয়ার উদ্যোগ নিল গুজরাটের আহমেদাবাদ মিউনিসিপাল কর্পোরেশন (এএমসি)।  নবনির্মিত মোতেরা স্টেডিয়াম সংলগ্ন দেড় কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ওই বস্তিতে অন্তত ৬৫ টি পরিবার বসবাস করে। এরমধ্যে ৪৫ টি পরিবারকে গত ১১ফেব্রুয়ারি জায়গা খালি করার নোটিশ ধরানো হয়েছে। একাধিক সংবাদ মাধ্যম সূত্রে খবর, ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্ধারিত সফরের আগে মাত্র সাতদিনের মধ্যে বাসিন্দাদের সরে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে এই নোটিশ জারি করেছে এএমসি। কারণ জানতে চাইলে বলা হচ্ছে 'যেখানে খুশি চলে যাও'।

গত ১১ ফেব্রুয়ারি দেওয়া ওই নোটিশে বলা হয়েছে, “এএমসির জমি দখল করে আছেন  বস্তিবাসীরা। আগামী সাত দিনের মধ্যে সমস্ত জিনিসপত্র গুছিয়ে নিয়ে জায়গা খালি করতে হব। এবিষয়ে কোনো আবেদন থাকলে ১৯ ফেব্রুয়ারি বিকেল তিনটের মধ্যে জানাতে হবে।” বস্তিবাসীরা বলছেন, যেখানে সরকার কোনো বিকল্প ব্যবস্থা করেনি সেখানে এত কম সময়ের মধ্যে মহিলা ও শিশুদের নিয়ে কোথায় যাবেন তারা? 

এই বস্তিগুলি আহমেদাবাদ এবং গান্ধীনগরের সংযোগকারী রাস্তার পাশে অবস্থিত এবং নবনির্মিত মোতেরা ক্রিকেট স্টেডিয়াম থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে। এক বস্তিবাসী জানিয়েছেন, “এএমসির কর্মকর্তারা গত সাত দিনে এখানে অনেকবার এসেছেন। আমরা সরে যেতে প্রস্তুত কিন্তু আমাদের বিকল্প থাকার ব্যবস্থা দরকার। আমরা এখানে নারী ও শিশুদের সাথে থাকি। যদি আমাদের অন্য কোথাও থাকার বিকল্প ব্যবস্থা দেওয়া না হয়, আমরা পথে বসতে বাধ্য হব।” 

যদিও  ট্রাম্পের হাই-প্রোফাইল সফর এবং নোটিশ ইস্যুর মধ্যে কোনও সংযোগ আছে বলে স্বীকার করতে নারাজ পৌর কর্তৃপক্ষ। পৌর কমিশনার বিজয় নেহরা এই জাতীয় পদক্ষেপের বিষয়টি সম্পূর্ণ অস্বীকার করে বলেছেন: “শহরে 'নমস্তে ট্রাম্প'এর অনুষ্ঠানের আগে কোনও বস্তি উচ্ছেদ করা হচ্ছে না। অদূর ভবিষ্যতেও বলপূর্বক কোনও উচ্ছেদের পরিকল্পনা নেই। ইভেন্ট ভেন্যু বা গণ্যমান্য ব্যক্তিরা যে পথে আসবেন, তার তার আশেপাশের কোনও বস্তিবাসীকে উচ্ছেদ করার কোনও পরিকল্পনা নেই তাঁদের এএমসির একটি জমিজমা সংক্রান্ত বিভাগ রয়েছে যারা সরকারী জমিতে যে কোনও অবৈধ বসতি উচ্ছেদ করতে পারে এবং এই পদক্ষেপ তাঁরাই নিয়েছে। তাঁর মতে, যখনই কোনও নতুন অবৈধ দখলদারী ধরা পড়ে, নাগরিক সংস্থা দখলদাতাদের মালিকানা প্রমাণের জন্য নোটিশ জারি করে এবং বস্তিবাসীদের আবেদনও শোনে । এই নোটিশগুলি শুধুমাত্র সরকারি জমিজায়গা তদারকির জন্য এবং এক্ষেত্রে দখলদারদেরকে মালিকানার দলিল দেখাতে হয়। 

কিন্তু বস্তিবাসীরা ভিন্ন মত পোষণ করেছেন। স্থায়ী বসবাস ছেড়ে যাওয়ার জন্য এত কম সময়? একাধিক সংবাদ মাধ্যমের কাছে তারাই দাবি করেছেন যে প্রধানমন্ত্রী মোদী এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের সফরের জন্যই জায়গা খালি করতে বলা হয়েছে। শহরের সৌন্দর্যায়নের পথে কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছিল জরাজীর্ণ বস্তি এলাকা। আর তা আড়াল করতে ইতিমধ্যেই বড়সড় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। দেড় কিলোমিটার বস্তি এলাকা সংলগ্ন রাস্তার ধারে ৪০০ মিটার দীর্ঘ, সাত ফুট উঁচু পাঁচিল তুলে দেওয়া হচ্ছে। এএমসি রাস্তার বস্তিগুলির মার্কিন প্রেসিডেন্টের যাতায়াতে পথেই পড়ছে।সরকারি আধিকারিকরা এই পাঁচিলকে সৌন্দর্যায়ন ও নিরাপত্তার কারণ হিসেবে বলতে চাইলেও, বিল্ডিং কন্সট্রাকশন সংস্থা সূত্রে জানা গেছে শহরকে নিখুঁতভাবে সাজিয়ে তুলতেই এই পাঁচিল গড়ার পরিকল্পনা। 

 

প্রসঙ্গত, ট্রাম্পের দুদিনের ভারতসফরে আহমেদাবাদে কাটাবেন মাত্র তিন ঘন্টা, সেখানে নবনির্মিত মোতেরা ক্রিকেট স্টেডিয়ামের উদ্বোধন করবেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। আর এই ৩ ঘণ্টার জন্য শহরকে সাজিয়ে তুলতে যৌথভাবে ১০০ কোটি টাকা ব্যয় করছে আহমেদাবাদ মিউনিসিপাল করপরেশন এবং আহমেদাবাদ আরবান ডেভলপমেন্ট কর্পোরেশন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

10 − six =