ভারতের ভিখারিরা একেবারেই ‘গরিব’ নন! উপার্জন শুনলে চোখ কপালে উঠবে

ভারতের ভিখারিরা একেবারেই ‘গরিব’ নন! উপার্জন শুনলে চোখ কপালে উঠবে

a9c164cb5c323be6bee5de77b5861545

কলকাতা:  চাঁদের মাটি ছুঁয়ে সূর্যের কাছে পৌঁছে গিয়েছে আমাদের দেশ৷ ‘আত্মনির্ভর ভারত’– গড়ার পথে ক্রমশ এগিয়ে চলেছি আমরা৷ অর্থনীতিও এখন বেশ তাগড়া৷ বিশ্বের পঞ্চম শক্তিশালী অর্থনীতির দেশ হিসেবে উঠে এসেছে ভারতের নাম। উন্নয়নের সিঁড়ি বয়ে উপরে উঠে চলা ভারতের ভিখারিরাও নাকি ‘ধনী’! হ্যাঁ, উঠে এল এমনই এক চাঞ্চল্যকর তথ্য৷

রাস্তা-ঘাট, রেলস্টেশন, ট্রেন-বাস থেকে মন্দির-মসজিদ, আমাদের দেশে ভিক্ষুক প্রায় সর্বত্রই৷ ট্রাফিক সিগন্যালে দাঁড়ালেই গাড়ির কাচে টোকা.. হাত বাড়িয়ে দিয়ে কেউ না কেউ বলে ওঠে, “ও বাবু, একটু কিছু দিন…”। ভিক্ষাই এই সব মানুষগুলোর উপার্জনের পথ৷ ‘বাবু’দের দয়ায় বাঁচে পেট৷ এদের দেখে অনেকেরই মায়া হয়৷ অনেকেই ভেবে নেন ভিক্ষা করে কতই বা আর আয় হয়! কিন্তু অনেকেই জানেন না যে, এক শ্রেণির ভিক্ষুকদের উপার্জন আকাশ ছোঁয়া৷ হ্যাঁ, তাঁদের উপার্জন জানলে চোখ কপালে উঠবে বৈকি৷ কর্পোরেট সংস্থায় কর্মরতদের চেয়ে দ্বিগুণ আয় এই ভিক্ষুকদের। মাসে ৫ লক্ষ টাকা থেকে ২৫ লক্ষ টাকা উপার্জন করে থাকেন তাঁরা। আর বিশ্বের সবথেকে ধনী ভিক্ষুকের বাস এই ভারতেই।

ভারতে ভিক্ষুকের সংখ্যাটা নেহাত কম নয়৷ কয়েক লক্ষ ভিখারি রয়েছে এ দেশে৷ কিন্তু ভিক্ষাবৃত্তি নিয়ে অনেকেরই আপত্তি রয়েছে। ভিক্ষাবৃত্তিকে নিষিদ্ধ করার জন্য আর্জি জানানো হয়েছিল শীর্ষ আদালতে। যদিও সেই আবেদন ধোপে টেকেনি৷ তা খারিজ হয়ে গিয়েছে। তবে এই মামলার হাত ধরেই ভারতে ভিক্ষাবৃত্তি ও ভিক্ষুকদের নিয়ে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে।

ভিক্ষাবৃত্তিকে নিষিদ্ধ করার আবেদন জানিয়ে মামলা হয়েছিল সুপ্রিম কোর্টে৷ সেই আর্জি খারিজ করে সুপ্রিম কোর্ট সাফ জানায়, কিছু উঁচু শ্রেণির ‘এলিটিস্ট মনোবৃত্তি’র মানুষ ভিক্ষাবৃত্তিকে নিষিদ্ধ করতে উঠে-পড়ে লেগেছেন। যেন, তাঁদের জীবনে আর অন্য কোনও কাজ নেই। ২০২১ সালেও এই ধরনের একটি আবেদন জমা পড়েছিল সুপ্রিম কোর্টে৷ তখনও একই নির্দেশ দিয়েছিল বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় ও বিচারপতি এম আর শাহের ডিভিশন বেঞ্চ। ফের একই মামলা হওয়ায় বিরক্ত সুপ্রিম কোর্ট৷ ২০২১ সালে এই সংক্রান্ত মামলায় রায় ঘোষণার পর কেন শীর্ষ আদালতে একই ধরনের আবেদন করা হল, মামলাকারীর কাছে তার জবাব তলব করা হয়েছে৷ 

মামলাকারী আদালতে জানান, এই ভিক্ষাবৃত্তির একটা চক্র রয়েছে৷ ভারতের সবচেয়ে ধনী ২৫ জন ভিখারির আয় শুনলে চমকে উঠতে হয়৷ মাসে ৫ থেকে ২৫ লক্ষ টাকা উপার্জন তাঁদের। ভিক্ষাবৃত্তিকে কেন্দ্র করে একটা বিরাট অর্থনীতি গড়ে উঠেছে৷  সেই অর্থনীতির বহর ১ হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি।

ওই মামলাকারীর আবেদনেই জানা যায়, ট্র্যাফিক সিগন্যালগুলিতে ভিক্ষার বরাত নিয়ে রীতিমতো টেন্ডার ডাকা হয়৷  যিনি বরাত পান, তিনিই লোকজন ফিট করে থালা-বাটি হাতে ভিক্ষা করতে পাঠান। মুম্বইতে তিনটি, দিল্লিতে তিনটি, আহমেদাবাদে দুটি ও কলকাতায় একটি  এলাকা সহ মোট ১২টি এলাকার কথাও উল্লেখ করেন মামলাকারী। তাঁর দাবি, এই এলাকাগুলিতে ভিক্ষা করার বরাত পেতে দর ওঠে বছরে ৫০ লক্ষ থেকে ১০ কোটি টাকা। এটা একটা ব়্যাকেট বা চক্র৷  ওই মামলা সূত্রেই আরও জানা যায় যে, এই চক্র থেকে উঠে আসে টাকার একটা অংশ মাদক ও অস্ত্র ব্যবসার কাজে লাগানো হয়। ভিক্ষার ব্যবসার নিয়ন্ত্রকদের ইশারাতেই গোটা কারবারটি চলে। শুধু তাই নয়, ভিক্ষার আড়ালে দেহব্যবসা, যৌন নিগ্রহ, শিশু নির্যাতন ও শিশু পাচার চক্র চালানোর অভিযোগও উঠে এসেছে মামলাকারীর আবেদনে। তবে এক শ্রেণির ‘ধনী’ ভিখারির দৌরাত্ম রুখতে গোটা দেশ থেকে ভিক্ষাবৃত্তি মুছে দেওয়ার পক্ষে নয় সুপ্রিম কোর্ট৷ কারণ, এদেশে হাভাতের অভাব নেই৷ দিন দরিদ্র বহু মানুষেরও বেঁচে থাকার সম্বল ভিক্ষাবৃত্তি৷ 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *