পাকিস্তান-তুরস্ক সামরিক জোট, ভারতীয় নিরাপত্তায় কতটা চ্যালেঞ্জ?

Turkey Pakistan Military Ties নয়াদিল্লি: গত বৃহস্পতিবার-শুক্রবার রাতে পাকিস্তান ভারতীয় সীমান্তের ৩৬টি স্থানে প্রায় ৩০০টিরও বেশি ড্রোন দিয়ে হামলা চালানোর চেষ্টা করেছিল। ভারতীয় সেনাবাহিনী চিরাচরিত…

Turkey Pakistan Military Ties

Turkey Pakistan Military Ties


নয়াদিল্লি:
গত বৃহস্পতিবার-শুক্রবার রাতে পাকিস্তান ভারতীয় সীমান্তের ৩৬টি স্থানে প্রায় ৩০০টিরও বেশি ড্রোন দিয়ে হামলা চালানোর চেষ্টা করেছিল। ভারতীয় সেনাবাহিনী চিরাচরিত দক্ষতায় এই আক্রমণ প্রতিহত করে, তবে হামলাটি ছিল তুরস্ক-পাকিস্তান সম্পর্কের গভীরতা এবং ভারতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক একটি গুরুত্বপূর্ণ সংকেত। পাকিস্তানের ওড়ানো ড্রোনগুলো সম্পর্কে প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, এগুলো সম্ভবত তুরস্কের Asisguard Songar মডেলের। এসব ড্রোন যে পাকিস্তান এবং তুরস্কের মধ্যে সামরিক সহযোগিতার নতুন দিক নির্দেশ করছে, তা একেবারে স্পষ্ট।

তুরস্ক-পাকিস্তান সম্পর্কের ঐতিহাসিক ভিত্তি

তুরস্ক এবং পাকিস্তান দীর্ঘকাল ধরে একে অপরকে কৌশলগতভাবে সমর্থন করে আসছে। ১৯৫০ ও ৬০-এর দশকে, CENTO এবং RCD মতো নিরাপত্তা জোটের সদস্য ছিল এই দুটি দেশ। পরবর্তী সময়ে, দুটি দেশ একে অপরের কূটনৈতিক এবং সামরিক সহায়ক হিসেবে দাড়িয়েছে। বিশেষ করে তুরস্কের প্রতি পাকিস্তানের প্রাথমিক সমর্থন ছিল৷ তারা তুরস্কের ভূরাজনৈতিক অবস্থানকে সম্মান জানিয়ে বিভিন্ন সংকটকালে তুরস্ককে সহায়তা প্রদান করেছে।

বর্তমানে, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগান পাকিস্তান-তুরস্ক সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছেন। ২০০৩ সালে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর, তিনি পাকিস্তান সফর করেছেন অন্তত ১০ বার। ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তাঁর সর্বশেষ সফর ছিল Pakistan-Türkiye High-Level Strategic Cooperation Council এর অধিবেশনে সভাপতিত্ব করার জন্য৷ যা প্রমাণ করে তুরস্ক এবং পাকিস্তান একে অপরকে বিশ্ব মঞ্চে সহযোগিতা করার ব্যাপারে কতটা আগ্রহী।

কাশ্মীর ইস্যুতে তুরস্কের দৃঢ় সমর্থন Turkey Pakistan Military Ties

কাশ্মীর ইস্যুতে তুরস্কের অবস্থান পাকিস্তানের পক্ষে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ২০২৩ সালে, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগান কাশ্মীরের বিষয়ে প্রকাশ্যে পাকিস্তানকে সমর্থন জানিয়ে বলেন, “আমরা অতীতের মতো আজও কাশ্মীরি ভাইদের পাশে আছি।” এই ধরনের মন্তব্য ভারতের কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জ হিসেবে দাঁড়িয়ে যায়। ভারতের কাছে কাশ্মীর একটি অভ্যন্তরীণ বিষয়, আর তুরস্কের এ ধরনের প্রকাশ্যে সমর্থন, ভারতের নিরাপত্তা কৌশলের উপর চাপ সৃষ্টি করে।

সামরিক ক্ষেত্রেও পাকিস্তান লাভবান

পাকিস্তান সামরিক ক্ষেত্রে তুরস্কের সঙ্গে তার সম্পর্ককে খুবই মূল্যবান মনে করে। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে তুরস্ক পাকিস্তানকে Bayraktar ড্রোন এবং Kemankes ক্রুজ মিসাইল সরবরাহ করেছে, যা পাকিস্তানের সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করেছে। এছাড়া, তুরস্কের STM Defence Technologies পাকিস্তান নৌবাহিনীর আধুনিকীকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে এবং পাকিস্তান নৌবাহিনীর জন্য ১ বিলিয়ন ডলারের একটি চুক্তি সম্পন্ন করেছে।

ভারতের জন্য কৌশলগত প্রতিক্রিয়া

তুরস্ক-পাকিস্তান সম্পর্ক ভারতীয় নিরাপত্তার জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। তুরস্কের সামরিক সহযোগিতা, কাশ্মীর ইস্যুতে পাকিস্তানের সমর্থন এবং ভারতীয় ভূখণ্ডে তুরস্কের ভূমিকা, ভারতকে তার কূটনৈতিক কৌশল নতুন করে সাজাতে বাধ্য করছে। তুরস্কের অবস্থান ভারতের জন্য কষ্টদায়ক হলেও, ভারত কূটনৈতিকভাবে এর বিরুদ্ধে শক্তিশালী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

ভারত তার কূটনৈতিক সম্পর্ক শক্তিশালী করতে এবং আন্তর্জাতিক স্তরে তুরস্ক-পাকিস্তান জোটের প্রভাব মোকাবিলা করতে সচেষ্ট। উদাহরণস্বরূপ, ভারত গ্রীস-সমর্থিত সাইপ্রাসকে আন্তর্জাতিক মঞ্চে সমর্থন করেছে, যা তুরস্কের অবস্থানের বিপরীতে দাঁড়ায়। দক্ষিণ ককেশাস অঞ্চলেও ভারত আর্মেনিয়াকে সামরিক সহায়তা প্রদান করে, যা পাকিস্তান এবং তুরস্কের অবস্থানের বিরোধিতা করে।

কৌশলগত চ্যালেঞ্জের মাঝে ভারতীয় প্রতিরক্ষা কৌশল

পাকিস্তান এবং তুরস্কের সম্পর্কের মধ্যে যে গভীর কৌশলগত সহযোগিতা রয়েছে, তা ভারতের জন্য একটি গুরুতর ভূরাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ। তবে, ভারত তার কূটনৈতিক সম্পর্ক এবং সামরিক সক্ষমতা পুনর্মূল্যায়ন করে তুরস্ক-পাকিস্তান জোটের প্রভাব মোকাবিলার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছে। আগামী দিনে, এই সম্পর্ক ভারতীয় নিরাপত্তা কৌশলকে নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে ভাবতে বাধ্য করবে।

National: Pakistan’s massive drone attack (300+ drones) on India uses Turkish Asisguard Songar models, signaling deeper Turkey-Pakistan military ties. Explore the historical and strategic significance of this growing partnership.