নিজস্ব প্রতিনিধি: ভোট বড় বালাই! বেশ কিছু রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের পাশাপাশি চব্বিশের লোকসভা ভোট যত এগিয়ে আসছে, ততই দরাজ হতে দেখা যাচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকারকে। একটা সময় নরেন্দ্র মোদি সরকার ঘোষণা করেছিল প্রতি বছরে দু’কোটি করে চাকরি দেওয়া হবে। তবে সেই প্রতিশ্রুতির ধারে কাছে যেতে পারেননি তাঁরা। কিন্তু লোকসভা নির্বাচনের দেড় বছর আগে কিছুটা হলেও প্রতিশ্রুতি রক্ষার জায়গায় বাধ্য হয়ে যেতে হচ্ছে কেন্দ্রকে। আর সেই সূত্রেই ‘রোজগার মেলা’র মঞ্চ থেকে ৭৫ হাজার বেকারকে চাকরি উপহার দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বেকার সমস্যা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই সরব বিরোধীরা। বিরোধীদের অভিযোগ প্রধানমন্ত্রী চাকরির মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে ভাবনাচিন্তা করেন না।
এই পরিস্থিতিতে গুজরাট এবং হিমাচল প্রদেশের নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ৭৫ হাজার যুবক-যুবতীর হাতে নিয়োগ পত্র তুলে দিলেন। এভাবেই বিরোধীদের যাবতীয় কটাক্ষের জবাব দিলেন তিনি। শনিবার দিল্লিতে ‘রোজগার মেলা’ অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ৭৫২২৬ জন নির্বাচিত চাকরিপ্রার্থীর হাতে নিয়োগপত্র তুলে দেওয়া হল। তাঁরা কেন্দ্রের ৩৮টি মন্ত্রকের পাশাপাশি বিভিন্ন দফতরে নিয়োগ পেলেন। গ্রুপ ‘এ’ থেকে গ্রুপ ‘ডি’, সমস্ত স্তরের চাকরিপ্রার্থী এদিন প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে ভার্চুয়ালি নিয়োগ পত্র পেয়েছেন। শনিবারের এই চাকরি দেওয়ার কর্মকাণ্ডের কথা প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে আগেই ঘোষণা করা হয়েছিল। সেই সঙ্গে জানানো হয়েছিল আগামী এক বছরে কেন্দ্র আরও দশ লক্ষ কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করবে। আর সেটা করতে গেলে প্রতি মাসে অন্তত পক্ষে ৭৫ হাজার জনকে চাকরি দিতে হবে। এদিন তারই সূচনা করা হল। সামনেই দিওয়ালি। ঠিক তার আগে এই ‘রোজগার মেলা’র মাধ্যমে যেভাবে প্রধানমন্ত্রী বিপুল সংখ্যক চাকরিপ্রার্থীর হাতে নিয়োগপত্র তুলে দিলেন, তা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে। এক মাসের মধ্যে গুজরাট এবং হিমাচল প্রদেশে নির্বাচন। এছাড়া সামনের বছর বহু রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের পর চব্বিশে লোকসভা নির্বাচন হবে। ঠিক তার আগে বেকারদের কর্মসংস্থান নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বিশেষ বার্তা দিলেন। বিরোধীরা যেভাবে এতদিন ধরে কেন্দ্রকে চাকরি ইস্যুতে ক্রমাগত আক্রমণ করে যাচ্ছিল, এবার তা ভোঁতা হবে বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। জানা গিয়েছে কেন্দ্রের বিভিন্ন দফতরে চাকরির ক্ষেত্রে নিয়োগ প্রক্রিয়াকে আরও সরল করা হবে।
করোনা পরিস্থিতিতে দেশের অর্থনীতি জোর ধাক্কা খেয়েছে। দেশের আর্থিক বৃদ্ধি অনেকটাই থমকে গিয়েছিল সেই সময়। যদিও কেন্দ্রের দাবি সেই জায়গা থেকে দ্রুত ঘুরে দাঁড়িয়েছে ভারত। কিন্তু কোভিডের ক্ষত যে মুছে যায়নি তা এদিন স্পষ্ট করেছেন প্রধানমন্ত্রী। ‘রোজগার মেলা’র সূচনার পর মোদি বলেন, বিশ্বের পঞ্চম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ ভারত গত আট বছরে দশ থেকে পাঁচ নম্বরে উঠে এসেছে। নির্বাচনের আগে এই ‘রোজগার মেলা’ বিজেপিকে যে বাড়তি মাইলেজ দেবে, সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। আর সেটা বুঝেই কেন্দ্র এই পথে হাঁটতে বাধ্য হয়েছে বলে মনে করছে বিশেষজ্ঞ মহল। কোভিড কালে দেশে লক্ষ লক্ষ মানুষ চাকরি হারিয়েছেন। কৃষি ক্ষেত্রেও বহু বাধা-বিপত্তির সম্মুখীন হতে হয়েছে সংশ্লিষ্টদের। যা নিয়ে বিরোধীরা বারবার কেন্দ্রের সমালোচনায় মুখর হয়েছেন। চব্বিশের লোকসভা নির্বাচনের আগে যথাসম্ভব এই অস্বস্তিকর বিষয়গুলি এড়িয়ে যেতে চায় বিজেপি। আর সেই কারণেই এখন ‘রোজগার মেলা’র মতো মেগা মঞ্চ থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বেকারদের চাকরি দেওয়ার কাজে এগিয়ে এসেছেন বলে মনে করা হচ্ছে। এই বিষয়টি গেরুয়া শিবিরকে আগামী নির্বাচনগুলিতে কতটা ডিভিডেন্ড দেয় এখন সেটাই দেখার।