নিজস্ব প্রতিনিধি: মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিয়মিত বলে থাকেন কেন্দ্রের কাছ থেকে প্রাপ্য বকেয়া তাঁরা পাচ্ছেন না। সেই সঙ্গে রাজ্য সরকারের উপর রয়েছে বিপুল অঙ্কের ঋণের বোঝা। রাজ্য সরকারি কর্মীদের ডিএ দেওয়া নিয়ে টালবাহানা অব্যাহত। সরকারের ‘ভাঁড়ে মা ভবানী’ অবস্থা সকলেই জানেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও এবার দুর্গাপুজোয় ক্লাবগুলিকে অনুদানের পরিমাণ বাড়িয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। ৫০ হাজার থেকে বাড়িয়ে এবার তা ষাট হাজার করেছেন তিনি। বাংলার ৪৩ হাজার পুজো কমিটিকে এই টাকা দেবে রাজ্য। তাতে সরকারের খরচ হবে ২৫৮ কোটি টাকা। এছাড়া পুজোর জন্য কমিটিগুলির যে বিদ্যুৎ খরচ হবে তাতেও ষাট শতাংশ ছাড় দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন তিনি। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে তবে কি ভোটের টানেই মুখ্যমন্ত্রী পুজো কমিটিগুলির প্রতি আরও দরাজ হলেন?
মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন ১ সেপ্টেম্বর ইউনেস্কোকে ধন্যবাদ দিয়ে মহামিছিলের মধ্যে দিয়েই শুরু হয়ে হবে পুজোর প্রস্তুতি। মহালয়ার আগের দিন থেকে শুরু হবে পুজো। ৫ থেকে ৮ অক্টোবর প্রতিমা নিরঞ্জন হবে। জেলায় ৭ অক্টোবর হবে পুজো কার্নিভাল। কলকাতায় ৮ অক্টোবর হবে সেই কার্নিভাল। ৯ অক্টোবর লক্ষ্মী পুজো এবং নবি দিবস। তাই ৮ অক্টোবর শহরে হবে বিসর্জনের কার্নিভাল। আর আর্থিক অনুদান ঘোষণা করার আগে মুখ্যমন্ত্রীকে পুজো উদ্যোক্তাদের উদ্দেশে কিছুটা রসিকতা করতে দেখা যায়। মুখ্যমন্ত্রী বলেন,” এবার কিন্তু আপনাদের টাকা দিতে হবে। আমার টাকা নেই, কেন্দ্রীয় সরকার টাকা দিচ্ছে না। ১০০ দিনের কাজের টাকা বকেয়া পড়ে রয়েছে। বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের বরাদ্দ ছাঁটাই করতে হচ্ছে।” এরপরই তিনি ৬০ হাজার টাকা দেওয়ার প্রসঙ্গ তুলে বলেন, “ভাঁড়ার শূন্য, তবে আমি আশা করি মা দুর্গা ভাঁড়ার পূর্ণ করে দেবেন৷”
জেলায় জেলায় মুখ্যমন্ত্রী যখন প্রশাসনিক বৈঠক করতে যান তখন দেখা গিয়েছে জনপ্রতিনিধিরা বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য মুখ্যমন্ত্রীর কাছে বরাদ্দের আবেদন করছেন। কখনও সেই বরাদ্দ মঞ্জুর হয়েছে, আবার কখনও হয়নি। বহু সময় মুখ্যমন্ত্রীকে বলতে শোনা গিয়েছে টাকা নেই, তাই বিষয়গুলি অন্যভাবে ভাবতে হবে। কিন্তু এবার দেখা গেল পুজো কমিটিগুলিকে অনুদানের টাকা বাড়িয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। বিরোধীদের বক্তব্য, বর্তমানে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে নানা ক্ষেত্রে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। সামনেই পঞ্চায়েত নির্বাচন। তাই ভোটের টানেই ক্লাব সংগঠনগুলিকে আরও কাছে টানতে চায় তৃণমূল। সেই কারণেই এবার বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। এ প্রসঙ্গে বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ কটাক্ষ করে বলেছেন, “দুর্নীতি থেকে চোখ ঘোরানোর জন্যই মুখ্যমন্ত্রী এভাবে দানধ্যান করছেন। বাঙালিকে ভুলিয়ে রাখার জন্য টাকার অনুদান দেওয়া হচ্ছে।” পাল্টা তৃণমূলের বক্তব্য, আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়া দুর্গাপুজোকে ভালভাবে করতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী যদি ক্লাবগুলিকে সাহায্য করেন, তাতে কারও গায়ে লাগছে কেন? এই চাপানউতোরের মধ্যেই বাঙালি পালন করবে তার শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজো। কিন্তু নিদারুণ আর্থিক সংকটে ভোগা রাজ্য সরকার যেভাবে পুজোর অনুদান বাড়াল, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই গেল।