অখিল গিরির মন্তব্যে পঞ্চায়েতে কতটা বিপাকে পড়বে তৃণমূল? কীভাবে দেখছেন আদিবাসীরা?

অখিল গিরির মন্তব্যে পঞ্চায়েতে কতটা বিপাকে পড়বে তৃণমূল? কীভাবে দেখছেন আদিবাসীরা?

নিজস্ব প্রতিনিধি: রাজ্যের মন্ত্রী তথা পূর্ব মেদিনীপুর জেলা তৃণমূলের অন্যতম শীর্ষ নেতা অখিল গিরি যেভাবে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু  সম্পর্কে কুরুচিকর কথা বলেছেন, তাতে পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে বেজায় অস্বস্তির মধ্যে পড়েছে তৃণমূল। যে ঘটনায় বিজেপি অযাচিতভাবে হাতে নতুন অস্ত্র পেয়ে গিয়েছে। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী নাকি তাঁকে নিত্য কু-কথা শোনাতেন‌। আর সেই কথার জবাব দিতে গিয়েই রাজ্যের কারা প্রতিমন্ত্রী অখিল গিরি বেলাগাম ভাষা ব্যবহার করে বিতর্কিত কথা বলেছেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুকে নিয়ে। যদিও ঘরে বাইরে প্রবল চাপের কারণে সেই বক্তব্যের জন্য দ্রুত ক্ষমা চেয়ে নিয়েছেন অখিল।

দলের একটি সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে শুভেন্দু অধিকারীর আক্রমণের জবাব দিতে গিয়ে অখিল বলেন,”বলে দেখতে ভাল নয়। কী রূপসী? কী দেখতে ভাল! আমরা রূপের বিচার করি না। তোমার রাষ্ট্রপতির চেয়ারকে আমরা সম্মান করি। কিন্তু তোমার রাষ্ট্রপতি কেমন দেখতে বাবা?” স্বাভাবিকভাবেই রাজ্যের এক মন্ত্রীর এমন বক্তব্যে আলোড়ন পড়ে গিয়েছে রাজ্য তথা কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে। বিষয়টি নিয়ে সোচ্চার হয়েছে তৃণমূল বিরোধীরা। যদিও এমন বক্তব্যের পর ক্ষমা চেয়েছেন অনুতপ্ত অখিল। আর অখিলের এই বক্তব্যের তীব্র নিন্দাও করেছে তৃণমূল। কিন্তু তাতে কতটা লাভ হবে তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। অখিল গিরির এমন মন্তব্যে পশ্চিমবঙ্গের আদিবাসী সমাজ যে কতটা বিরক্ত, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

পশ্চিমবঙ্গে তফসিলি জাতি ও উপজাতিদের জন্য দশটি লোকসভা কেন্দ্র সংরক্ষিত রয়েছে। এছাড়া রাজ্যের প্রায় ৫০টি বিধানসভা কেন্দ্রে আদিবাসী ভোট অন্যতম নির্ণায়ক শক্তি হয়ে দাঁড়ায়। গত লোকসভা নির্বাচনে ঝাড়গ্রাম, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, পশ্চিম মেদিনীপুর-সহ জঙ্গলমহলের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ব্যাপক সাফল্য পেয়েছিল বিজেপি। আদিবাসী ভোটের একটা বড় অংশ বিজেপির ঝুলিতে যায়। আর বিজেপি তথা এনডিএ যখন আদিবাসী সমাজের প্রতিনিধিত্ব করা দ্রৌপদী মুর্মুকে রাষ্ট্রপতি পদে মনোনীত করে, তখনই বোঝা যায় কত বড় চাল তারা চেলেছে। এরপর প্রত্যাশিত ভাবে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন দ্রৌপদী। কিন্তু সেই নির্বাচনে দ্রৌপদীর পক্ষে ভোট দেয়নি তৃণমূল। যে বিষয়টি নিয়ে বঙ্গের আদিবাসী সমাজ ক্ষুব্ধ বলেই খবর।

এই পরিস্থিতিতে অখিল গিরি যেভাবে দ্রৌপদী মুর্মু সম্পর্কে আপত্তিকর কথা বলেছেন, তাতে পঞ্চায়েত  নির্বাচনে জঙ্গলমহল তথা উত্তরবঙ্গের আদিবাসী সমাজে তার বড় প্রভাব পড়বে বলে রাজনৈতিক মহল মনে করে। তাতে পঞ্চায়েত ভোটে প্রধান বিরোধী দল বিজেপি বাড়তি সুবিধা পেতে পারে। স্বাভাবিকভাবেই অখিলের উপর বিরক্ত দল। এমনিতেই শিক্ষক দুর্নীতির পাশাপাশি কয়লা পাচার, গরু পাচারের ঘটনায় চরম বিড়ম্বনার মধ্যে পড়েছে তৃণমূল। তার উপর অযাচিত ভাবে বিজেপির হাতে নতুন করে অস্ত্র তুলে দিলেন রাজ্যের মন্ত্রী অখিল গিরি। মন্ত্রী বা জনপ্রতিনিধিদের প্রতিটি কথা যে কতটা ভেবেচিন্তে বলতে হয় অখিলের মতো অনেকেই খেয়াল রাখতে পারেন না। আর তার মাশুল গুনতে হয় সংশ্লিষ্ট দলকে। সেই জায়গা থেকে অখিল গিরি রাষ্ট্রপতি সম্পর্কে যে মন্তব্য করেছেন তাতে ড্যামেজ কন্ট্রোল করতে নেমে পড়েছে তৃণমূল। কিন্তু তাতে তারা আদিবাসীদের মনের ক্ষতে কতটা প্রলেপ দিতে পারবেন তা নিয়ে প্রশ্ন থাকছেই। তাই পঞ্চায়েত নির্বাচনে আদিবাসী অধ্যুষিত জায়গায় তৃণমূল কেমন ফল করে সেদিকে নজর থাকবে সবার।
 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

15 + 7 =