পরিবারতন্ত্র নিয়ে অমিত শাহের তোপ, বিজেপিতেও প্রবল ভাবে রয়েছে পরিবারতন্ত্র!

পরিবারতন্ত্র নিয়ে অমিত শাহের তোপ, বিজেপিতেও প্রবল ভাবে রয়েছে পরিবারতন্ত্র!

নিজস্ব প্রতিনিধি:  বিজেপির সেই পরিবারতন্ত্র তোপ। দলের জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকে যা ফের একবার শোনা গেল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের মুখে। একুশের বিধানসভা নির্বাচনে বাংলায় শোচনীয় পরাজয় হয়েছে বিজেপির। কিন্তু তা সত্ত্বেও  বাংলায় ক্ষমতা দখলের লড়াই থেকে সরছে না গেরুয়া শিবির। রবিবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ দাবি করলেন পশ্চিমবঙ্গে দ্রুত ক্ষমতায় আসবে বিজেপি। সেই সঙ্গে আরও কয়েকটি রাজ্যে বিজেপি ক্ষমতায় আসবে বলেও দাবি করেছেন তিনি। এর পাশাপাশি ফের কংগ্রেস এবং তৃণমূলকে পরিবারতন্ত্র ইস্যুতে নিশানা  করেছেন শাহ। হায়দরাবাদে হওয়া দু’দিনের জাতীয় কর্মসিমিতির বৈঠকের দ্বিতীয় দিনে নেওয়া রাজনৈতিক প্রস্তাবে এমনটাই বলা হয়েছে। রবিবার প্রস্তাব পেশ করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেন, ‘‘বিজেপি খুব তাড়াতাড়ি তেলেঙ্গানা ও পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতা দখল করবে।’’

সেই সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গে পরিবারতন্ত্র চলছে বলেও অভিযোগ করেছেন শাহ। উল্লেখ্য এই অভিযোগ প্রথমবার করছেন না তিনি। একুশের বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারে এসে একথা বহুবার বলতে শোনা গিয়েছে অমিত শাহের পাশাপাশি বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বকে। আর জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকে রাজনৈতিক প্রস্তাবে অমিত শাহ দেশের বিভিন্ন রাজ্যে চলা পরিবারতন্ত্রের কথা বলেন। সেই সূত্রে প্রথমেই তিনি আক্রমণ করেন কংগ্রেসকে। তিনি বলেন, ‘‘কংগ্রেস পারিবারিক দল হয়ে গিয়েছে। পরিবারের হাত থেকে ক্ষমতা চলে যাওয়ার ভয়ে সভাপতি নির্বাচনই করছে না।’’ এরপরই বলেন, ‘‘তেলেঙ্গানা ও পশ্চিমবঙ্গের পারিবারিক  শাসনকে হারাবে বিজেপি। পারিবারিক শাসন থেকে মুক্তি পাবেন বাংলা ও তেলেঙ্গানার মানুষ।’’ উল্লেখ্য বিজেপির রাজনৈতিক প্রস্তাবে অভিযোগ করে বলা হয়েছে যে, দেশের বিভিন্ন জায়গায় আঞ্চলিকতাবাদ, পরিবারবাদ এবং তোষণবাদ চলছে। এই পরিস্থিতির বদল এনে বিজেপি উন্নয়নের রাজনীতি করতে চায়।

বিজেপির মুখে পরিবারতন্ত্রের অভিযোগ নতুন নয়। ধারাবাহিকভাবে এই অভিযোগ করে আসছে তারা। তবে বিজেপির বিরুদ্ধেও পরিবারতন্ত্রের অভিযোগ উঠেছে। হিমাচল প্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী প্রেমকুমার ধুমলের ছেলে অনুরাগ  ঠাকুর বিজেপির প্রথম সারির নেতা তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। একুশের বিধানসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বে ছিলেন বিজেপি নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয়। তাঁর ছেলে আকাশ বিজয়বর্গীয় ইন্দোরের বিজেপি বিধায়ক। একটা সময় ব্যাট দিয়ে এক ব্যক্তিকে আঘাত করার অভিযোগ উঠেছিল তাঁর বিরুদ্ধে। কেন্দ্রীয় বিমান ও পরিবহণ মন্ত্রী জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়ার ঘনিষ্ঠ আত্মীয় রাজস্থানের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা প্রথম সারির বিজেপি নেত্রী বসুন্ধরা রাজে সিন্ধিয়া। আর খোদ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ছেলে জয় শাহ ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের সেক্রেটারি হয়েছেন। উত্তরপ্রদেশে গত বিধানসভা নির্বাচনে কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের ছেলে পঙ্কজ সিং নয়ডা কেন্দ্রে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিধায়ক হয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর গোটা পরিবার রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। বিজেপিতে এরকম উদাহরণ আরও আছে। বিজেপি ছাড়া সমাজবাদী পার্টি, ডিএমকে, আরএলডি, আরজেডি, ডিএমকে, এআইএডিএমকে, ওয়াইএসআর কংগ্রেস, প্রভৃতি কমবেশি সব দলেই পরিবারতন্ত্র লক্ষ্য করা যায়। তাই শুধু কংগ্রেস বা বাংলার তৃণমূল নয়, ভারতীয় রাজনীতিতে পরিবারতন্ত্র আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রয়েছে।

কটা সময় তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রকে নিশানা করে বলেছিলেন কেন্দ্র এ বিষয়ে আইন আনুক, যাতে পরিবারতন্ত্র বন্ধ করা যায়। একটি পরিবার থেকে একজনের বেশি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না। তাহলে তিনি সবার আগে সাংসদ পথ থেকে পদত্যাগ করবেন। কেন্দ্রকে এমনটাই চ্যালেঞ্জ করেছিলেন অভিষেক। কিন্তু এটা যে বাস্তবে হওয়ার নয় তা সকলেই জানেন। তাই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ পরিবারতন্ত্র নিয়ে বিরোধীদের যেভাবে তোপ দেগেছেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। এ প্রসঙ্গে  তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘পরিবারতন্ত্রের কথা বিজেপি কী করে বলছে? অধিকারী প্রাইভেট লিমিটেডের সাইনবোর্ড তো বিজেপির দেওয়ালে ঝুলছে। সিন্ধিয়ারা তো বটেই, রাজ্যে রাজ্যে বিজেপি পরিবারতন্ত্র চালায়। আর বাংলায় তো মানুষের সরকার চলছে।’’ একইভাবে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বিজেপিকে নিশানা করে বলেছেন, “বিজেপির মধ্যে  পরিবারতন্ত্র রয়েছে। ওরা খালি কংগ্রেস মুক্ত ভারতের কথা বলে। আসলে ওরা কংগ্রেসকে ভয় পায়। এত বছর ধরে বিজেপির বিরুদ্ধে একমাত্র লড়াই চালাচ্ছে কংগ্রেস। তাই ওরা ভয় পেয়ে রাহুল গান্ধীকে ৫৪ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করেছে।” সব মিলিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যে রাজনৈতিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

12 − one =