নিজস্ব প্রতিনিধি: রাজ্য রাজনীতিতে অন্যতম চর্চার বিষয়বস্তু হয়ে উঠেছে বঙ্গভঙ্গ ইস্যু। গ্রেটার কোচবিহার নেতা অনন্ত মহারাজ নিয়মিত উত্তরবঙ্গ-সহ অসমের একাংশকে নিয়ে পৃথক রাজ্যের দাবি করে চলেছেন। আর তাঁর এই দাবির পক্ষে নাকি সায় আছে বিজেপির একাংশের, এমনটাই মনে করে রাজনৈতিক মহল। যার তীব্র বিরোধিতা করছে তৃণমূল। যদিও রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব প্রকাশ্যে বিষয়টি নিয়ে কিছু বলতে চাইছে না। বলা ভাল রাজ্য বিজেপি পৃথক রাজ্য ইস্যুটি নিয়ে কিছুটা ধোঁয়াশা বজায় রেখে চলেছে। তবে কোচবিহারের সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিক সম্প্রতি অনন্ত মহারাজের সঙ্গে বৈঠকের পর বঙ্গভঙ্গের সম্ভাবনা কিন্তু উড়িয়ে দেননি। আর এরপরই গোটা বিতর্কটি অন্য মাত্র পেয়েছে। এর আগে শিলিগুড়ির প্রাক্তন মেয়র ও সিপিএম নেতা অশোক ভট্টাচার্যের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন দার্জিলিংয়ের বিজেপি সাংসদ রাজু বিস্তা ও বিজেপি বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ। তৃণমূলের দাবি বঙ্গভঙ্গ ইস্যুতেই সেই বৈঠক হয়েছিল। যদিও অশোকের পাশাপাশি সিপিএম সেই দাবি ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছে।
এই আবহের মধ্যে সম্প্রতি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রমাণিকের বাড়িতে গিয়েছিলেন অনন্ত মহারাজ। প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা ধরে তাঁদের কথা হয়। এরপর নিশীথের বাড়ি থেকে বেরিয়ে অনন্ত বিস্ফোরক দাবি করে বলেন, শীঘ্রই পৃথক উত্তরবঙ্গ হবে। অর্থাৎ বঙ্গভঙ্গের কথাই বলেছেন তিনি। সেদিন নিশীথের বাড়ি থেকে বেরোনোর পর সাংবাদিকরা তাঁকে জিজ্ঞাসা করেন, পৃথক উত্তরবঙ্গের যে দাবি উঠছে তা নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর কোনও কথা হয়েছে কিনা। উত্তরে অনন্ত মহারাজ বলেন,”অনেক কিছুই আলোচনা হয়েছে। ইতিবাচক কথা হল আমাদের। যেটা হবে সেটা দেখতেই পাবেন।” আর পৃথক উত্তরবঙ্গ প্রসঙ্গে তিনি বলেন,”এটা তো সরকার ঘোষণাই করেছে। আবার নতুন করে বলার কি আছে? আমার বিশ্বাস যা হওয়ার খুব শিগগির হবে”। যদিও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী স্পষ্ট বলে দিয়েছে এমন কোনও প্রস্তাব তাদের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়নি। উল্লেখ্য গত মাসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উত্তরবঙ্গ সফরে গিয়েছিলেন। সেখানে মুখ্যমন্ত্রীর মঞ্চে ছিলেন অনন্ত মহারাজ। আর সেদিন মঞ্চ থেকে নেমে অনন্ত মহারাজ বাংলা ভাগের দাবি জানিয়েছিলেন। আর গ্রেটার কোচবিহার নেতা অনন্ত মহারাজের সঙ্গে সাক্ষাতের পর নিশীথ তাৎপর্যপূর্ণভাবে বলেছিলেন, পৃথক উত্তরবঙ্গ হলে তো দেখতেই পাবেন। অর্থাৎ এই সম্ভাবনা তিনি নাকচ করে দেননি।
এদিকে তৃণমূল গোটা বিষয়টি নিয়ে জল মেপে চলেছে। রাস উৎসবের অনুষ্ঠানেও অনন্ত মহারাজকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। তৃণমূলের একটি সূত্রের দাবি, উত্তরবঙ্গের একটা অংশে অনন্তর কথায় ভোটাররা প্রভাবিত হন। তাই সেই বিষয়টি ভাবাচ্ছে তৃণমূলকে। আর এখনও পর্যন্ত কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে বঙ্গভঙ্গ নিয়ে কিছু জানানো হয়নি। কোনও প্রক্রিয়াও তারা শুরু করেনি। রাজনৈতিক মহলের একাংশের দাবি, উত্তরবঙ্গের একটা অংশের মানুষ মানসিকভাবে পৃথক রাজ্যের পক্ষে আছেন। তবে সবাই নয়। তাই গোটা বিষয়টির উপর সজাগ দৃষ্টি রেখে চলেছে তৃণমূল।