বারবার কীভাবে লটারিতে লক্ষ্মীলাভ অনুব্রত-সুকন্যার? তবে কি এবার সামনে আসবে নতুন দুর্নীতি?

বারবার কীভাবে লটারিতে লক্ষ্মীলাভ অনুব্রত-সুকন্যার? তবে কি এবার সামনে আসবে নতুন দুর্নীতি?

নিজস্ব প্রতিনিধি: শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির পাশাপাশি কয়লা পাচার, গরু পাচার কাণ্ড নিয়ে শোধগোল পড়ে গিয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে। এবার নতুন করে দুর্নীতির গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে লটারির টিকিট বিক্রি নিয়ে। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী একাধিকবার অভিযোগ করে বলেছেন লটারির টিকিট থেকে বিপুল অঙ্কের টাকা শুধু জিতছেন তৃণমূলের নেতা-নেত্রীরা। যদিও সেই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে শাসক দল। কিন্তু গত কয়েক বছরের ঘটনা প্রবাহ অন্য কথাই বলছে।

দেখা যাচ্ছে বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল এবং তাঁর মেয়ে সুকন্যা মণ্ডল একাধিক বার লটারির টিকিটে বিপুল অঙ্কের পুরস্কার জিতেছেন। এখানেই শেষ নয়, বিভিন্ন সূত্রের খবর অনুযায়ী লটারিতে এক কোটি টাকা জিতেছেন বীরভূমের নলহাটির তৃণমূল বিধায়ক রাজেন্দ্রপ্রসাদ সিংয়ের ভ্রাতৃবধূ নেরু সিংহ। তাঁর স্বামী পিন্টু সিংহ নলহাটি শহর তৃণমূলের সভাপতি। জোড়াসাঁকো কেন্দ্রের তৃণমূল বিধায়ক বিবেক গুপ্তের স্ত্রী রুচিকাও ডিয়ার লটারিতে এক কোটি টাকার পুরস্কার জিতেছেন। এরপরই শুভেন্দু অভিযোগ করে বলেন, সাধারণ মানুষ লটারি টিকিট কেনেন, আর বাম্পার পুরস্কার জেতেন তৃণমূল নেতারা। এই পরিস্থিতিতে অনুব্রত এবং তাঁর মেয়ে অতীতে একাধিকবার যেভাবে লটারির টিকিট কেটে বিপুল টাকা জিতেছেন সেই বিষয়টি কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আতসকাচের নিচে উঠে এসেছে। বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল এক কোটি টাকা লটারির টিকিট আদৌ জিতেছেন কিনা তা নিয়ে তদন্ত করছে সিবিআই। কেন্দ্রীয় তদন্তকারীদের অনুমান লটারির টাকার কথা বলে কালো টাকা সাদা হয়ে থাকতে পারে।

এই পরিস্থিতিতে চাঞ্চল্যকর তথ্য হাতে পেল সিবিআই। তারা জানতে পেরেছে গত তিন বছর ধরে লটারির টাকা পেয়ে আসছিলেন অনুব্রত মণ্ডল ও তাঁর মেয়ে সুকন্যা মণ্ডল। তাঁদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে লটারি জেতার লক্ষ লক্ষ টাকা জমা পড়ছিল‌। তবে কি গরু পাচার কাণ্ডের সঙ্গে লটারি ব্যবসার প্রত্যক্ষ যোগসাজশ রয়েছে? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে চান সিবিআই আধিকারিকরা। এ ব্যাপারে কি তথ্য হাতে পেয়েছেন তাঁরা? সিবিআই জানতে পেরেছে ২০১৯ সালে একটি লটারির টিকিট কেনা হয়েছিল। সেটির পুরস্কার বাবদ দশ লক্ষ টাকা যায় অনুব্রত মণ্ডলের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে। পরবর্তীকালে অনুব্রতর মেয়ে দু’বার লটারির টিকিট কিনে একবার ২৫ লক্ষ ও আরেক বার ২৬ লক্ষ টাকা জেতেন। অর্থাৎ তিনটি টিকিট মিলিয়ে মোট ৬১ লক্ষ টাকা জমা পড়ে অনুব্রত এবং সুকন্যার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠছে বারবার লটারির টিকিট কেটে সেখান থেকে বিপুল মূল্যের আর্থিক পুরস্কার কীভাবে জিততেন তাঁরা?

চলতি বছরের গোড়ার দিকে অনুব্রত মণ্ডল একটি লটারির টিকিট কেটে এক কোটি টাকা পুরস্কার জিতেছিলেন বলে খবর। সেই টিকিটটির নম্বর ৫৪০৪৫, যে টিকিটটি কেনা হয়েছিল বীরভূমের নানুর বিধানসভার অন্তর্গত নাহিনা গ্রাম থেকে। রাহুল লটারি এজেন্সি থেকে লটারির টিকিট কিনেছিলেন এক টিকিট বিক্রেতা। তাঁর কাছ থেকে টিকিট কেনেন মুন্না। তারপর সেই টিকিট তিনি বিক্রি করেন। আর তাঁর বিক্রি করা একটি টিকিটেই এক কোটি টাকা পুরস্কার পেয়েছিলেন অনুব্রত। এই পরিস্থিতিতে গত তিন বছরের লটারির টিকিট সংক্রান্ত তথ্য হাতে আসার পর কেন্দ্রীয় তদন্তকারীরা নিশ্চিত গরু পাচারের টাকা এভাবেই পিছনের দরজা দিয়ে অনুব্রত এবং সুকন্যার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ঢুকেছে। সিবিআই অনুব্রতর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের লেনদেন খতিয়ে দেখে লটারি সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য জানতে পেরেছে। সিবিআই মনে করছে গরু পাচারের টাকা এভাবেই লটারির টিকিটের কথা বলে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করা হয়েছে। এভাবেই কালো টাকা সাদা করা হয়েছে বলে তারা নিশ্চিত। বিষয়টি নিয়ে অনুব্রত এবং সুকন্যাকে এবার সিবিআই জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারে বলে খবর। সেই সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে লটারির টিকিট ডিলারদের সঙ্গেও সিবিআই আধিকারিকরা কথা বলতে পারেন বলে জানা যাচ্ছে। সেই সঙ্গে সিবিআই এই ব্যাপারেও জানতে চাইছে যে, লটারির পুরস্কার জিতলে সাধারণত পুরস্কার প্রাপকদের নাম দিয়ে সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। তাই অনুব্রত এবং সুকন্যার ক্ষেত্রে কোনও বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছিল কিনা সেটাও জানতে চায় সিবিআই। সব মিলিয়ে লটারির টিকিটের পুরস্কার জেতা নিয়ে রহস্য ভেদ করতে মরিয়া কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা। তবে কি লটারির টিকিট বিক্রির মধ্যেও দুর্নীতি রয়েছে? সেই রহস্যের কিনারা করতে চাইছে সিবিআই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

1 × five =