দোর্দণ্ডপ্রতাপ অনুব্রতকে ফের শুনতে হল ‘গরুচোর’ স্লোগান! দুর্নীতি ইস্যুতে কতটা ব্যাকফুটে তৃণমূল?

দোর্দণ্ডপ্রতাপ অনুব্রতকে ফের শুনতে হল ‘গরুচোর’ স্লোগান! দুর্নীতি ইস্যুতে কতটা ব্যাকফুটে তৃণমূল?

 

নিজস্ব প্রতিনিধি: মাত্র এক বছরের ব্যবধান। রীতিমতো ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে বিপুল সংখ্যক আসন জিতে পশ্চিমবঙ্গে তৃতীয়বার ক্ষমতায় আসে তৃণমূল। তৃণমূলের অসামান্য পারফরমেন্সে বিরোধীরা আস্তে আস্তে কুঁকড়ে যেতে শুরু করে। এরপর বিধানসভা, লোকসভার উপনির্বাচন বা পুরসভার নির্বাচনে বিরোধীরা ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে যায়। রাজ্য জুড়ে তৃণমূল ঝড় চলতেই থাকে। কিন্তু শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ বান্ধবী অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের বাড়ি থেকে কোটি কোটি টাকা উদ্ধারের ঘটনার পর থেকেই তৃণমূল আস্তে আস্তে চুপসে যেতে শুরু করে। আর এই আবহের মধ্যেই সামনে চলে এল অনুব্রত মণ্ডলের গ্রেফতারি কাণ্ড। যে ঘটনা তৃণমূলকে আরও কোণঠাসা করে দিল রাজ্য রাজনীতিতে।

জেলাস্তরের নেতা হিসেবে অনুব্রত মণ্ডল একমাত্র ব্যক্তি, যিনি রাজ্য তৃণমূলের অন্যতম প্রধান মুখ হয়ে উঠতে পেরেছেন। বীরভূম জুড়ে অনুব্রত মন্ডলের ক্ষমতার কথা সকলেই জানেন। গুড় বাতাসা, নকুল দানা, চড়াম চড়াম ঢাক বাজানো, ভয়ঙ্কর খেলা হবে ইত্যাদি স্লোগানের জনক অনুব্রত মণ্ডলের হাত যে কতদূর লম্বা সেটা ভাল করেই জানেন বীরভূমবাসী। অনুব্রতর অনুমতি ছাড়া বোলপুর তথা বীরভূমে যেন গাছের পাতা পড়ার জো নেই। অথচ এই অনুব্রত সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হওয়ার পর থেকেই চতুর্দিকে গরুচোর স্লোগান উঠল নতুন করে। বৃহস্পতিবার গ্রেফতারের পর অনুব্রতকে বোলপুর থেকে কুলটির শীতলপুর ইসিএল-এর গেস্ট হাউসে নিয়ে যায় সিবিআই। আর এই গোটা যাত্রাপথে বহুবার রাস্তার দু’পাশে ‘গরুচোর’ স্লোগান উঠতে দেখা যায়। সেই সঙ্গে অনুব্রতর শাস্তির দাবি করলেন তাঁরা। 

কিছুদিন আগে পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে লক্ষ্য করে এক মহিলা জুতো ছুঁড়ে মেরেছিলেন। এরপর অনুব্রত মণ্ডল এসএসকেএম হাসপাতালে শারীরিক পরীক্ষা করাতে গেলে সেখানে তাঁকে লক্ষ্য করে গরু চোর স্লোগান দেওয়া হয়। কিন্তু গ্রেফতারের পর যেভাবে অনুব্রতর বিরুদ্ধে জনরোষ দেখা গিয়েছে, তাতে গোটা বিষয়টি অন্য মাত্রা পেয়েছে। সাধারণ  মানুষের মধ্যে এরকম একটা ধারণা তৈরি হয়েছে যে তৃণমূল মানেই যেন দুর্নীতি! বহুদিন ধরেই বিষয়গুলি নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় রীতিমতো ঝড় চলছে।  রাজ্যবাসী মনে করে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের প্রশ্রয়েই অনুব্রত এতদিন ধরে যা খুশি করে গিয়েছেন। এমনকী পুলিশকে  বোমা মারার নিদানও দিয়েছিলেন তিনি।

বারবার আলটপকা মন্তব্য,  কোথাও সামান্য বিরোধিতার সুর দেখলে তাঁদের ধমকে চমকে রাখা, এসব ছিল অনুব্রতর নিত্য সঙ্গী। কিন্তু গরু পাচার কাণ্ডে নাম জড়ানোর পর সিবিআই এবং  ইডি তদন্ত প্রক্রিয়া এগিয়ে নিয়ে যেতেই অনুব্রত আস্তে আস্তে  চুপসে যেতে থাকেন। আর ঠিক তখনই তৃণমূলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ অন্য মাত্রা পায়। বিরোধীরা নতুন করে সোচ্চার হয় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে। আর বর্তমানে পরিস্থিতি যা, তাতে রাজ্যবাসী মনে করছে দুর্নীতির কালো ছোপ গোটা তৃণমূলের গায়ে লেগে রয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই তৃণমূল চিন্তিত এর প্রভাব আগামী দিনে  নির্বাচনগুলিতে পড়বে কিনা তা নিয়ে। আগামী বছরের গোড়ার দিকেই পঞ্চায়েত নির্বাচন হওয়ার  কথা। অনুব্রত গ্রেফতার হয়ে যাওয়ায় বীরভূম জেলায় দলের ফল নিয়ে চিন্তিত জোড়াফুল শিবির। তবে শুধু বীরভূম নয়, যেভাবে তৃণমূলের বিরুদ্ধে সার্বিক দুর্নীতির অভিযোগ রাজ্যজুড়ে রাতারাতি প্রাসঙ্গিক হয়েছে, সেখান থেকে মানুষের আস্থা অর্জন কতটা করা যাবে তা ভাবতে হবে তৃণমূলকে। তাই এটা স্পষ্ট অনুব্রতর গ্রেফতারি তৃণমূলকে আরও বেশি বিপাকে ফেলে দিল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

6 − 4 =