গার্ডেনরিচের ঘটনায় ফিরহাদের যুক্তিতে উঠছে বহু প্রশ্ন! রাজ্যের অর্থনীতিকে ধ্বংসের চেষ্টা, কেন বললেন মন্ত্রী?

গার্ডেনরিচের ঘটনায় ফিরহাদের যুক্তিতে উঠছে বহু প্রশ্ন! রাজ্যের অর্থনীতিকে ধ্বংসের চেষ্টা, কেন বললেন মন্ত্রী?

নিজস্ব প্রতিনিধি:  রাজ্যের ফের টাকার পাহাড়ের হদিস মিলল। এবার ঘটনাস্থল গার্ডেনরিচ। ১৭ কোটির বেশি টাকা উদ্ধার রয়েছে এক ব্যবসায়ীর বাড়ি থেকে। যথারীতি পলাতক আমির খান নামে সেই ব্যবসায়ী। মোবাইল গেমিং অ্যাপের মাধ্যমে প্রতারণা ব্যবসা  চালাতেন তিনি। যে ঘটনায় নতুন করে শোরগোল পড়ে গিয়েছে রাজ্যে। শনিবার কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি তাঁর বাড়িতে হানা দিয়ে খাটের তলা থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা উদ্ধার করেছে। কিন্তু অদ্ভুতভাবে রাজ্যের মন্ত্রী তথা কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম ওই ঘটনার নিন্দা না করে উল্টে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকেই নিশানা করছেন। আর মন্ত্রীর এই বক্তব্যে স্বাভাবিক ভাবেই সমালোচনার ঝড় উঠেছে। ফিরহাদ বলেছেন এভাবে নাকি পশ্চিমবঙ্গের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দেওয়ার চেষ্টা করছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। তিনি বলেন, ‘ভারতবর্ষের বহু ব্যবসায়ীর বাড়ি থেকে টাকার পাহাড় উদ্ধার হয়েছে। শুধু বাংলায় আপনারা একটা জায়গায় দেখছেন কেন? এ তো সাত কোটি, ৭০০০ কোটি মেরেছে নীরব মোদি ও মেহুল চোকসি। তার হদিস কোথায়? যার বাড়িতে টাকা বেরিয়েছে তার কেস হবে। আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা হবে। সেটার সঙ্গে রাজনীতির কি সম্পর্ক? আর বাংলার কি সম্পর্ক আছে? রাজ্যের অর্থনীতিকে এভাবে ধ্বংস করে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে’। ফিরহাদ এভাবেই বিরোধীদের নিশানা করেন।

তিনি আরও বলেন, ‘বাংলায় ১০০ শতাংশ সার্টিফিকেট দেওয়া যেতে পারে না। যে অসৎ ব্যক্তি বাংলায় থাকবে না। নরেন্দ্র মোদি কি লিখে দিতে পারবেন গুজরাতে কোনও অসৎ মানুষ নেই? ব্যাঙ্ক থেকে ২ লক্ষ কোটি টাকা তছরুপ করেছে বিভিন্ন ব্যবসাদার। কিন্তু বাংলায় একটা অস্থিরতা সৃষ্টি করা হয়েছে। সেটা হবে কেন? নির্দিষ্ট  অভিযোগের ভিত্তিতে রেড বা অ্যারেস্ট করলে কিছু বলার নেই। কিন্তু তার সঙ্গে কোনও রাজনৈতিক যোগ থাকবে না। স্বাধীন এজেন্সি নিজের মতো কাজ করবে। আমার বিধানসভা এলাকায় এই ঘটনা ঘটেছে বলে আমি এর জবাব দেব কেন? তাহলে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিভিন্ন রকম তল্লাশিতে বহু টাকা উদ্ধার হচ্ছে। তা নিয়ে কি দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জবাব দিতে যান? প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তো সারা ভারতবর্ষের প্রধানমন্ত্রী, তাহলে তাঁকেও বলা উচিত। শুধু বিরোধীদের রাজ্যে এটা হচ্ছে কেন? যেখানে শাসকদলের রাজ্য সেখানে কি মানুষ বেআইনি ভাবে টাকা রাখে না? মলয় ঘটকের বাড়িতে হানা দেওয়া হল। এই রেড করা হয় যাতে এখানে কেউ ব্যবসা না করতে পারে। সেই কারণে এই সমস্ত রেড হচ্ছে বলে আমার মনে হচ্ছে। এটা নিয়ে একটা আতঙ্ক সৃষ্টি করা হচ্ছে। যাতে এখানে ব্যবসা না করতে পারে, আর এখানকার আর্থিক অবস্থা যাতে ভেঙে পড়ে।”

আর এখানেই প্রশ্ন, ইডি যদি বেআইনি টাকা উদ্ধার করে তবে তাতে পশ্চিমবঙ্গের অর্থনীতি ধ্বংস হয়ে যাবে একথা বলার মানে কি? শুধু তাই নয়, পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বান্ধবী অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের দুটি ফ্ল্যাট থেকে ৫০ কোটির বেশি টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। গরু পাচার মামলায় সিবিআই গ্রেফতার করেছে অনুব্রত মণ্ডলকে। সেখানেও কোটি কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতির বিরুদ্ধে। তবে কি শাসক দলের নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠছে বলেই ফিরহাদের এত রাগ? রাজ্য মন্ত্রিসভার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ফিরহাদের মুখে এ কথা মানায় কি? মন্ত্রীমশাইয়ের এমন বক্তব্যে যথারীতি বিষয়টি নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলে। তাই গার্ডেনরিচে টাকা উদ্ধারের ঘটনাতেও তৃণমূলকে আক্রমণ করতে ছাড়ছে না বিরোধীরা। যা নিয়ে অস্বস্তি বাড়ছে শাসক দলের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

3 + 5 =