নিজস্ব প্রতিনিধি: যাবতীয় জল্পনার অবসান, বিজেপি রাষ্ট্রপতি প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছে জনজাতি সমাজের অন্যতম প্রধান মুখ দ্রৌপদী মুর্মুকে। ওড়িশার ময়ূরভঞ্জ জেলার এক সাঁওতাল পরিবারের কন্যা দ্রৌপদী এর আগে ঝাড়খণ্ডের রাজ্যপাল হিসেবে কাজ করেছেন। তার আগে ওড়িশায় মন্ত্রীও হয়েছিলেন। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে দ্রৌপদীর জয় কার্যত নিশ্চিত বলেই মনে করা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে তিনিই হবেন প্রথম জনজাতি সমাজের কোনও প্রতিনিধি যিনি রাষ্ট্রপতি হলেন। আর ভোটের অঙ্কেই বিজেপি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। সেক্ষেত্রে তাদের মাথায় রয়েছে বিভিন্ন রাজ্যের জাতিগত পরিসংখ্যান। তার মধ্যে রয়েছে বিজেপি শাসিত রাজ্য গুজরাট এবং মধ্যপ্রদেশও। সব মিলিয়ে আগামী লোকসভা নির্বাচনের আগে তফশিলি জাতি, উপজাতি, দলিত তথা আদিবাসী সমাজকে দ্রৌপদী মুর্মুর মনোনয়নের মাধ্যমে বিশেষ বার্তা দিতে চেয়েছে গেরুয়া শিবির, এমনটাই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।
ঝাড়খণ্ড ও মধ্যপ্রদেশে গত বিধানসভা নির্বাচনে তফশিলি জাতি, উপজাতি তথা আদিবাসী সম্প্রদায়ের জন্য সংরক্ষিত আসনগুলিতে বড় ধাক্কা খেয়েছিল বিজেপি। ঝাড়খণ্ডের ৮১টি আসনের মধ্যে ২৮টি আসন সংরক্ষিত। তার মধ্যে গত নির্বাচনে বিজেপি ২৮টির মধ্যে মাত্র দু’টিতে জয় পেয়েছিল। মধ্যপ্রদেশে ৮৪টি সংরক্ষিত আসনের মধ্যে বিজেপি গত বিধানসভা নির্বাচনে ৩৪টিতে জয় পেয়েছিল। বাকি ৫০টিতে জয় পায় কংগ্রেস তথা অন্যান্য বিরোধীরা। বিজেপির ‘এপিসেন্টার’ বলে পরিচিত গুজরাটেও গত বিধানসভা নির্বাচনে জনজাতিদের জন্য সংরক্ষিত ২৭টি আসনের মধ্যে গেরুয়া শিবির পেয়েছিল মাত্র ৯টি আসন। বিজেপির ঘরোয়া রিপোর্ট জানাচ্ছে মহারাষ্ট্র এবং ওড়িশাতেও জনজাতি সমাজে তাদের ভিত ক্রমশ আলগা হচ্ছে।
ওড়িশা, ঝাড়খণ্ড, মধ্যপ্রদেশ প্রভৃতি রাজ্যগুলিতে বিপুল সংখ্যক আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষ বসবাস করেন। লোকসভায় ৫৪৩টি আসনের মধ্যে তফশিলি জনজাতিদের জন্য সংরক্ষিত রয়েছে ৬২টি আসন। সব মিলিয়ে বিজেপি মনে করছে দ্রৌপদী মুর্মুকে রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী করে জনজাতি সমাজকে বিশেষ বার্তা দেওয়া গেল। সবচেয়ে বড় কথা বিজেপি প্রচারে বলতে পারবে তফশিলি জনজাতিদের পাশাপাশি মহিলাদের অন্যান্য দলের তুলনায় বেশি প্রাধান্য দেয় বলেই তারা দ্রৌপদীকে রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়ন দিয়েছে। অর্থাৎ এটা পরিষ্কার রীতিমতো অঙ্ক কষেই দ্রৌপদী মুর্মুকে রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী করেছে বিজেপি। আর বিজেপির এই চালে অসুবিধায় পড়ে যাচ্ছে কংগ্রেস তথা অন্যান্য বিরোধী দলগুলি। কারণ তারা প্রকাশ্যে দ্রৌপদী মুর্মুর বিরোধিতা করতে পারছে না। সেক্ষেত্রে বিরোধিতা করলে জনজাতি সমাজের ভোট হারাতে হতে পারে তাদের। সব মিলিয়ে এটা বিজেপির ‘মাস্টারস্ট্রোক’ বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
এর আগে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের পদপ্রার্থী হিসেবে বেশ কয়েকটি নাম উঠে এসেছিল। দ্রৌপদী মুর্মুর আগে জল্পনায় উঠে এসেছিল বেঙ্কাইয়া নাইডুর নাম। এর পাশাপাশি আরও কয়েকটি নাম নিয়ে জল্পনা তৈরি হয়। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ জুটি শেষপর্যন্ত দ্রৌপদী মুর্মুর নামেই সিলমোহর দেন। উল্লেখ্য এর আগে প্রতিভা পাতিল ভারতের প্রথম মহিলা রাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন। আর কোনও অঘটন না ঘটলে দ্বিতীয় মহিলা রাষ্ট্রপতি হতে চলেছেন আদিবাসী সম্প্রদায়ের অন্যতম প্রতিনিধি দ্রৌপদী মুর্মু।