বারবার ভাঙড় উত্তপ্ত হয়ে উঠছে কেন! তৃণমূল কি ভাঙড়ে দুর্বল হয়ে পড়েছে?

বারবার ভাঙড় উত্তপ্ত হয়ে উঠছে কেন! তৃণমূল কি ভাঙড়ে দুর্বল হয়ে পড়েছে?

নিজস্ব প্রতিনিধি: ফের খবরের শিরোনামে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড়। বিপুল অস্ত্র ও বোমা উদ্ধার হল ভাঙড়ের নাটাপুকুর অঞ্চল থেকে। আর সেই ঘটনা নিয়ে তৃণমূল এবং আইএসএফের মধ্যে তীব্র বাদানুবাদ শুরু হয়েছে। ঘটনায় বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করেছে কাশীপুর থানার পুলিশ। আর যেভাবে বোমা ও অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনা ঘটেছে তাতে পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন সেখানকার মানুষ। রাজনৈতিক মহল মনে করছে ভাঙড়ে শাসক দল তৃণমূলকে কড়া টক্কর দিচ্ছে বিধানসভা ভোটে জয়ী হওয়া আইএফএফ। আর তারপর থেকেই ভাঙড়ে বারবার অশান্তি হচ্ছে। আসলে ২০১১ সালে পরিবর্তনের বছর থেকেই তৃণমূলকে অস্বস্তিতে রেখেছে ভাঙড়-কাঁটা। তার প্রধান কারণ দলের তীব্র গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব।

২০১১ সালে তৃণমূল রাজ্যে ক্ষমতায় আসলেও ভাঙড়ে কিন্তু হেরে গিয়েছিলেন দলের প্রার্থী আরাবুল ইসলাম। সেবার তৃণমূল নেতা নান্নু হোসেন বিক্ষুব্ধ হয়ে নির্দল প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়ে দশ হাজার ভোট কেটে নেওয়ার কারণে আরাবুল পাঁচ হাজার ভোটে হেরে গিয়েছিলেন সিপিএমের কাছে। তখন থেকেই তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব শুরু হয় ভাঙরে। ২০১৬ সালে পরের বিধানসভা নির্বাচনে সিপিএম থেকে তৃণমূলে আসা রেজ্জাক মোল্লা ভাঙড়ে প্রার্থী হয়ে জয় পেলেও গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব চাপা দেওয়া যায়নি। প্রকাশ্যে রেজ্জাকের বিরোধিতা করতে থাকেন তৃণমূলের বিভিন্ন গোষ্ঠীর নেতারা। এরপর একুশের বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল রাজ্যে রীতিমতো ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে ক্ষমতায় আসলেও ভাঙড়ে তারা হেরে গিয়েছে সেই গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কারণেই। গোটা দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার একমাত্র ভাঙড় কেন্দ্রটি ছাড়া প্রত্যেকটিতেই জয় পেয়েছিল তৃণমূল। সেখানে শাসক দলের প্রার্থীকে হারিয়ে দেন আইএসএফ প্রার্থী নওশাদ সিদ্দিকী। এরপর নতুন করে ভাঙড় বার বার উত্তপ্ত হতে শুরু করে। তৃণমূলের একাংশ পিছন থেকে আইএসএফকে মদত দিচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। আর নিত্য সেখানে দু’পক্ষের অশান্তি লেগেই রয়েছে।

রাজনৈতিক মহল মনে করছে ক্ষমতার ভরকেন্দ্র যেভাবে তৃণমূলের হাত থেকে  আইএসএফের হাতে চলে গিয়েছে তাতেই নিয়মিত অশান্তি হচ্ছে ভাঙড়ে। তাই পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভাঙড়ের দখল কার হাতে থাকবে তার জন্য এখন থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছে এলাকা দখলের লড়াই। সাধারণ মানুষের দাবি পুলিশ যদি নিয়মিত বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে তল্লাশি চালায় তবে আরও বোমা, গুলি, বন্দুক উদ্ধার হবে ভাঙড় থেকে। আর এখন থেকে অস্ত্র উদ্ধার না হলে আগামী দিনে ভাঙড়ে আরও রক্ত ঝরবে বলে আশঙ্কা করছেন তাঁরা। সাধারণ মানুষ মনে করছেন বিধানসভা ভোটে হারের পর ভাঙড়ে হারানো জায়গা পুনরুদ্ধার করতে কোমর বেঁধে নেমেছে তৃণমূল। অন্যদিকে ক্ষমতা ধরে রাখতে মরিয়া আইএসএফ। আর এই দ্বন্দ্বের কারণেই বারবার উত্তপ্ত হয়ে খবরের শিরোনামে উঠে আসছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড়। তাই প্রশাসন কড়া পদক্ষেপ না নিলে পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে ভাঙড়বাসী যে স্বস্তিতে থাকবেন না তা স্পষ্ট।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

18 − 16 =