নিজস্ব প্রতিনিধি: মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিরাপত্তা নিয়ে বড়সড় প্রশ্ন চিহ্ন উঠে গেল। শনিবার মধ্যরাতে এক যুবক যেভাবে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে ঢুকে হাতে রড নিয়ে দীর্ঘক্ষণ ছিল, তাতে তাঁর উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। ইতিমধ্যেই হাফিজুল মোল্লা নামে ওই যুবককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে বহু প্রশ্ন উঠে আসছে। সবচেয়ে বড় কথা কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনী পেরিয়ে কীভাবে তিনি মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে ঢুকলেন, তার উত্তর এখনও অজানা। আর হাতে এক ফুট লম্বা লোহার রড থাকায় ওই যুবকের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন আরও উঠছে। সেই সঙ্গে প্রশ্ন উঠছে মমতার নিরাপত্তার দায়িত্বে যারা থাকেন সেই সমস্ত পুলিশকর্মী এবং পুলিশ আধিকারিকদের ভূমিকা নিয়ে।
প্রাক্তন পুলিশকর্তারা জানাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রীর মতো ভিভিআইপি’র নিরাপত্তায় এত বড় গাফিলতি দেখা দিলে অবিলম্বে ডিউটিতে থাকা পুলিশকর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এর পাশাপাশি উচ্চপদস্থ পুলিশ আধিকারিকদের কাছ থেকে জবাবদিহি চাওয়া হয়। কিন্তু কোনও এক আশ্চর্য কারণে সোমবার রাত পর্যন্ত কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে ঢুকে পড়া হাফিজুল মোল্লার বাবা দাবি করছেন তাঁর ছেলের নাকি মাথা ঠিক নেই। কিন্তু এরপর কী হাফিজুলকে পরীক্ষার জন্য কোনও মনোবিদের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়েছে? সে প্রশ্নেরও উত্তর মেলেনি। মুখ্যমন্ত্রী নিরাপত্তার দায়িত্বে যারা ছিলেন তাঁদের কারা কারা ঘটনার জন্য দায়ী, সে ব্যাপারে এখনও পর্যন্ত কাউকে চিহ্নিত করা গেল না কেন? মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ডিরেক্টর অফ সিকিউরিটি বিবেক সহায় এ ব্যাপারে কি বলছেন সেটাও স্পষ্টভাবে জানা যায়নি। যদিও সূত্রের খবর ঘটনার পর রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ কর্তারা যে বৈঠক করেছিলেন সেখানে উপস্থিত ছিলেন বিবেক। বিষয়টি নিয়ে সেখানে বহু প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে বিবেক সহায়কে।
রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের আগে নন্দীগ্রামে প্রচার করতে গিয়ে পায়ে গুরুতর আঘাত পেয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই সময় মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তা নিয়ে বহু প্রশ্ন ওঠে। ঘটনাটি নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে রীতিমতো ঝড় বয়ে যায়। বেশ কিছুদিন এসএসকেএম হাসপাতালে মুখ্যমন্ত্রীর আঘাতপ্রাপ্ত পায়ের চিকিৎসা করা হয়। এবার মুখ্যমন্ত্রী নিজের বাড়িতে থাকা অবস্থায় যেভাবে এক যুবক সেখানে ঢুকে গেলেন, তাতে গোটা বিষয়টি নিয়ে বিস্ময়ের সৃষ্টি হয়েছে। সাধারণ মানুষের প্রশ্ন, খোদ মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তা ব্যবস্থায় যদি এতটা গাফিলতি থাকে, তাহলে তাঁরা কোথায় যাবেন? কিছুদিন আগেই মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির সামনে জোড়া খুনের ঘটনা ঘটেছে। খাস কলকাতায় সেই খুনের ঘটনায় রীতিমতো শোরগোল পড়ে যায়। এবার খোদ মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতেই বিপদের হাতছানি! বিষয়টি যে কতটা সিরিয়াস তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। বরাবরই মমতা নিরাপত্তা এড়িয়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশে যাওয়া পছন্দ করে। তাই এই ঘটনার পর মমতার দায়িত্বে থাকা নিরাপত্তা আধিকারিকরা বিষয়টি নিয়ে নতুন করে কি ভাবনা চিন্তা করবেন সেদিকে চোখ থাকবে সবার। এমনকী নবান্নেও মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তায় কোনও ফাঁকফোকর আছে কিনা, সেটাও খুঁজে দেখতে হবে সংশ্লিষ্ট বিভাগকে। সব মিলিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে গভীর রাতে এক রহস্যময় আগন্তুকের প্রবেশ অনেক প্রশ্ন তুলে দিয়ে গেল।
