দত্তপুকুরের চড়-কাণ্ড প্রভাব ফেলবে ভোট বাক্সে? নেতাদের মদতেই কী নীচুতলার কর্মীদের এত ঔদ্ধত্য?

দত্তপুকুরের চড়-কাণ্ড প্রভাব ফেলবে ভোট বাক্সে? নেতাদের মদতেই কী নীচুতলার কর্মীদের এত ঔদ্ধত্য?

নিজস্ব প্রতিনিধি: ‘দিদির সুরক্ষা কবচ’ কর্মসূচিতে অভিযোগ জানাতে গিয়ে জুটল শাসক দলের থাপ্পড়! শনিবার দত্তপুকুরের এই ঘটনায় শোরগোল পড়ে গিয়েছে রাজ্য জুড়ে। বিরোধীরা বিষয়টি নিয়ে তৃণমূলের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে। রাজ্য জুড়ে শুরু হয়েছে ‘দিদির সুরক্ষা কবচ’ কর্মসূচি। এলাকায় পৌঁছে গিয়ে সাধারণ মানুষের অভাব অভিযোগ শুনছেন ‘দিদির দূত’রা। শনিবার দত্তপুকুরে রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষ সাধারণ মানুষের সুবিধা ও অসুবিধার কথা শুনতে ‘দিদির দূত’ হিসেবে দত্তপুকুর থানার অন্তর্গত ইছাপুর নীলগঞ্জ পঞ্চায়েতের সাইবনা এলাকায় পৌঁছে গিয়েছিলেন। সেখানে সাগর বিশ্বাস নামে এক স্থানীয় বাসিন্দা মন্ত্রীর কাছে অভিযোগ জানাতে গিয়েছিলেন। ঠিক তখনই শিবম রায় নামে এক তৃণমূল কর্মী তাঁর উপর চড়াও হন।

সাগর বিশ্বাসের গালে সপাটে চড় কষিয়ে দেন শিবম। সেই সঙ্গে ধাক্কাও মারা হয় তাঁকে। তখন সেখানে উপস্থিত অন্যান্য তৃণমূল কর্মী সাগরকে সরিয়ে দেন। ঘটনায় এলাকা জুড়ে ব্যাপক‌ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। বিষয়টি নিয়ে সোচ্চার হন সাগর। সেই সঙ্গে মন্ত্রীর কাছে এ ব্যাপারে অভিযোগও জানান তিনি। মন্থ্রী রথীন ঘোষ বিষয়টি নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেছেন বটে, কিন্তু সেই সঙ্গে তিনি যা বলেছেন তাতে অভিযুক্তের কিছুটা দোষ ঢাকার চেষ্টা করা হয়েছে বলেও এলাকাবাসী মনে করছেন। কারণ ঘটনাটি নিয়ে বিরোধীরা তৃণমূলের বিরুদ্ধে যে ঔদ্ধত্যের রাজনীতির অভিযোগ তুলছে তার পাল্টা প্রতিক্রিয়া হিসেবে আবার মন্ত্রী রথীন ঘোষকে বলতে শোনা গিয়েছে,”বিজেপি যেভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাল তাতে বোঝা গেল আমাদের কর্মসূচি বানচাল করতে এটা ওরা আগে থেকে ঠিক করে রেখেছিল”। একই সুর শোনা গিয়েছে তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষের মুখে। তিনি বলেন, “দত্তপুকুরে আমাদের কর্মসূচি বানচাল করতে বিজেপির তরফেই প্ররোচনা ছিল। কিন্তু কোনও ভাবেই সেই ফাঁদে আমাদের পা দেওয়া উচিত হয়নি। চড় মারা অন্যায় হয়েছে। এই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে বিরোধীদের পরিকল্পিত গোলমালের মুখোমুখি হতে হবে আমাদের৷” 

কিন্তু প্রশ্ন একটাই, সাগরে বিশ্বাস যে দলই করুন না কেন তিনি স্থানীয় বাসিন্দা। তবে কি অন্য দলের সমর্থক বা কর্মী হলে তিনি কি মন্ত্রীর কাছে কোনও অভাব অভিযোগের কথা জানাতে পারবেন না? এই প্রশ্ন তুলছেন এলাকাবাসী। বর্তমানে রাজ্য জুড়ে তৃণমূলের এই কর্মসূচি চলছে। বহু জায়গায় ‘দিদির দূত’ হয়ে যাঁরা যাচ্ছেন তাঁদের ঘিরে ধরে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন স্থানীয় মানুষজন। কিন্তু অভাব অভিযোগের কথা জানাতে গিয়ে ‘দিদির দূত’ হিসেবে যাওয়া  মন্ত্রীর সামনেই তৃণমূল কর্মীর হাতে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা এই প্রথম ঘটল রাজ্যে।

রাজনৈতিক মহল মনে করছে যে ঔদ্ধত্য দেখিয়েছেন তৃণমূল কর্মী তার প্রভাব পঞ্চায়েতের ভোটবাক্সে পড়বে। সেই সঙ্গে রাজ্য রাজনীতিতে এই চর্চাও শুরু হয়েছে যে, তৃণমূল নেতাদের প্রশ্রয়ের কারণেই কী নীচুতলার এক শ্রেণির কর্মীরা হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলছেন? বর্তমানে তৃণমূলের সহ-সভাপতি পদে রয়েছেন জয়প্রকাশ মজুমদার। একটা সময় তিনি বিজেপিতে ছিলেন। করিমপুর বিধানসভা কেন্দ্রের উপ-নির্বাচনে বিজেপির প্রার্থীও হয়েছিলেন। সেই ভোটের সময় দেখা গিয়েছিল তৃণমূলের এক সক্রিয় কর্মী তাঁকে লাথি মেরে রাস্তার ধারে থাকা ঝোপের মধ্যে ফেলে দিয়েছিলেন। সেই ঘটনা নিয়ে আলোড়ন পড়ে গেলেও অভিযুক্ত তৃণমূল কর্মীর বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা দল নেয়নি বলেই অভিযোগ ওঠে। তবে কি নীচুতলার এক শ্রেণির কর্মীদের বাগে আনতে পারছে না শাসকদল? এই প্রশ্ন অবধারিত ভাবে উঠছে। তাই পঞ্চায়েত নির্বাচনে এই ধরনের ঘটনার প্রভাব ভোট বাক্সে কতটা পড়ে সেটাই দেখার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

3 × three =