নিজস্ব প্রতিনিধি: যাবতীয় বিতর্কের সূত্রপাত ‘প্রজাপতি’ সিনেমা নিয়ে। ছবিতে অন্যতম প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন তৃণমূল সাংসদ দেব। কিন্তু সেই ছবিতে কেন মিঠুন চক্রবর্তীকে নেওয়া হয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন রাজ্য তৃণমূলের সম্পাদক তথা দলীয় মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। বিজেপি নেতা মিঠুনের সেই ছবিতে অভিনয় নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে বিস্তর জলখোলা হয়েছে। কিন্তু দেব সেই ইস্যুতে দলের লাইনের বাইরে হেঁটে মিঠুনের পাশে দাঁড়িয়ে কুণালের মন্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ করেছেন। সেই ঘটনায় বেশ অস্বস্তিতে পড়ে তৃণমূল। এবার দেব ফের নতুন করে তৃণমূলের অস্বস্তি বাড়ালেন।
রাজ্য জুড়ে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় দুর্নীতি নিয়ে যেভাবে সরব হয়েছে বিরোধীরা, যে যে যুক্তি তুলে ধরছে বিরোধী দলের নেতাকর্মীরা, কার্যত সেই সুরেই কথা বলতে শোনা গেল ঘাটালের তৃণমূল সাংসদ দেবকে। তিনি বলেছেন, “যাদের পাকা বাড়ি আছে তাঁরা অনেকে পেয়ে যাচ্ছেন। অথচ যাদের মাথায় ছাদ নেই তাঁরা পাচ্ছেন না। এটা তো ভুল। আমার দলই হোক বা অন্য কোনও দল। যেটা ভুল সেটা ভুলই।” শুধু দেব নন, আসানসোলের তৃণমূল সাংসদ শত্রুঘ্ন সিনহা সোমবার কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধীর ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। রাহুল যেভাবে ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’ করছেন প্রবল ঠান্ডাকে উপেক্ষা করে, আর সেই যাত্রায় যে অভূতপূর্ব সাড়া পাওয়া যাচ্ছে, তার মুক্তকণ্ঠে প্রশংসা করেছেন তিনি। শুধু তাই নয়, রাহুলের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার যোগ্যতা আছে বলেও শত্রুঘ্ন মনে করেন। যে বক্তব্য তৃণমূলের ঘোষিত স্ট্যান্ড পয়েন্টের সম্পূর্ণ বিরোধী। আর এদিনই তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে শত্রুঘ্ন সিনহার সুরে সুর মিলিয়ে রাহুল গান্ধীর ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’র প্রশংসা করেছেন বারাসতের তৃণমূল বিধায়ক অভিনেতা চিরঞ্জিত চক্রবর্তী। তাঁর কথায়, ভালই তো। যে যেভাবে পারছেন ভারত জোড়ার কাজ করছেন। যে যার মতো করে যদি ভারত জোড়ার কাজ করেন তাতে অসুবিধা কোথায়?” সেই সঙ্গে রাহুলের যাত্রাকে তিনি ত্রুটিহীন নিরপেক্ষ প্রয়াস বলেও বর্ণনা করেছেন।
গত এক বছর ধরে কংগ্রেসকে লাগাতার নিশানা করে চলেছে তৃণমূল। তৃণমূল মনে করে নরেন্দ্র মোদির পাল্টা হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর মুখ হওয়ার লড়াইয়ে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই জায়গা থেকে তৃণমূলের তারকা সাংসদ শত্রুঘ্ন সিনহা যেভাবে বলেছেন রাহুল গান্ধীর প্রধানমন্ত্রী হওয়ার যোগ্যতা আছে, তাতে দলের অস্বস্তি নিঃসন্দেহে বেড়েছে। তবে কি দলের লাইন সম্পূর্ণ অস্বীকার করলেন আসানসোলের তৃণমূল সাংসদ? এই চর্চা যথারীতি শুরু হয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে। ঘটনাচক্রে যে তিন তৃণমূলের জনপ্রতিনিধি বেসুরো কথা বলেছেন তাঁরা প্রত্যেকেই চলচ্চিত্র তারকা। পুরসভা থেকে বিধানসভা বা লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল টেলিভিশন ও চলচ্চিত্র অভিনেতা-অভিনেত্রীদের বারবার প্রার্থী করেছে। তাঁদের অনেকেই জিতে এসেছেন। তাই প্রশ্ন পুরোদস্তুর রাজনীতিক না হওয়ার কারণেই কি তাঁরা এভাবে আলটপকা মন্তব্য করছেন যাতে অস্বস্তি বাড়ছে তৃণমূলের? যদিও ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে যেটা সত্যিই সেটাই বলেছেন তাঁরা। আবাস যোজনা দুর্নীতি যেভাবে রাজ্যের কোণায় কোণায় ছড়িয়ে পড়েছে তা মন থেকে মেনে নিতে পারছেন না বলেই তৃণমূল সাংসদ দেব এমন কথা বলেছেন বলে বিরোধীরাও মনে করে। অন্যদিকে রাহুল গান্ধীর ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’ জুড়ে প্রত্যেকটি রাজ্যে যে অভূতপূর্ব সাড়া পাওয়া যাচ্ছে তাকে অস্বীকার করতে পারেননি শত্রুঘ্ন এবং চিরঞ্জিত। রাহুলের এই কর্মসূচিকে রীতিমতো বৈপ্লবিক আখ্যা দিয়েছেন আসানসোলের তৃণমূল সাংসদ। সব মিলিয়ে পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে তৃণমূলের অস্বস্তি অনেকটাই বাড়িয়ে দিলেন এই তিন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি।