ভারত কী সত্যিই কোনও দিন বিশ্বকাপ খেলতে পারবে? এ কোন স্বপ্ন দেখাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী?

ভারত কী সত্যিই কোনও দিন বিশ্বকাপ খেলতে পারবে? এ কোন স্বপ্ন দেখাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী?

নিজস্ব প্রতিনিধি:   বিশ্বকাপ ফুটবল ফাইনাল ঘিরে ভারত তথা গোটা বিশ্ব জুড়ে ছিল টানটান উত্তেজনা। গত এক মাস ধরে বিশ্বকাপ জ্বরে আচ্ছন্ন ছিল গোটা বিশ্ব। কেউ ব্রাজিল, কেউ আর্জেন্টিনা, কেউ ফ্রান্স কেউ বা জার্মানিকে সমর্থন করে এক মাস ধরে গলা ফাটিয়েছেন। তবে শেষ হাসি হেসেছে আর্জেন্টিনা। কিন্তু প্রশ্ন একটাই, ১৩০ কোটির দেশ ভারত কি কোনও দিন বিশ্বকাপে খেলতে পারবে, নাকি তারা সারা জীবন অন্যদের এভাবে সমর্থন করে যাবে? এই পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বিশ্বকাপ ফাইনালের দিন মেঘালয় সফরে গিয়ে একটি অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে দেশবাসীকে বিশ্বকাপ  খেলা নিয়ে স্বপ্ন দেখিয়েছেন। তাঁর কথায় একদিন ভারতও বিশ্বকাপে খেলবে, আর এদেশেই আয়োজিত হবে বিশ্বকাপ ফুটবল প্রতিযোগিতা। সেদিন মোদি বলেছেন, “আজ দুই দেশ বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলছে। বিদেশি দলগুলি অংশ নেবে কাতারের ফাইনালে। আমি আপনাদের আশ্বস্ত করে বলছি একটা দিন ফিফা বিশ্বকাপের মতো প্রতিযোগিতার আয়োজন করবে ভারত। তখন সবাই তিরঙ্গার জন্য উল্লাস করব।”

আসলে আয়োজক দেশ সরাসরি বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ পায়। সেই সূত্রেই প্রধানমন্ত্রী এমনটা জানিয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে। উল্লেখ্য ২০১৭ সালে পুরুষদের অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপ ফুটবলের আসর বসেছিল ভারতে। যা ভারত সাফল্যের সঙ্গে আয়োজন করে। সবমিলিয়ে ১৩ লক্ষের বেশি দর্শক ম্যাচ দেখেন। এর আগে ১৯৫০ সালে ভারত বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পেলেও অর্থাভাবের জন্য সেবারের আয়োজক দেশ ব্রাজিলে যেতে পারেনি। শুধু তাই নয়, ভারতীয়রা তখন খালি পায়ে ফুটবল খেলতেন। সব মিলিয়ে বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়া হয়নি ভারতের। কিন্তু এখন দিন বদলেছে। গোটা বিশ্বের বুকে ভারতের বিশেষ সম্মান রয়েছে। লাতিন আমেরিকা, ইউরোপের পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ভারতকে অত্যন্ত সম্মানের চোখে দেখে। তাই আগামী দিনে ভারত যেভাবে বিশ্বকাপের আয়োজন করতে পারে বলে স্বপ্ন দেখিয়েছেন মোদি, তা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী যে স্বপ্ন দেখিয়েছেন তা আগামী দিনে বাস্তবায়িত হোক, এটাই সবাই চান। কিন্তু তার জন্য দেশের ফুটবল পরিকাঠামোকেও তো গড়ে তুলতে হবে। এই প্রসঙ্গে ভারতের পুরুষ ও মহিলা হকি দলের প্রতি ওড়িশা সরকারের দায়বদ্ধতার কথা বিশেষভাবে তুলে ধরা প্রয়োজন। ২০১৮ সালে ভারতীয় হকি দলের উপর থেকে স্পনসরশিপ তুলে নেয় সাহারা। সেই সময় ওড়িশা সরকার হকি দলকে স্পনসর করার কথা ঘোষণা করে। ২০২৩ সাল পর্যন্ত ১৫০ কোটি টাকার বিনিময়ে তারা হকি দলকে স্পনসর করার চুক্তি করে। সেই প্রথম কোনও রাজ্য  সরকার সরাসরি খেলাকে স্পনসর করল। এর ফলও হাতেনাতে পায় ভারত।

গত অলিম্পিকে ভারতের পুরুষ হকি দল ব্রোঞ্জ পদক জেতে। আর মহিলা দল তুল্যমূল্য লড়াই করে চতুর্থ স্থান পায়। আর সেই সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে আরও দশ বছর স্পনসরশিপের মেয়াদ বাড়িয়েছে ওড়িশা সরকার। তাই ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়ক হকিকে এতটা গুরুত্ব দিয়ে যেভাবে এগিয়ে এসেছেন, সেটা কি ভারতীয় ফুটবল দলকে নিয়ে কেউ ভাবতে পারেন না? উপযুক্ত পরিকাঠামো তৈরি করে, গোটা দেশ ঘুরে প্রতিশ্রুতিমান ফুটবলার তুলে এনে, ভারতীয় কোচের পাশাপাশি পেশাদার বিদেশি কোচ এনে দীর্ঘমেয়াদি ভিত্তিতে সকলকে প্রশিক্ষণ দিয়ে একটা চেষ্টা করা কি যায় না? এই প্রশ্ন আজ স্বাভাবিকভাবেই উঠছে। মরক্কো, তিউনিশিয়া, সেনেগালের মতো ছোট দেশগুলি যেভাবে ফুটবল খেলল তার জন্য কোনও  প্রশংসাই যেন যথেষ্ট নয়। তাই এসব দেখে আমাদের কি সারা জীবন এটাই বলে যেতে হবে যে, ওরা পারে আর আমরা পারি না? সমালোচকদের কথায় ভারতে ক্রিকেট নিয়ে সবচেয়ে বেশি ভাবা হলেও অন্য খেলাগুলি অনেকটাই উপেক্ষিত থাকে। তাই ফুটবল বিশ্বকাপ আসে ও চলে যায়। কিন্তু ফিফার বিশ্ব ক্রমাপর্যায় তালিকায় ভারতের স্থান একশোর উপরই থেকে যায়। এই জায়গা থেকে ভারত আগামী দিনে বিশ্বকাপ খেলবে কিনা সেটা সময়ই বলবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

16 − 11 =