নিজস্ব প্রতিনিধি: শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির পাশাপাশি কয়লা পাচার, গরু পাচার নিয়ে তদন্ত করছে সিবিআই। এছাড়া বীরভূমের বগটুই কাণ্ডেও তদন্ত করছে তারা। কিন্তু সেই ঘটনার তদন্তের দায়িত্বে থাকা সিবিআই হেফাজতে অন্যতম অভিযুক্ত লালন শেখের যেভাবে অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে, তাতে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা যে অনেকটাই ব্যাকফুটে চলে গিয়েছে তা স্পষ্ট।
এমনকী বিষয়টি নিয়ে মেঘালয় থেকে প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, “মৃত্যুর নিন্দা করছি। মৃতের স্ত্রী অভিযোগ দায়ের করেছেন। গোটা বিষয়টি নিয়ে সব ধরনের পদক্ষেপ করা হবে। সিবিআই যদি এতটাই স্মার্ট হবে তাহলে তাদের হেফাজতে কেন এভাবে মৃত্যুর ঘটনা ঘটল? এর জন্য সিবিআইকে জবাবদিহি করতে হবে৷” আর এরপরই স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে সিআইডি। সিবিআইয়ের বিরুদ্ধে যে সমস্ত ধারায় অভিযোগ করেছে তারা তার মধ্যে খুনের ধারাও রয়েছে। তবে রাজ্য সরকার এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে কোনও ঘোষণা না করলেও মঙ্গলবার লালন শেখের ময়না তদন্তের আগেই রামপুরহাট হাসপাতালে পৌঁছে যান সিআইডির চার সদস্যের একটি দল। তার কিছু পরেই সিবিআইয়ের বিরুদ্ধে রাজ্য পুলিশ খুনের মামলা দায়ের করে। অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে সিবিআইয়ের শীর্ষ কর্তাদের বিরুদ্ধে। সবচেয়ে বড় কথা ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে আসার আগেই খুনের মামলা দায়ের করা হয়েছে সিবিআইয়ের বিরুদ্ধে। যা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে।
রাজ্য পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, লালনের দেহ যখন উদ্ধার করা হয়েছিল তখন তাঁর পা নাকি মাটিতে ঠেকেছিল। পরে ছবিতেও এমনটাই দেখা গিয়েছে বলে পুলিশের দাবি। আর সেই সূত্রেই লালনের পরিবারের সদস্যদের দাবি, তাঁকে সিবিআই হেফাজতে খুন করা হয়েছে। আর তাতেই ব্যাকফুটে চলে গিয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে এই ঘটনার জেরে আগামী দিনে গরু পাচার, কয়লা পাচার তদন্ত প্রক্রিয়া ধাক্কা খেতে পারে। সেক্ষেত্রে সিবিআইয়ের বিরুদ্ধে নানা প্রশ্ন উঠবে। তাই প্রশ্ন, সিবিআই হেফাজতে থাকার সময় সেখানকার নিরাপত্তার দায়িত্বে যখন সিআরপিএফ ছিল, তখন কীভাবে এত বড় গাফিলতির ঘটনা ঘটে গেল? তাহলে কি সিবিআই আধিকারিকদের একাংশের উদাসীনতার ফলেই এমন ঘটনা ঘটেছে? কেন সেখানে পর্যাপ্ত সিসিটিভি ছিল না সেই প্রশ্নও উঠছে।
বিভিন্ন সময় দেশজুড়ে লক-আপে মৃত্যুর ঘটনা বহু ঘটেছে। যা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকারের ভূমিকা নিয়ে। কিন্তু সিবিআই হেফাজতে এই মৃত্যুর ঘটনায় অবাক সকলেই। কারণ সিবিআই অফিসাররা অনেক পেশাদার ভাবে তদন্তের কাজ করেন। সেখানে এমন ঘটনা কেন ঘটবে? বিগত কয়েক মাস ধরে বিভিন্ন তদন্ত প্রক্রিয়ায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই এবং ইডি তদন্তের গতি অনেকটাই বাড়িয়েছে। যা নিয়ে বারবার সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা দুটিকে। সেক্ষেত্রে কেন্দ্রের শাসক দল বিজেপিকে নিশানা করছে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। তৃণমূলের অভিযোগ বিজেপির ইশারাতেই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা কাজ করছে। দীর্ঘদিন ধরেই বিষয়টি নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে রামপুরহাটের সিবিআই হেফাজতে যেভাবে বগটুই কাণ্ডের অন্যতম প্রধান অভিযুক্ত লালন শেখের অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে, তাতে সিবিআইয়ের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে বাধ্য। আর সেই সূত্রেই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে দিয়েছে রাজ্যের তদন্তকারী সংস্থা সিআইডি। যা সম্প্রতিক অতীতে কবে দেখা গিয়েছে সেটা কেউ মনে করতে পারছেন না। এখন বেশ কিছু দিন বিষয়টি নিয়ে যে রাজ্য রাজনীতিতে চর্চা চলতেই থাকবে তা স্পষ্ট। তাই গোটা ঘটনাটি নিয়ে সিবিআই কি পদক্ষেপ করে, কি প্রতিক্রিয়া দেয় তারা এখন সেটাই দেখার।
