মানিকের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটে একাধিক রহস্যময় নাম? বৃহৎ ষড়যন্ত্রে যুক্তদের খুঁজে পাবে ইডি?

মানিকের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটে একাধিক রহস্যময় নাম? বৃহৎ ষড়যন্ত্রে যুক্তদের খুঁজে পাবে ইডি?

 

নিজস্ব প্রতিনিধি: অবশেষে ইডির জালে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন চেয়ারম্যান  মানিক ভট্টাচার্য। এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি  মামলায় সোমবার রাতভর সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সে জিজ্ঞাসাবাদের পর ভোররাতে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন চেয়ারম্যান তথা পলাশিপাড়ার তৃণমূল বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি শিক্ষক নিয়োগের ভুয়ো তালিকা দিয়েছিলেন। সেই সঙ্গে চাকরি দেওয়ার নাম করে বিপুল টাকা আত্মসাৎ করেছিলেন তিনি। এর পাশাপাশি ইডি আধিকারিকদের দাবি, তাঁকে প্রচুর জেরা করা হলেও তিনি তদন্তে সহযোগিতা করছিলেন না। এরপরই তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর আদালতে তোলা হলে মানিককে ১৪ দিনের ইডি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। অর্থাৎ আগামী ১৪ দিন সিজিও কমপ্লেক্সে মানিককে জেরা করবেন ইডি আধিকারিকরা।

 

 

মানিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ টেটে সাদা খাতা দিয়ে চাকরি পেয়েছেন অযোগ্য প্রার্থীরা। নিজের পদের ক্ষমতার অপব্যবহার করে তাঁদের চাকরি পাইয়ে দিয়েছেন মানিক। সেই  সময় পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে মানিকের ফোনে এবং হোয়াটসঅ্যাপে চ্যাটের প্রসঙ্গ ইডির চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়। আর বিভিন্ন সময় মানিক যে সমস্ত হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট করেছেন তা ভাবাচ্ছে তদন্তকারীদের। এ বিষয়ে কী তথ্য উঠে এসেছে? উল্লেখ্য মানিকের কন্টাক্ট লিস্টে ‘আরকে’ নামে একজনের হদিস পাওয়া গিয়েছে। ইডি তদন্তকারীদের দাবি তাঁর সঙ্গে মানিকের নিয়মিত  হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট চলত। এমন একটি চ্যাটে বলা হয়েছে ফাইনাল লিস্ট তৈরি করে ‘ডিডি’কে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে অপর একটিতে বলা হয়েছে, সেই তালিকা ‘ইডি’ দেখে নিয়েছে। স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন এই আরকে, ডিডি বা ইডি কারা? তাঁরা কি  কোনও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, নাকি প্রশাসনিক আধিকারিকদের কেউ? এর উত্তর খোঁজার চেষ্টা করছেন তদন্তকারীরা। সেই সঙ্গে তদন্তকারীদের দাবি, মানিকের দুর্নীতির সবটাই জানতেন তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তা সত্ত্বেও সেই দুর্নীতির বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেননি বা তদন্তেরও নির্দেশ দেননি তিনি।

 

 

এর পাশাপাশি ইডির দাবি, তৎকালীন যুব তৃণমূলের এক সম্পাদক  চাকরি প্রার্থীদের কাছ থেকে নাকি বিপুল পরিমাণ টাকা সংগ্রহ করেছিলেন। সেখানে মানিক ও পার্থের ভূমিকা খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। এর পাশাপাশি মানিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি নাকি প্রকাশ্যেই বলতেন দলের লোক হলে ছেলেমেয়েদের চাকরি হবে। এখানেই শেষ নয়, আরও  বিস্ফোরক তথ্য হাতে এসেছে বলে দাবি করছে ইডি। মানিক ভট্টাচার্যের ছেলের অ্যাকাউন্টে ২ কোটি ৬৪ লক্ষ টাকার হদিস পাওয়া গিয়েছে বলে দাবি করেছে ইডি। আদালতে এই তথ্য তুলে ধরেন ইডির আইনজীবী। তিনি দাবি করেন মানিকের পুত্র সৌভিক ভট্টাচার্যের নামে একটি কনসালটেন্সি ফার্ম রয়েছে। সেখানে ৫৩০ টি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পঞ্চাশ হাজার টাকা করে অর্থ দিয়েছে। এভাবে আর্থিক তছরুপের অভিযোগ করেছে ইডি।‌ এছাড়াও নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে মানিকের বিরুদ্ধে চাঞ্চল্যকর অভিযোগ করছে ইডি। এ বিষয়ে একটি হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট সামনে এনেছে তারা। সেখানে জনৈক ব্যক্তি তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে মোবাইলে  মেসেজ পাঠিয়ে লিখেছিলেন,  “দাদা মানিক ইজ টেকিং মানি। যা  তা ভাবে!” ইডির দাবি সেই  মেসেজ নাকি মানিককেই আবার ফরওয়ার্ড করে দিয়েছিলেন পার্থ। সেই অভিযোগেরও নাকি কোনও তদন্তই করেননি পার্থ। এই পরিস্থিতিতে মানিক এবং পার্থ, অর্থাৎ ‘মানিকজোড়’কে একসঙ্গে বসিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চান তদন্তকারীরা, এমনটাই সূত্রের খবর। তাই মানিক-কাণ্ড আগামী দিনে কোন দিকে মোড় নেয় এখন সেটাই দেখার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

3 × 3 =