নয়াদিল্লি: বুধবার অন্ধ্রপ্রদেশ পুলিশ জানিয়েছে, শীর্ষস্থানীয় এক মাওবাদী নেতার নেতৃত্বে মোট ৬০জন মাওবাদী আত্মসমর্পণ করেছে। এদিকে মাওবাদী অধ্যুষিত এলাকাগুলিতে কর্মরত একাধিক মানবাধিকার সংস্থার দাবি, অধিকাংশ ক্ষেত্রে যারা পুলিশের কাছে মাওবাদী হিসেবে আত্মসমর্পণ করছে তারা ভুয়ো মাওবাদী। সরকারি প্রকল্পের আর্থিক সুবিধা পেতে নিজেদের মাওবাদী সাজিয়ে আত্মসমর্পণ করেছে ওরা। সেই খবর ফলাও করে প্রচার করছে পুলিশ। যদিও লালফিতের ফাঁস এড়িয়ে শেষপর্যন্ত সরকারি প্রকল্পের সুযোগলাভ করেছেন নগণ্য সংখ্যক আত্মসমর্পণকারী।
মাওবাদীদের আত্মসমর্পণ ঘিরে গুরুতর বিতর্ক রয়েছে। যারা মাওবাদী হিসেবে আত্মসমর্পণ করছে তাদের মধ্যে একাংশ ভুয়ো মাওবাদী বলে অভিযোগ মানবাধিকার সংগঠনগুলির। আত্মসমর্পণ করা মাওবাদীদের জন্যে সরকারি পুনর্বাসন প্রকল্পের সুযোগ রয়েছে। একারণে সরকারি পুনর্বাসন প্রকল্পের সুযোগলাভ করতে ভুয়ো মাওবাদী হিসেবে অনেকক্ষেত্রেই আত্মসমর্পণের ঘটনা ঘটছে বলে মানবাধিকার কর্মীদের দাবি। তবে আত্মসমর্পণ করার পরেও মাওবাদীদের একাংশ সরকারি পুনর্বাসন প্রকল্পের আওতায় থাকা সুযোগ-সুবিধা লাভ করতে পারেনি। যারা পুনর্বাসন প্রকল্পের সুযোগ পায়নি তারা ভুয়ো মাওবাদী কিনা সরকার এনিয়ে মুখ খোলেনি। মাওবাদী অধ্যুষিত ছত্তীশগড়ে ২০১৮ সাল থেকে গতবছর পর্যন্ত মোট ১ হাজার ৪৬২জন মাওবাদী পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে। সরকারি পরিসংখ্যান অনুসারে, এদের মধ্যে মোটে ৩ শতাংশ সরকারি পুনর্বাসন প্রকল্পের সুযোগ-সুবিধা লাভ করেছে।
আত্মসমর্পণ করার পরে মাওবাদীরা পুনর্বাসন প্রকল্পের সুযোগ পাবে কিনা তা নির্ভর করছে রাজ্য সরকার গঠিত স্ক্রিনিং অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন কমিটি যার সংক্ষিপ্ত নাম এসআরসি তার ওপর। আত্মসমর্পণকারী এক হাজারের বেশি মাওবাদীর ভিতর এসআরসি-র ছাঁকনিতে মোটে ৪৭জন সরকারি পুনর্বাসন প্রকল্পের সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার যোগ্য। পুনর্বাসন প্রকল্প কতগুলি ক্যাটাগরিতে বিভক্ত। ক্যাটাগরি ওয়ান অনুসারে, আত্মসমর্পণকারী প্রথম সারির মাওবাদী নেতা হলে সেজন্যে বরাদ্দ ৫ লক্ষ। টু এ কিংবা টু বি-র মতো মাঝারি কিংবা নীচুতলার মাওবাদী আত্মসমর্পণ করলে সরকারি বরাদ্দ ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা। এছাড়া সরকার গঠিত কমিটি সুপারিশ করলে আত্মসমর্পণকারী মাওবাদীরা নিজস্ব বাড়ি তৈরির খাতে নগদ সরকারি সহায়তা পাবেন। এছাড়া তিন বছরের জন্যে মাসিক ৬ হাজার টাকা করে ভাতাও পাবেন।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক ইতিমধ্যে নির্দেশিকা জারি করে জানিয়েছে, পুনর্বাসন দেওয়ার আগে খতিয়ে দেখা হবে আত্মসমর্পণকারী মাওবাদীরা সত্যিই মাওবাদী ছিল কিনা। বস্তারের কর্মরত একাধিক মানবাধিকার সংগঠনের দাবি, মাওবাদীদের আত্মসমর্পণের খবর সরকার মাঝেমধ্যেই ঘটা করে প্রচার করছে। এধরনের খবরাখবর অধিকাংশ ক্ষেত্রে ভিত্তিহীন। মাওবাদী হিসেবে আত্মসমর্পণকারীদের মধ্যে অনেকেই আসলে ভুয়ো মাওবাদী। স্রে্ফ পুনর্বাসন প্রকল্পের সুবিধা আদায়ে ওরা আত্মসমর্পণের নাটক করছে।
এই পরিস্থিতিতে অন্ধ্রপ্রদেশ পুলিশ বুধবার দাবি করেছে, শীর্ষস্থানীয় মাওবাদী নেতা ভি রামা কৃষ্ণার নেতৃত্বে ৬০জন মাওবাদী আত্মসমর্পণ করেছে। এদের কাছ থেকে নগদ ৩৯ লক্ষ এবং অস্ত্রশস্ত্র্ উদ্ধার করা হয়েছে। ওই মাওবাদীরা কেন আত্মসমর্পণ করলো পুলিশ সেবিষয়ে এখনও কিছু জানায়নি। মাও-তত্ত্বে অনীহা নাকি পুনর্বাসনের সুযোগ পেতে নতুন করে মাওবাদীদের আত্মসমর্পণ সবপক্ষই এখনও এনিয়ে স্পিকটি নট।
