নিজস্ব প্রতিনিধি: রুপালি পর্দার বহু নায়ক নায়িকা তৃণমূলে নাম লিখিয়েছেন বহুদিন আগেই। কেউ সাংসদ, কেউ বিধায়ক, কেউ বা দলে গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন। তবে দলের অন্দরে কান পাতলে শোনা যায় অনেকেই নাকি অভিনেতা অভিনেত্রীদের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারছেন না। এমনকী প্রয়োজনের সময় তাঁদের পাশে পাওয়া যায় না বলেও একাংশের অভিযোগ। কিছুদিন আগে বসিরহাটের তৃণমূল সাংসদ অভিনেত্রী নুসরত জাহানকে দীর্ঘদিন এলাকার মানুষ পাশে পাচ্ছিলেন না বলে অভিযোগ ওঠে। আর এই আবহের মধ্যে তৃণমূলের এক ঝাঁক তারকা জনপ্রতিনিধিদের তীব্র কটাক্ষ করলেন শালবনির তৃণমূল বিধায়ক তথা রাজ্যের ক্রেতা সুরক্ষা দফতরের প্রতিমন্ত্রী শ্রীকান্ত মাহাতো।
শনিবার দলের কর্মীদের নিয়ে একটি জায়গায় ঘরোয়া আলোচনার ফাঁকে শ্রীকান্ত বলেন,” খারাপ লোককে ভাল বলছে দল। মন্ত্রীদের লোকে চোর বলছে। চোরেদের কথাই শুনছে দল। তাহলে আর আমরা কি করব! ভাল লোকেদের কথা শুনছে না। খারাপ লোকেদের কথা শুনছেন দলীয় নেতৃত্ব। দুর্বৃত্ত পরায়ণদের গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে”। এখানেই থেমে থাকেননি তিনি। দলের একাধিক সাংসদদের নাম উল্লেখ করে বিস্ফোরক ভঙ্গিতে তিনি বলেন,” সায়ন্তিকা-মিমি-নুসরত- সাযনীরা এখন দলের সম্পদ। ওরা লুটেপুটে খাচ্ছে। এরা দলের সম্পদ হলে তো দল করা যাবে না। পথ দেখতে হবে”। ইতিমধ্যেই শ্রীকান্ত মাহাতোর এই বক্তব্যের ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। এর পাশাপাশি তিনি আরও বলেছেন, গোটা বিষয়টি তিনি দলের শীর্ষ নেতৃত্ব অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সুব্রত বক্সীদের জানিয়েছেন। কিন্তু তারপরেও তাঁর কথায় গুরুত্ব দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। এদিকে ভাইরাল হওয়া শ্রীকান্তের কথোপকথন পৌঁছে গিয়েছে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে। এরপরই তাঁকে শো-কজ করা হয়। মেদিনীপুর এবং ঘাটাল সাংগঠনিক জেলার কো-অর্ডিনেটর অজিত মাইতি তাঁকে শো-কজ করেছেন। স্বাভাবিকভাবেই শ্রীকান্তর এই বক্তব্যে অস্বস্তিতে পড়েছে তৃণমূল। পার্থ চট্টোপাধ্যায়, অনুব্রত কাণ্ডের জেরে এমনিতেই বিড়ম্বনা বেড়েছে তৃণমূল। বিষয়টি নিয়ে তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন,” যা বলার দলের অন্দরে নেতৃত্বের কাছে বলা উচিত। মন্ত্রী-বিধায়কেরা দায়িত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন। তাই কোথায় কি বলছেন বুঝে বলতে হবে।”
যদিও বিষয়টি নিয়ে তৃণমূল নেতৃত্ব নড়ে চড়ে বসতেই এ কথা বলার জন্য ক্ষমা চেয়ে নিয়েছেন শ্রীকান্ত। তিনি বলেন,” আমি দলের অনুগত সৈনিক। বিক্ষুব্ধ হওয়ার প্রশ্নই নেই। তবে দলের সবকিছু আমার মনের মতো হবে না। ঘরোয়া আলোচনায় এটাই বলেছিলাম। আমার অনুরোধ আমাকে যেন ভুল না বোঝা হয়”। রবিবার শো-কজের জবাবী চিঠিতে এমনটাই জানিয়েছেন তিনি। তৃণমূল সূত্রে খবর, এই জবাবী চিঠি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে পাঠানো হবে। এদিকে ঘটনায় ক্ষুব্ধ নুসরত, জুন মালিয়ারা। এ প্রসঙ্গে নুসরত জাহান সংবাদ মাধ্যমে বলেন, “উনি নিজের বুদ্ধি-বিবেচনায় এ কথা বলেছেন। দলের কে সম্পদ, কে সম্পদ নয়, সেটা মানুষ ঠিক করবেন। আমরা এখানে মানুষের সেবা করতে এসেছি। ওঁর মন্তব্য নিয়ে আমাদের কিছু যায়-আসে না। বেশি কাজ আর কম কথা বলা উচিত।” একইভাবে জুন মালিয়া বলেন, “উনি যে ভুল কথা বলেছেন, সেটা উনি জানেন। এই বক্তব্যের জন্য তাঁকে সঙ্গে সঙ্গে কারণ দর্শাতে বলেছে দল। এর জন্য দলকে অনেক ধন্যবাদ। উনি এক জন মন্ত্রীও বটে। আমি আশা করব এই ধরনের মন্তব্য উনি আর করবেন না।”
এখন প্রশ্ন এমন কথা হঠাৎ কেন বলতে গেলেন শ্রীকান্ত? তিনি টানা তিনবারের বিধায়ক। মন্ত্রীও হয়েছেন। কিন্তু তাঁর যে চিত্রতারকাদের নিয়ে ঘোরতর আপত্তি রয়েছে সেটা বুঝিয়ে দিয়েছেন তিনি। তৃণমূলের একাংশের বক্তব্য, দলের বহু সক্রিয় কর্মী বহুদিন ধরে খাটাখাটনি করেও নির্বাচনে টিকিট পান না। অথচ রুপালি পর্দার নায়ক নায়িকারা অনায়াসে দলে যোগদান করে টিকিট পেয়ে যান। যা নিয়ে অনেকেই ক্ষুব্ধ বলে খবর। তবে কি সেই অংশের হয়েই দলের কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে ঘরোয়া আলোচনায় একথা বলতে শোনা গিয়েছে শ্রীকান্তকে? এই প্রশ্ন উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। এই অবস্থায় তৃণমূল শ্রীকান্তের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেয় কিনা এখন সেটাই দেখার।
