নিজস্ব প্রতিনিধি: ফের খবরের শিরোনামে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার নন্দীগ্রাম। গত বিধানসভা নির্বাচনে গোটা রাজ্যের মানুষের নজর ছিল নন্দীগ্রামের ফলের দিকে। সেই নির্বাচনে শুভেন্দু অধিকারী বিজেপির টিকিটে লড়াই করে হারিয়ে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। যা নিয়ে এখনও চর্চা অব্যাহত।
গত বিধানসভা নির্বাচনের আগে থেকেই নন্দীগ্রাম বেশ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। প্রচারে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী পায়ে চোট পাওয়ার পর গোটা বিষয়টি অন্য মাত্রা পায়। তৃণমূলের অভিযোগ বিজেপি কর্মীদের একাংশ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে মুখ্যমন্ত্রীর পা ভেঙে দিয়েছিলেন। এরপর এক বছরের বেশি সময় কেটে গিয়েছে। কিন্তু পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে নতুন করে নন্দীগ্রাম নিয়ে উত্তেজনার পারদ চড়তে শুরু করেছে। ২০০৭ সালের ১৪ মার্চের পাশাপাশি ১০ নভেম্বর তৎকালীন বাম সরকারের পুলিশ নন্দীগ্রামে বেশ কিছু মানুষকে গুলি চালিয়ে হত্যা করেছিল বলে অভিযোগ ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির। সেই থেকে ১০ নভেম্বর দিনটিকেও নন্দীগ্রাম দিবস হিসেবে সেখানে পালন করা হয়ে থাকে। গতবারের মতো এবারও বিজেপি ও তৃণমূল পৃথকভাবে নন্দীগ্রাম দিবস পালন করে। আর তার জেরে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এরপর বৃহস্পতিবার রাতে নন্দীগ্রামের গোকুলনগরের করপল্লিতে গভীর রাতে তৃণমূলের শহিদ মঞ্চে আগুন লাগানোর ঘটনা ঘটে। যে ঘটনা ঘিরে শুক্রবার সকাল থেকে নতুন করে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে নন্দীগ্রাম। ওই অঞ্চলে তৃণমূল পথ অবরোধ করে। আর সেখানে ছুটে যান তৃণমূলের রাজ্য নেতৃত্ব। সেখানে পূর্ব মেদিনীপুরের প্রবীণ তৃণমূল নেতা তথা রাজ্যের মন্ত্রী অখিল গিরি বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে নজিরবিহীন আক্রমণ করে বলেন, মেরে ওর হাত ভেঙে দেব। এখানেই থামেননি তিনি, রীতিমতো হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চাইছেন না বলেই তিনি চুপ করে আছেন। না হলে তিনি শুভেন্দুর পাঁজরও ভেঙে দিতেন। আর বিজেপির মদতেই ওই শহিদ বেদি পোড়ানো হয়েছে বলে তৃণমূলের অভিযোগ।
তৃণমূলের তরফে পূর্ব মেদিনীপুরের একাংশে বিশেষ দায়িত্ব পেয়েছেন দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ। দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই বারবার শুভেন্দুর জেলায় ছুটে যাচ্ছেন কুণাল। সেই সঙ্গে তীব্র আক্রমণ করছেন নন্দীগ্রামের বিধায়ককে। চুপ করে বসে নেই শুভেন্দুও। তিনিও নন্দীগ্রামে কর্মসূচির সংখ্যা বাড়িয়ে দিয়েছেন। কুণালের দাবি পঞ্চায়েত নির্বাচনে নন্দীগ্রামে বিজেপি ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে যাবে। উল্টোদিকে নন্দীগ্রামের বিজেপি নেতা মেঘনাদ পালের দাবি, অধিকাংশ আসনে জিতে পঞ্চায়েতে নন্দীগ্রাম বিজেপি তাদের দখলেই রেখে দেবে। আর এই দাবি পাল্টা দাবি ঘিরে নতুন করে সরগরম হয়ে উঠেছে জমি আন্দোলনের আঁতুরঘর পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রাম। পরিস্থিতি বেশ উত্তপ্ত হওয়ায় সেখানকার বহু অঞ্চলে পুলিশি পাহারা বাড়ানো হয়েছে।
স্থানীয় মানুষজন মনে করছেন পঞ্চায়েত নির্বাচন যত এগিয়ে আসবে ততই আরও উত্তপ্ত হবে নন্দীগ্রাম। ইতিমধ্যেই নন্দীগ্রামের পঞ্চায়েত নির্বাচন বিজেপি ও তৃণমূলের কাছে প্রেস্টিজ ফাইট হয়ে দাঁড়িয়েছে। পঞ্চায়েতে নন্দীগ্রামে ভাল ফল করলে তৃণমূল বলতে পারবে বিধানসভা নির্বাচনের ফলটা একটা অঘটন ছাড়া আর কিছুই নয়। উল্টোদিকে নন্দীগ্রামে ভাল ফল করলে বিজেপি বুঝিয়ে দিতে পারবে তাদের ভিত কতটা শক্ত সেখানে। তাই সাম্প্রতিক প্রেক্ষাপট বলছে গত বিধানসভা নির্বাচনের মতো এবারেও নন্দীগ্রামের পঞ্চায়েত নির্বাচনের লড়াইটা তৃণমূল বনাম শুভেন্দু হয়ে উঠেছে। আর সেই মর্যাদার লড়াইয়ে কারা শেষ হাসি হাসে, এখন সেটাই দেখার।