নিজস্ব প্রতিনিধি: বামেদের ৩৪ বছরের শাসন শেষ করেছিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূল সরকারের কাছে রাজ্যবাসীর বহু প্রত্যাশা ছিল। তার অনেকটাই মিটিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে তার সঙ্গে তৃণমূল সরকারের কাছ থেকে যা আশা করেনি রাজ্যবাসী সেটাও সবাই প্রত্যক্ষ করছেন গত ১১ বছর ধরে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে সীমাহীন দুর্নীতির অভিযোগ যেন আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রেখেছে তৃণমূল সরকারকে। সেই জায়গা থেকে বের হয়ে আসা কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছে তৃণমূলের কাছে। একুশের বিধানসভা নির্বাচনে রীতিমতো ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে ফের ক্ষমতায় এসেছে তৃণমূল। বিধানসভায় বাম- কংগ্রেস শূন্য হয়ে গিয়েছে। বিজেপি প্রধান বিরোধী দলের তকমা পেলেও তীব্র গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে চূর্ণ-বিচূর্ণ তারা। কিন্তু তা সত্ত্বেও তৃণমূলকে এখন মাথা নীচু করে চলতে হচ্ছে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই। তৃণমূলের মহাসচিব দলকে প্রবল অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মধ্যে ঠেলে দিয়েছেন।
তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর প্রথম কয়েকটি বছর মোটের উপর সব ঠিকঠাকই চলছিল। কোথাও কোনও বড় অসঙ্গতি দেখা দেয়নি। তবে সারদা ও নারদা কাণ্ডে তৃণমূলের প্রথম সারির বেশ কয়েকজন নেতা-মন্ত্রীর নাম প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই যেন সেই দুর্নীতির অভিযোগের ‘ফ্ল্যাড-গেট’ খুলে গেল। এরপর থেকে একের পর এক দুর্নীতির অভিযোগ উঠতে শুরু করল শাসক দলের নেতাকর্মীদের একাংশের বিরুদ্ধে। সারদা, নারদা, রোজ ভ্যালি-সহ একাধিক চিটফান্ড কাণ্ড তো আছেই, সেই সঙ্গে তালিকায় যুক্ত হয়েছে কয়লা পাচার, গরু পাচার, বালি পাচার, আমফান দুর্নীতি, আবাস যোজনা-সহ একাধিক প্রকল্পের ক্ষেত্রে কাটমানি দুর্নীতি ইত্যাদি। একটা সময় কাটমানি নিয়ে ৭৫ ভাগ আর ২৫ ভাগের প্রসঙ্গ উঠেছিল সর্বোচ্চ নেতৃত্বের মুখ থেকে। যে ঘটনায় তখন শোরগোল পড়ে যায় রাজ্য রাজনীতিতে। আর তালিকায় সর্বশেষ সংযোজন শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি। স্বাভাবিকভাবেই তৃণমূলের গত ১১ বছরের শাসনকাল নিয়ে বহু প্রশ্ন উঠছে। দলের নেতাদের একাংশের ব্যাঙ্ক ব্যাল্যান্স যেভাবে ফুলে ফেঁপে উঠেছে তা দেখে চক্ষু চড়কগাছ সবার। জেলা স্তরে নীচুতলার বহু তৃণমূল নেতার প্রাসাদোপম বাড়ি দেখে চমকে উঠতে হয়। কীভাবে ঘটল এসব? উত্তরটা সকলেই জানেন। আর পার্থ চট্টোপাধ্যায় কাণ্ডের পর সেই উত্তরটা রাজ্যবাসীর কাছে আরও স্পষ্ট হয়েছে।
তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর থেকেই কলকাতা তথা রাজ্য জুড়ে পোস্টার, ব্যানার দেওয়ালে জ্বলজ্বল করত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি, আর নিচে ক্যাপশন হিসেবে লেখা ‘সততার প্রতীক’। পরবর্তীকালে বিষয়টি নিয়ে সিপিএম তথা বামেরা প্রচুর কটাক্ষ করতে শুরু করে তৃণমূলকে। আসলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাদাসিধে আর অনাড়ম্বর জীবনের কথা গোটা দেশ জানে। তাই তৃণমূলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা মুখ্যমন্ত্রী সম্পর্কে সে কথা লিখে ভুল কিছু করেননি। কিন্তু যেভাবে দলের নেতাকর্মীদের একাংশের বিরুদ্ধে পাহাড়প্রমাণ দুর্নীতির অভিযোগ উঠছে, তাতে প্রবল অস্বস্তিতে পড়তে হচ্ছে খোদ মুখ্যমন্ত্রীকে। এমনকী এসব ঘটনার জন্য মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবি পর্যন্ত তুলেছেন বামেরা। অর্থাৎ সবমিলিয়ে এটা স্পষ্ট দুর্নীতির অভিযোগে তৃণমূল রীতিমতো হাঁসফাঁস করছে। এই জায়গা থেকে জোড়াফুল শিবির কীভাবে বেরোতে পারে, এখন সেটাই দেখার।