ভোটার লিস্টে শুধু তৃণমূল সমর্থকদের নাম তুলতে হবে! বিধায়কের নিদানে উঠছে প্রশ্ন

ভোটার লিস্টে শুধু তৃণমূল সমর্থকদের নাম তুলতে হবে! বিধায়কের নিদানে উঠছে প্রশ্ন

নিজস্ব প্রতিনিধি: কয়েক মাসের মধ্যেই রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচন। তার আগে ভোটার লিস্টে নাম তোলার কাজ চলছে। ইতিমধ্যেই খসড়া তালিকা প্রকাশ করেছেন নির্বাচন কমিশন। তবে চূড়ান্ত তালিকা বের হবে জানুয়ারি মাসে। এই পরিস্থিতিতে বর্ধমান দক্ষিণ কেন্দ্রের তৃণমূল বিধায়ক খোকন দাস যে মন্তব্য করেছেন তাতে বেজায় অস্বস্তিতে পড়েছে শাসক দল। দলীয় সভায় হাজির থেকে তিনি স্পষ্ট বলেছেন, ভোটার লিস্টে তাঁদের নামটাই তুলতে হবে যারা তৃণমূলের পরিবার। এক্সট্রা কোনও লোক থাকার দরকার নেই। ইতিমধ্যেই এই ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। সেই ভিডিওতে খোকন দাসকে এ কথাও বলতে শোনা গিয়েছে যে, “নতুন লোক তো আসছেই। নতুন লোক মানে তো বুঝতে পারছেন। সব বাংলাদেশের লোক আসছে। তাদের নাম বেশি তুলতে গেলে আরও ক্ষতি।” সেই সঙ্গে তিনি একটি বিশেষ ধর্মীয় সম্প্রদায়ের কথা উল্লেখ করে বলেছেন, তারা তো বেশিটাই ভোট দিয়ে দেয় বিজেপিকে। সেই সূত্রেই তাঁর স্পষ্ট নিদান, ভোটার তালিকায় তাঁদেরই নাম তুলবেন যারা তৃণমূলের লোক বা দলের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন।

স্বাভাবিকভাবেই তৃণমূল বিধায়কের এমন মন্তব্যে তীব্র বিতর্ক শুরু হয়েছে। বিরোধীদের দাবি এভাবেই ভোটে জিততে চায় তৃণমূল। এখন থেকে ভোটার লিস্টে কারচুপি করে তৃণমূল পঞ্চায়েত নির্বাচনে জিততে চায় বলে অভিযোগ করছে বিরোধীরা। মাত্র কিছুদিন আগের কথা। নির্বাচন কমিশনের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বলতে শোনা গিয়েছে, কারও নাম যেন বাদ না যায়। আমি রিকোয়েস্ট করব সবার নামটা তুলবেন। অন্য ধর্মের লোক বলে কারুর নাম দয়া করে বাদ দেবেন না। মুখ্যমন্ত্রী যেখানে সবার নাম তোলার কথা বলেছেন সেখানে উল্টোটাই বলতে শোনা গিয়েছে তৃণমূল বিধায়ককে। বিজেপির দাবি যে ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মানুষ বেশি মাত্রায় তাদের ভোট দেয় বলে দলের বিশ্বাস, তাদের নাম তুলতে বারণ করে দিয়েছেন তৃণমূল বিধায়ক। 

বাম জমানা থেকেই ভোটার লিস্ট নিয়ে কারচুপির অভিযোগ করে আসছেন বিরোধীরা। সেই সময় বিরোধীদের অভিযোগ ছিল ভোটার লিস্টে প্রচুর ভুয়ো নাম ঢুকিয়ে রেখেছে সিপিএম। যাদের সম্পর্কে বলা হতো ‘ভুতুড়ে ভোটার’। পরবর্তীকালে পশ্চিমবঙ্গে পালাবদল হয়েছে। ২০১১ সালে রাজ্যে ক্ষমতায় এসেছে তৃণমূল। কিন্তু ভোটার লিস্ট নিয়ে শাসক দলের বিরুদ্ধে বিরোধীদের সেই একই অভিযোগ রয়ে গিয়েছে। রাজনৈতিক মহল মনে করছে এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচন তৃণমূলের কাছে কঠিন পরীক্ষা হতে চলেছে। তার কারণ বিগত কয়েক মাস ধরে বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে একাধিক তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে। আর শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে রাজ্য সরকারের যে মুখ পুড়েছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এই অবস্থায় কয়েক মাসের মধ্যে হতে চলেছে পঞ্চায়েত নির্বাচন। ঠিক তার আগে ভোটার লিস্টে নাম তোলা নিয়ে তৃণমূল বিধায়কের মন্তব্যে শাসক দল যে বেজায় অস্বস্তিতে পড়েছে তা স্পষ্ট।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *