নিজস্ব প্রতিনিধি: বাম-কংগ্রেস বহুদিন ধরেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে বিজেপির সঙ্গে ‘সেটিং’ করার অভিযোগ তুলে সরব হয়েছে। এরপর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠকের পর সেই অভিযোগ আরও উচ্চগ্রামে নিয়ে যায় তারা। এবার বিরোধীদের ‘সেটিং’ তত্ত্ব নিয়ে তাদের পাল্টা নিশানা করতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী যা বলেছেন তা নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে চর্চা এখন তুঙ্গে। উল্লেখ্য কিছু দিন আগেই দিল্লিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে রাজ্যের পাওনা-গণ্ডা নিয়ে বৈঠক করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই বৈঠকের প্রসঙ্গ তুলে বিরোধীরা মুখ্যমন্ত্রীকে কটাক্ষ করে বলছেন তিনি বিজেপির সঙ্গে ‘সেটিং’ করতে গিয়েছিলেন।
বুধবার বিষয়টি নিয়ে বিরোধীদের পাল্টা জবাব দিতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আমি কারও কাছে সেটিং করতে যাই না। সবাই আমার কাছে সেটিং করতে আসে৷” সেই সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, “আমি রাজ্যের প্রাপ্য চাইতে গিয়েছিলাম, সেটাকে নাকি সেটিং বলে! ভিক্ষা চাইতে যাইনি, নিজেদের প্রাপ্য চাইতে গিয়েছিলাম। রাজ্যের প্রাপ্য চাইতে গেলে সেটিং কি করে হয়? অন্য রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরাও তো প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে যান।” সেই সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীকে বিষয়টি নিয়ে আরও বলতে শোনা যায়, “আমি সেটিং করতে পারিনি বলেই আমার মাথা থেকে পা, চোখ থেকে ব্রেন, এমন কোনও জায়গা নেই যেখানে মার খাইনি৷” কিন্তু প্রশ্ন একটাই, মুখ্যমন্ত্রী কেন বললেন যে অন্যরা তাঁর সঙ্গে সেটিং করতে আসে? এই বক্তব্যের অন্তর্নিহিত অর্থ খোঁজার চেষ্টা করছেন রাজনীতির কারবারিরা।
রাজনীতির মহলের একাংশের বক্তব্য, কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে তাঁর যে কতটা প্রভাব রয়েছে সম্ভবত সে কথাই এভাবে বলতে চেয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিরোধী জোটের প্রার্থী কে হবেন সেটা মমতাই ঠিক করে দিয়েছিলেন। চব্বিশের লোকসভা নির্বাচনের আগে বিরোধী জোট গঠনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে তৎপর তিনি। এ বিষয়ে বিজেপি বিরোধীরা সব সময় মমতার পরামর্শ নিয়ে থাকেন। সবমিলিয়ে কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে তৃণমূলের গুরুত্ব আগের চেয়ে বহুগুণে বেড়ে গিয়েছে। গত বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপিকে নাস্তানাবুদ করার পর জাতীয় রাজনীতিতে অন্যতম আলোচিত নাম হয়ে উঠেছেন মমতা। তাই রাজনীতির কারবারিরা মনে করছেন সম্ভবত সেই সূত্রেই মমতা বলেছেন তাঁর সঙ্গে সবাই ‘সেটিং’ করতে আসে। যদিও বাম-কংগ্রেসের পাল্টা অভিযোগ, এতেই প্রমাণ হয়ে যাচ্ছে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বিজেপির বোঝাপড়া রয়েছে। তাই তিনি মুখ ফস্কে বলে ফেলেছেন তাঁর সঙ্গে অন্যরা ‘সেটিং’ করতে আসে। সেক্ষেত্রে বিজেপি-তৃণমূলের মধ্যে আঁতাতের অভিযোগ তুলে ফের সরব হয়েছে বমেরা। তবে মুখ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্যের জেরে যে যুক্তিই উঠে আসুক না কেন, বিষয়টি রাজ্য রাজনীতিতে নিঃসন্দেহে অন্যতম আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ে দাঁড়িয়েছে।