নিজস্ব প্রতিনিধি: পঞ্চায়েত নির্বাচনের খুব বেশি দেরি নেই, এই ইঙ্গিত একাধিকবার দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাই বিভিন্ন সময়ে জেলা সফরে গিয়ে সবাইকে দ্রুত কাজ শেষের কথা বলেছেন তিনি। এই পরিস্থিতিতে পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রস্তুতি পর্বের কাজ প্রায় শেষের পথে এনে ফেলেছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন। একটি সূত্রে জানা যাচ্ছে পঞ্চায়েত নির্বাচন আগামী বছরের গোড়ার দিকেই হতে পারে। তবে সেটা সম্ভব না হলে পঞ্চায়েত এপ্রিলের পরই হবে। কারণ ফেব্রুয়ারি থেকেই শুরু হয়ে যাবে মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার পর্ব। সেখানে মাইক বাজিয়ে প্রচার করা হলে সমস্যায় পড়বে পরীক্ষার্থীরা। এই পরিস্থিতিতে রাজ্য নির্বাচন কমিশন সূত্রে খবর, গতবারের মতো এবারও রাজ্য পুলিশ দিয়েই পঞ্চায়েত নির্বাচন হতে চলেছে। সেই সঙ্গে জানা গিয়েছে পঞ্চায়েত ভোটের সঙ্গেই হাওড়া পুরনিগমের ভোট হতে পারে।
স্বাভাবিকভাবেই রাজ্য পুলিশ দিয়ে নির্বাচন হলে বিরোধীরা যে সেটা মানতে চাইবে না, তা স্পষ্ট। কারণ পুরসভার নির্বাচনগুলিতে ব্যাপক রিগিং এবং সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলে সরব হয়েছে বিরোধীরা। বিজেপি, সিপিএম ও কংগ্রেসের অভিযোগ ভোট লুট করে জয় পাচ্ছে তৃণমূল। তাই এখন থেকেই কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে পঞ্চায়েত নির্বাচনের দাবি জানাতে শুরু করেছে তারা। যদিও রাজ্য পুলিশ দিয়েই নির্বাচন করার ষোলো আনা সম্ভাবনা রয়েছে। সেক্ষেত্রে বিরোধীদের দাবি ধোপে টিকবে না। এর আগেও দেখা গিয়েছে স্থানীয় নির্বাচনে কেন্দ্রীয় বাহিনী চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে বিরোধীরা। এবারও সেই একই ঘটনা ঘটবে কিনা সেদিকে চোখ থাকবে রাজনৈতিক মহলের।
কিন্তু প্রশ্ন হল বিরোধীদের এই দাবি কেন মেনে নিচ্ছে না রাজ্য প্রশাসন? ওয়াকিবহাল মহল মনে করিয়ে দিচ্ছে বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন রাজ্যে প্রধান বিরোধী নেত্রীর ভূমিকায় ছিলেন, সেই সময় পঞ্চায়েত বা পুরসভা নির্বাচনগুলিতে তিনি বারবার কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের দাবি করতেন। এমনকী ২০১০ সালের কলকাতার পাশাপাশি একাধিক পুরসভার নির্বাচনে তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকার রাজ্য পুলিশের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় বাহিনীকে ব্যবহার করেছিল। তাই প্রশ্ন, তৃণমূল এখন কেন কেন্দ্রীয় বাহিনী চায় না?
এমনিতেই পঞ্চায়েত নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি হিংসার ঘটনা ঘটে। রাজ্যের অতীত ইতিহাস সেটাই বলছে। সেই জায়গা থেকে বিরোধীদের দাবি মেনে নিশ্চিদ্র নিরাপত্তার ঘেরাটোপে যদি পঞ্চায়েত ভোট সুষ্ঠুভাবে রাজ্য নির্বাচন কমিশন সংঘটিত করে, তাতে অসুবিধা কোথায়? যথারীতি এই প্রশ্ন তুলছেন রাজনীতির কারবারিরা। সমালোচকরা বলছেন আসলে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের কিছু করার নেই। তাদের হাত-পা বাঁধা। তাঁদের দাবি, খাতায় কলমে রাজ্য নির্বাচন কমিশন স্বশাসিত সংস্থা হলেও নবান্নেল নির্দেশেই তারা পরিচালিত হয়ে থাকে। অতীতে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে বহু প্রশ্ন ওঠে। বিরোধীদের অভিযোগ, রাজ্য নির্বাচন কমিশনের উদাসীনতায় অতীতে পুরসভা এবং পঞ্চায়েত নির্বাচন কার্যত প্রহসনে পরিণত হয়েছিল। সেই জায়গা থেকে এবারেও রাজ্য পুলিশ দিয়েই পঞ্চায়েত নির্বাচন হতে চলেছে বলে খবর। সেক্ষেত্রে তৃণমূল বিরোধী দলগুলি এ বিষয়ে কি পদক্ষেপ করে সেটাই দেখার পালা।