নিজস্ব প্রতিনিধি: মাসখানেক আগেও এ কথা বললে কেউ বিশ্বাস করতে চাইতেন না। তৃণমূলের দুই হেভিওয়েট নেতা কিনা রাজকীয় জীবনযাপন ছেড়ে জেলের ভাত খাচ্ছেন? হ্যাঁ, অবিশ্বাস্য হলেও এটাই সত্যি। ইডির হাতে গ্রেফতার হওয়া পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হওয়া অনুব্রত মণ্ডলদের এখন স্থান হয়েছে জেলে। যতদিন না জামিন মিলছে ততদিন জেলেই থাকতে হবে তাঁদের। এতদিন যা ভেবেছেন সেভাবেই চলেছেন তাঁরা। কিন্তু রাতারাতি পরিস্থিতির বদল হয়েছে। দুর্নীতি কাণ্ডে নাম জড়িয়েছে তৃণমূলের সদ্য প্রাক্তন মহাসচিব এবং বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতির।
বুধবার আসানসোলের বিশেষ সিবিআই আদালত অনুব্রত মণ্ডলকে ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে। এদিন অনুব্রতকে আসানসোল জেলে পাঠানো হয়। সেখানে জেলের ভিতর যে হাসপাতাল তার দুটি ঘরের একটিতে রয়েছেন অনুব্রত। এই ঘরের লাগোয়া শৌচাগারে কমোড না থাকায় অসুবিধার মধ্যে পড়েছেন একাধিক শারীরিক সমস্যায় ভোগা অনুব্রত মণ্ডল। জেলের অন্যান্য বন্দিদের সঙ্গে রুটি, সবজি খেতে হচ্ছে তাঁকে। একই অবস্থার মুখোমুখি হতে হয়েছে পার্থকেও। জেল হেফাজতের পর তাঁকে জেলের ঘরের মেঝেতেই শুতে হয়েছিল। ছিল না পৃথক শৌচালয়ের ব্যবস্থা। যদিও পরে পার্থের অনুরোধে তাঁকে একটি ক্যাম্প খাট দেওয়া হয় শোওয়ার জন্য। যে বিলাসবহুল জীবনযাপন করতে তাঁরা অভ্যস্ত, সেখানে এখন তাঁদের এই পরিণতি!
শারীরিক অসুস্থতার যুক্তি তুলে ধরে পার্থ এবং অনুব্রতর জামিন চেয়েছিলেন তাঁদের আইনজীবীরা। কিন্তু প্রভাবশালী তত্ত্বের কথা তুলে ধরে সিবিআই ও ইডির আইনজীবীরা সেই যুক্তি নস্যাৎ করে দিয়েছেন আদালতে। তাই শত চেষ্টাতেও জামিন পাননি তাঁরা। মনে রাখতে হবে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উত্থানের আগে তৃণমূলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পর যে দু’জন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় ছিলেন তাঁরা হলেন মুকুল রায় এবং পার্থ চট্টোপাধ্যায়। দীর্ঘদিন ধরে পার্থ তৃণমূলের মহাসচিব হিসেবে ছিলেন। বেশ ক’টি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০০১ সাল থেকে বেহালা পশ্চিম বিধানসভা কেন্দ্রে টানা জিতে আসা পার্থের গুরুত্ব ও সম্মান দলের মধ্যে দিন দিন বেড়েছে। একই কথা প্রযোজ্য অনুব্রতর ক্ষেত্রেও। দল ক্ষমতায় আসার পর তিনিই একমাত্র জেলা সভাপতি যিনি রাজ্য জুড়ে দলের অন্যতম প্রধান মুখ হয়ে উঠতে পেরেছেন। তৃণমূলের অন্য কোনও জেলা সভাপতির এত গুরুত্ব নেই দলে। বহু মন্ত্রীর থেকে দলে অনুব্রতর গুরুত্ব অনেক বেশি বলেই রাজনৈতিক মহল মনে করে। সেই অবস্থা থেকে আজ কোথায় রয়েছেন পার্থ এবং অনুব্রত? তৃণমূলের প্রাক্তন মহাসচিব ও বীরভূমের বেতাজ বাদশার এমন পরিণতিতে তৃণমূলের অস্বস্তি আরও বেড়ে গিয়েছে। তাই দেখা যাচ্ছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের বারবার সতর্ক করছেন যাতে তাঁরা কোনও রকম দুর্নীতিতে জড়িয়ে না পড়েন। তাই এটা স্পষ্ট এ বিষয়ে দল এখন অনেক বেশি সতর্ক। তাই পার্থ-অনুব্রতর জেল যাত্রা অনেক প্রশ্ন তুলে দিয়ে গেল রাজ্য রাজনীতিতে।