নিজস্ব প্রতিনিধি: আন্তর্জাতিক মানচিত্রে ভারত এখন অনেক বেশি প্রভাবশালী দেশ হয়ে উঠেছে। এমনটাই মনে করে রাশিয়া। স্বাভাবিকভাবেই রাশিয়া যে দাবি করছে তাতে বিশ্বে ভারতের গুরুত্ব আগের চেয়ে আরও বেড়ে গেল। উল্লেখ্য রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে ভারতকে স্থায়ী সদস্য হিসেবে দেখতে চায় রাশিয়া। আর সেই কারণেই আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ভারতকে নিয়ে নতুন করে চর্চা শুরু হয়েছে।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতিতে ভারতের ভূমিকায় মস্কো যে কতটা খুশি, তা ফের বোঝা গেল। ভারত যে তাদের সাত দশকের পুরনো বন্ধু, সেটা আবার স্পষ্ট করল রাশিয়া। এবার রাষ্ট্র সংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ভারতের জন্য স্থায়ী আসন চেয়ে দরবার করেছে মস্কো। যা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে। কোন যুক্তিতে এই আবেদন করেছে রাশিয়া? বিষয়টি নিয়ে রাশিয়া জানিয়েছে আন্তর্জাতিক স্তরে ভারত অত্যন্ত প্রভাবশালী একটি দেশ। ভারতের অর্থনৈতিক শক্তি সমীহ করার মতো। তাই নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য হিসেবে ভারতকে কেন অন্তর্ভুক্ত করা হবে না? এই প্রশ্ন তুলেই ভারতকে সেখানে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি তুলেছে মস্কো। এর আগে নিরাপত্তা পরিষদে সংস্কারের দাবি করেছে ভারত। এবার এই ইস্যুতে ভারতের পাশে দাঁড়াল মস্কো।
বিষয়টি নিয়ে রাশিয়ার বিদেশমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ বলেন,”অর্থনীতির নিরিখে ভারত যে বিশ্বের প্রথম সারির দেশগুলির মধ্যে রয়েছে, তা নিয়ে আমরা নিশ্চিত। ভারতকে অন্যতম চালিকাশক্তি বলাও যেতে পারে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সমস্যা মেটাতে ভারতের প্রচুর কূটনৈতিক অভিজ্ঞতা রয়েছে। জনসংখ্যার নিরিখে ভারত শীঘ্রই বিশ্বের এক নম্বর দেশ হতে চলেছে। তাই পরিষদের স্থায়ী সদস্য হিসেবে ভারতকে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।” গত সপ্তাহে মস্কোর একটি অনুষ্ঠানে এমনটাই জানিয়েছেন রাশিয়ার বিদেশমন্ত্রী। সেখানে তিনি আরও বলেন, “দক্ষিণ এশিয়ায় এসসিও-র মতো পরিকাঠামোর অংশ ভারত। রাষ্ট্রসঙ্ঘের কাজে বরাবরই সক্রিয়ভাবে অংশ নেয় নয়াদিল্লি।”
পাঁচ সদস্যের নিরাপত্তা পরিষদে স্থায়ী সদস্য পদ পেতে চায় ভারত। যা নিয়ে বহুদিন ধরেই চেষ্টা করছে নয়াদিল্লি। ভারতের এই দাবিকে সমর্থন জানিয়েছে আমেরিকা, ব্রিটেন, ফ্রান্স ও রাশিয়া। কিন্তু চিন কিছুতেই তাতে সহমত হচ্ছে না। গত জুলাই মাসে লোকসভার বাদল অধিবেশনে এই বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করেছিলেন ডিএমকে সাংসদ পি ভেলুস্বামী। নিরাপত্তা পরিষদে স্থায়ী সদস্য পদ পেতে ভারত কি চেষ্টা করছে সেই বিষয়টি জানতে চেয়েছিলেন তিনি। তখন এর উত্তরে বিদেশমন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী ভি মুরলিধরণ জানিয়েছিলেন, নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচটি দেশের মধ্যে চার সদস্য ভারতের দাবিকে সমর্থন করছে। আর নিরাপত্তা পরিষদে সংস্কার আনতে চিনের সঙ্গেও আলোচনা চালানো হচ্ছে।
তবে রাশিয়া যেভাবে এই দাবি তুলল, তা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে। উল্লেখ্য আমেরিকার পাশাপাশি পশ্চিমী দেশগুলির চোখরাঙানি উপেক্ষা করে রাশিয়ার কাছ থেকে ধারাবাহিকভাবে তেল আমদানি করে চলেছে নয়াদিল্লি। এতে রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক আরও নিবিড় হয়েছে। এছাড়া রাষ্ট্রসঙ্ঘে রাশিয়ার বিরুদ্ধে বিভিন্ন দেশগুলির আনা প্রস্তাবের পক্ষে ভারত ভোট দেয়নি। এরপরই নিরাপত্তা পরিষদে ভারতের জন্য স্থায়ী আসন চেয়ে দরবার করল রাশিয়া। তাই আগামী দিনে রাষ্ট্রসংঘ বিষয়টি নিয়ে কি পদক্ষেপ করে এখন সেটাই দেখার।
