নিজস্ব প্রতিনিধি: রাজ্যে গত শিল্প সম্মেলনের পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেছেন বিপুল অঙ্কের লগ্নি হবে বাংলায়। কিন্তু মুখে বলা আর বাস্তবে হওয়ার মধ্যে বহু ফারাক রয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে লগ্নি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে দেশের মধ্যে প্রথম দশেও জায়গা পায়নি পশ্চিমবঙ্গ। সেখানে প্রথম পাঁচে রয়েছে অন্ধ্রপ্রদেশ, ওড়িশা, মহারাষ্ট্র, গুজরাট ও রাজস্থান। এমনকী লগ্নি টানার ক্ষেত্রে প্রতিবেশী ঝাড়খণ্ডও বাংলার থেকে আগে রয়েছে। যে ঘটনা বাংলার পক্ষে একেবারেই ভাল কথা নয়। অথচ রাজ্যে তৃতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারবার বলেছেন তাঁর প্রধান লক্ষ্য শিল্প ও কর্মসংস্থান। এই পরিস্থিতিতে মেদিনীপুর সফরে গিয়ে একটি সরকারি কর্মসূচিতে মুখ্যমন্ত্রী রোজগার বাড়াতে বা বিকল্প কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে ফের তেলেভাজা বিক্রির পরামর্শ দিলেন। যা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে নতুন করে কটাক্ষ করতে শুরু করেছে বিরোধীরা।
এই প্রথম নয়, এর আগেও তেলেভাজা বিক্রি করে বিকল্প কর্মসংস্থানের কথা একটা সময় বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যে বিষয়টি নিয়ে বিরোধীরা তখন ব্যাপক কটাক্ষ করেন মুখ্যমন্ত্রীকে। তবে মুখ্যমন্ত্রী যে সেই অবস্থান থেকে এতটুকু সরে আসেননি তা বৃহস্পতিবার ফের বোঝালেন খড়্গপুরের সরকারি অনুষ্ঠান মঞ্চে। পুজোর সপ্তাহ দুয়েক আগে মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শ, চা, বিস্কুট, ঘুগনি, তেলেভাজা, ঝালমুড়ি বিক্রি করে রোজগার যথেষ্ট বাড়িয়ে নেওয়া যেতে পারে। তাঁর কথায়, এগুলি নিয়ে বেরিয়ে পড়ুন। বিক্রি তো হবেই, চাহিদাও বাড়বে। এদিন খড়্গপুরে চাকরির নিয়োগপত্র বণ্টন অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী এ প্রসঙ্গ বলেন,”একটু খেটে খেতে হবে। ১০০০ টাকা জোগাড় করে একটা কেটলি কিনুন, আর মাটির ভাঁড় নিন। সঙ্গে কিছু বিস্কুট নিন। আস্তে আস্তে বাড়বে। প্রথম সপ্তাহে কিছুটা বিস্কুট নিলেন, পরের সপ্তায় মা’কে বললেন একটু ঘুগনি তৈরি করে দাও। তার পরের সপ্তাহে একটু তেলেভাজা করলেন। একটা টুল আর একটা টেবিল নিয়ে বসলেন। এই তো পুজো আসছে সামনে। দেখবেন লোককে দিয়ে কুলোতে পারবেন না। আজকাল এত বিক্রি আছে।” অতীতে যখন মুখ্যমন্ত্রী এমন প্রস্তাব দিয়েছিলেন সেই সময় বিরোধীরা নানাভাবে কটাক্ষ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রীকে।
এদিন সেই প্রসঙ্গ তুলে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আমি আগে বললে অনেকে আমাকে টোন টিটকিরি করত। তাঁরা আজকে বুঝবেন।” মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেছেন, “চা ভর্তি কেটলি নিন, সঙ্গে কয়েকটা কাপ নেবেন। এসব নিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়ুন। দেখবেন হু হু করে চা বিক্রি হয়ে যাবে। আর একটা কৌটোয় ঝালমুড়ি ভরে নিন, অল্প বাদাম, ছোলা ফেলে দিন। দেখবেন একের পর একজন খেতে চাইবে। বিক্রি করে শেষ করতে পারবেন না। একটা শালপাতা নিয়ে মাঝখানে ফুটো করে কাঠি ঢুকিয়ে দিন, ঠোঙা হয়ে যাবে। তাতেই ঘুগনি, ঝালমুড়ি বিক্রি করবেন”। সেই সঙ্গে বলেন, “লোকে যদি বলে এসব করছ? বলবেন হ্যাঁ, এসব করি। বলবেন আমরা বিত্তবান হতে চাই না, বিবেকবান হতে চাই।” তবে বিরোধীরা মুখ্যমন্ত্রীর এই ধরনের পরামর্শকে কটাক্ষ করলেও কিছুদিন আগেই রায়গঞ্জের এক পড়ুয়া গবেষণা পত্রের বিষয় হিসেবে চপশিল্পকে বেছে নিয়েছিলেন। তিনি গবেষণায় দেখিয়েছিলেন কীভাবে চপ বিক্রি করে মানুষের রোজগার বাড়ছে। কিন্তু গবেষণায় যাই উঠে আসুক না কেন, ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে তেলেভাজা বিক্রি করে কেউ বিক্ষিপ্তভাবে প্রচুর টাকা রোজগার করতেই পারেন। কিন্তু রাজ্যের বেকার সমস্যা মেটাতে এটা কখনই স্থায়ী সমাধান হতে পারে না। তার জন্য চাই বড় বা মাঝারি শিল্প। সবচেয়ে বড় কথা একটি গ্রামে যদি সবাই রাতারাতি তেলেভাজা বিক্রি করতে বসে যান তাহলে তাঁদের কাছে কিনবেন কে? তখন তো সবাই বিক্রেতা, ক্রেতা হিসেবে আসবেন কারা? এই প্রশ্ন স্বাভাবিকভাবেই উঠছে। তাই দুর্গাপুজোর আগে রোজগার বাড়াতে মুখ্যমন্ত্রী যে পরামর্শ দিয়েছেন তা নিয়ে বড়সড় প্রশ্নচিহ্ন থেকেই যাচ্ছে।
” style=”border: 0px; overflow: hidden”” title=”YouTube video player” width=”560″ height=”315″ frameborder=”0″>