নিজস্ব প্রতিনিধি: করোনা পরিস্থিতিতে বহু মানুষ চাকরি হারিয়েছেন। আবার অনেকের চাকরি থাকলেও বেতনে কোপ পড়েছে। অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গিয়েছে বাস-অটোর ভাড়া। আর গোদের উপর বিষফোঁড়ার মতো নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের পাশাপাশি শাকসবজি থেকে মুরগির মাংস, মাছ, ফল সব কিছুর দামই অনেকটা বেড়ে গিয়েছে। আর এই মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করার ব্যাপারে বিশেষ জোর দিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিষয়টি নিয়ে নবান্নে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করলেন তিনি। নির্দেশ দিলেন দাম কমানোর। কয়েক মাস পরেই পঞ্চায়েত নির্বাচন। তবে কি সেদিকটি মাথায় রেখেই এখন থেকেই মূল্যবৃদ্ধি কমাতে উদ্যোগী হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী? এই প্রশ্ন স্বাভাবিকভাবেই উঠছে।
আসলে শীতের মরশুম শুরুর সময় থেকেই বাজারে শাক-সবজির দাম কমতে থাকে। মোটের উপর এটাই চেনা ছবি। কিন্তু এবার দেখা যাচ্ছে শাকসবজি থেকে মাছ-মাংসের দাম কার্যত সাধারণ মানুষের ধরাছোঁয়ার বাইরেই রয়েছে। তাই নবান্নে টাস্কফোর্স ও কৃষি বিপণন দফতরের সঙ্গে জরুরি বৈঠকের পর মুখ্যমন্ত্রীর কড়া নির্দেশ, অবিলম্বে জিনিসপত্রের দাম কমাতে হবে। তার জন্য যা যা করা দরকার সেই নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন কলকাতা তথা বিভিন্ন জায়গায় চড়া দামে শাকসবজি যে বিক্রি করা হচ্ছে সেই খবর পেয়েছেন তিনি। বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্ন, “একটা বাঁধাকপির দাম কেন ৪০ থেকে ৫০ টাকা নেওয়া হচ্ছে?” সেই সঙ্গে যেভাবে আলুর দাম এতটা বেড়ে গিয়েছে তা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তিনি। দাম কমাতে হিমঘর থেকে আলু বাজারে আনার কথা বলেছেন তিনি। সেই সঙ্গে তাঁর প্রশ্ন, একটা বাঁধাকপির দাম কেন এত বেশি নেওয়া হচ্ছে? এছাড়া পালং শাক, ডিম, মাংস ইত্যাদির দাম নিয়েও প্রশ্ন তোলেন মুখ্যমন্ত্রী।
সামনেই পঞ্চায়েত নির্বাচন। তার আগে যাতে সাধারণ মানুষের কাঁধে বাড়তি বোঝা না চাপে সেই লক্ষ্যে জিনিসপত্রের দাম এখন থেকেই মুখ্যমন্ত্রী কমানোর ব্যাপারে উদ্যোগী হয়েছেন বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। তবে এই প্রথম নয়, এর আগে বহুবার মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণের জন্য মুখ্যমন্ত্রী জরুরি ভিত্তিতে বৈঠক ডেকে নানা নির্দেশ দিয়েছেন। তাতে দিন কয়েক জিনিসপত্রের দাম একটু কমলেও পরে আবার যা ছিল তাই হয়েছে। ব্যবসায়ীরা খেয়ালখুশি মতো জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে চলেছেন। সেখানে যেন কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই সরকারের। বছরের পর বছর ধরে এমনটাই চলে আসছে। যা একপ্রকার গা সওয়া হয়ে গিয়েছে সাধারণ মানুষের। একশ্রেণির ব্যবসায়ীদের ডোন্টকেয়ার মনোভাব প্রশাসন দেখেও কেন যে চুপ করে থাকে সেই প্রশ্ন বহুবার উঠেছে। তবে কি এবারও সেই একই পরিস্থিতি দেখা যাবে? অনেকেই মনে করছেন পঞ্চায়েত নির্বাচন পর্যন্ত কিছুটা হলেও নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র থেকে শাকসবজি, মাছ, মাংস, ডিমের দাম মোটের উপর নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকতে পারে। কিন্তু তারপরে ফের সেগুলির দাম মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাবে, এই আশঙ্কা রয়েছে। এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূল কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতার মধ্যে পড়বে বলে রাজনৈতিক মহল মনে করে। তাই এখন থেকেই কোমর বেঁধে নামতে চাইছে তৃণমূল। আর সেই লক্ষ্যেই মুখ্যমন্ত্রী বিশেষ নজর দিয়েছেন বাজারদর নিয়ন্ত্রণের দিকে। এই অবস্থায় মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ ব্যবসায়ীরা কতটা মেনে চলেন সেদিকেই নজর থাকবে সবার।