খোদ থানার ওসির মুখেই কাটমানির কথা, কেন এমন কথা বললেন পুলিশ অফিসার?

খোদ থানার ওসির মুখেই কাটমানির কথা, কেন এমন কথা বললেন পুলিশ অফিসার?

নিজস্ব প্রতিনিধি: গত লোকসভা নির্বাচনে পর থেকেই কাটমানি ইস্যুতে তোলপাড় হয়ে যায় রাজ্য রাজনীতি। কাটমানি ইস্যুতে  বিরোধীরা তৃণমূলকে লাগাতার কোণঠাসা করে যায়। একটা সময় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই বার্তা দিতে বাধ্য হয়েছিলেন যে, যারা যারা কাটমানি নিয়েছেন অবিলম্বে তাঁদের সেটা ফেরত দিতে হবে। এটা ২০১৯ সালের ঘটনা। সেই সময় কংগ্রেস দাবি করে পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়ের জমানায় দুর্নীতির সন্ধানে যেভাবে ওয়াংচু কমিশন গঠন করা হয়েছিল, ঠিক সেভাবেই কমিশন গঠন করে কাটমানি ঘটনার তদন্ত করতে হবে। এরপরে গঙ্গা দিয়ে অনেক জল বয়ে গিয়েছে। বিরোধীরা তৃণমূলের বিরুদ্ধে কাটমানি ইস্যুতে আরও সরব হয়েছে। কিন্তু সোমবার মুর্শিদাবাদ জেলার বড়ঞা থানার ওসি সন্দীপ সেন কাটমানি ইস্যুতে নাম না করে তৃণমূলের নেতাদের একাংশের পাশাপাশি যেভাবে পুলিশ প্রশাসনের একশ্রেণির কর্তাদের দিকে ইঙ্গিত করেছেন, তাতে গোটা বিষয়টি রাতারাতি অন্য মাত্রা পেয়ে গিয়েছে।

এতদিন বিরোধীরা যে অভিযোগ করছিল সেই একই কথা শোনা গিয়েছে পুলিশকর্তার মুখে। তাতে বিরোধীদের আনা কাটমানি নিয়ে অভিযোগ কার্যত মান্যতা পেয়ে গিয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই গোটা ঘটনায় প্রবল অস্বস্তিতে পড়েছে তৃণমূল। কালীপুজোর রাতে বড়ঞা বিধানসভা কেন্দ্রের শ্মশানকালী মন্দিরের পুজো ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন ওসি সন্দীপ সেন। কে বা কারা কত শতাংশ কাটমানি নেন, সেই ফিরিস্তি তুলে ধরেছেন তিনি। ইতিমধ্যেই সেই ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। সেই ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে বড়ঞা বিধানসভা কেন্দ্রের শাওড়া অঞ্চলের তালবোনা গ্রামে ৩৫০ বছরের পুরনো শ্মশানকালী মন্দিরের পুজো উপলক্ষে সাংস্কৃতিক মঞ্চে উপস্থিত রয়েছেন সন্দীপ। তাঁকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘বড়ঞা থানার শাও়ড়া গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় রাস্তা তৈরি করার জন্য ৪০ শতাংশ কম দর দিয়ে টেন্ডার পেয়েছিলেন স্থানীয় কন্ট্রাক্টর। সেই কন্ট্রাক্টর নিজে ২০ পার্সেন্ট খাচ্ছে। ব্লক অফিসে ৪ পার্সেন্ট দিয়েছে। আগের ওসিকে ৫ পার্সেন্ট দিয়েছে। আর খেঁকশিয়ালের বাচ্চাদেরকে আরও প্রায় ৫ শতাংশ টাকা দিতে হয়েছে। মোট ৭৫ পার্সেন্ট। মাত্র ২৫ শতাংশ টাকায় কী কাজ হবে আপনারাই বিচার করুন।’’ যদিও প্রাক্তন ওসির নাম করেননি সন্দীপ। এখানেই থেমে থাকেননি তিনি।

থানার বড়বাবুকে আরও বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘থানার দায়িত্ব নেওয়ার পর এই কাটমানি খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছি। আর বর্তমান বিধায়কের সঙ্গে কথা বলে ঠিক করে দিয়েছি, প্রত্যেক অঞ্চলের কন্ট্রাক্টর সেই অঞ্চলেই কাজ করবে।’’ আর খেকশিয়ালদের বাচ্চা বলতে তিনি কাদের কথা উল্লেখ করেছেন সেটা নিয়েও ধোঁয়াশা রয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই থানার ওসির এমন মন্তব্যে হইচই পড়ে গিয়েছে মুর্শিদাবাদ জেলা জুড়ে। যেভাবে ওসি স্বীকার করে নিয়েছেন পুলিশ প্রশাসনের একাংশ সরাসরি কাটমানির সঙ্গে যুক্ত, তাতে গোটা বিষয়টি নিঃসন্দেহে অন্য মাত্রা পেয়েছে। সিপিএম, বিজেপি বা কংগ্রেসের বক্তব্য, এতদিন তারা এ কথাই বলে এসেছে। সবচাইতে বড় কথা এলাকার উন্নয়নের কাজ সংক্রান্ত টেন্ডারের সঙ্গে পুলিশ প্রশাসন আগে জড়িয়ে থাকত এ কথা যেভাবে বলেছেন থানার বড়বাবু সন্দীপ সেন, তাতে এটাই বোঝা যাচ্ছে দুর্নীতি প্রশাসনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে কীভাবে ঢুকে গিয়েছে।

যদিও ওই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বড়ঞার তৃণমূল বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহা। তাঁর দাবি, ‘‘আমার বিধানসভা এলাকায় কোনও অনৈতিক কাজকে প্রশ্রয় দেওয়া হয় না। ওসি এ ধরনের দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য না করলেই ভাল করতেন।’’  যদিও তাতে বিতর্ক থামছে না। পঞ্চায়েত নির্বাচন যত এগিয়ে আসবে ততই বিষয়টি নিয়ে যে চর্চা আরও বাড়বে তা ভাল করেই বুঝতে পারছে তৃণমূল। এতে মুর্শিদাবাদের বড়ঞা এবং সংলগ্ন অঞ্চলে তৃণমূলের খারাপ ফলের সম্ভাবনা রয়েছে বলেও দল মনে করছে। যদিও মঞ্চে এই বক্তব্য রাখার পর থেকেই এই ইস্যুতে নতুন করে আর মুখ খুলতে চাইছেন না ওসি সন্দীপ সেন। এই পরিস্থিতিতে জেলা পুলিশের শীর্ষ কর্তারা বিষয়টি নিয়ে কোনও পদক্ষেপ করেন কিনা এখন সেটাই দেখার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

4 − 1 =