নিজস্ব প্রতিনিধি: অনুব্রত মণ্ডল গ্রেফতার হওয়ার পর থেকেই তৃণমূল নেতৃত্ব বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছেন। বিভিন্ন সভায় নেতারা ইডি, সিবিআই তথা কেন্দ্রকে নিশানা করে ঝাঁঝালো বক্তব্য রাখছেন। এই পরিস্থিতিতে রবিবার বেহালার একটি সভায় বিষয়টি নিয়ে মুখ খুললেন তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অনুব্রতর সমর্থনে মুখ্যমন্ত্রীকে বলতে শোনা গেল,”কেষ্টকে কেন গ্রেফতার করা হল? ওঁর দোষ কি? ওকে জেলে রেখে কী হবে?” বেহালা পশ্চিমের ম্যান্টনে প্রাক স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে দাঁড়িয়ে অনুব্রতকে রবিবার এভাবেই সমর্থন করলেন মুখ্যমন্ত্রী। অনুব্রতকে কেন গ্রেফতার করা হল, সরাসরি এই প্রশ্ন তুললেন তিনি। শুধু তাই নয়, অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকে মমতাকে বলতে শোনা যায়,”কতজনকে অ্যারেস্ট করবে? আমি সবাইকে নিয়ে জেল ভরো আন্দোলন করব”। সেই সঙ্গে ক্ষোভের সঙ্গে তিনি বলেন,” চব্বিশে মোদি জিতবেন না। তাই খেলা শুরু করেছে। সব ভাঙতে চাইছে। বাংলাকে দুর্বল করতে চাইছে। ওদের পরিকল্পনা কি আমি জানি। এমনি ভোটে জিততে পারবে না। তাই বলছে ববিকে গ্রেফতার করো, অরূপকে গ্রেফতার করো, মালাকে গ্রেফতার করো, অভিষেককে গ্রেফতার করো। কবে কবে করবে বলো? কাকে কোন জেলে রাখবে? আমার সব কর্মীকে নিয়ে আমি জেল ভরো আন্দোলন করব”। এরপরই কর্মী সমর্থকদের উদ্দেশে মমতা বলেন,” কাল যদি আমার বাড়িতে যায়, কি করবেন, রাস্তায় নামবেন তো?” তবে তাঁর বাড়িতে কাদের যাওয়ার কথা মুখ্যমন্ত্রী বলতে চেয়েছেন সেটা স্পষ্ট করেননি তিনি। যদিও এটা পরিষ্কার যে, তিনি কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি এবং সিবিআইয়ের কথাই বলতে চেয়েছেন।
স্বাভাবিকভাবেই মমতার এই বক্তব্য নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে জোর চর্চা শুরু হয়েছে। কয়লা পাচার, গরু পাচার থেকে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ড, প্রত্যেকটি কেলেঙ্কারিতে তৃণমূল নেতাদের যোগ রয়েছে বলে বিরোধীরা বহুদিন ধরেই সোচ্চার হয়েছেন। আর পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং অনুব্রত মণ্ডল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার হাতে গ্রেফতার হওয়ার পর থেকেই গোটা বিষয়টি সম্পূর্ণ অন্য মাত্রা পেয়েছে। বিরোধীরা বারবার বলছেন এই সমস্ত দুর্নীতির ঘটনায় দলের মাথাদের ধরতে হবে। সেক্ষেত্রে সরাসরি নাম না করে তাঁরা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিকেই ইঙ্গিত করছেন। এই ইস্যুতে বিরোধীরা বারবার ‘পিসি-ভাইপো’ প্রসঙ্গ তুলে আক্রমণ করছেন তৃণমূলকে। সবচেয়ে বড় কথা বিগত কয়েক মাস ধরে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই এবং ইডি বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের তদন্তে অনেকটাই গতি বাড়িয়েছে। এই অবস্থায় পার্থ-অনুব্রত গ্রেফতার হওয়ার পরই রাজ্য রাজনীতিতে জোর জল্পনা শুরু হয়েছে পরবর্তী নামগুলিকে নিয়ে। এবার তাহলে কে? সিবিআই-ইডির জালে কে ধরা পড়বেন? এই প্রশ্ন নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে চর্চা বহুগুণে বেড়েছে। আর এই আবহের মধ্যেই গ্রেফতার হওয়ার প্রসঙ্গ তুলে মুখ্যমন্ত্রীর মুখে উঠে এসেছে অভিষেক, ফিরহাদদের নাম। সেই সঙ্গে নিজের বাড়িতেও সরাসরি নাম না করে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার হানা দেওয়ার কথাটি উঠে এসেছে তাঁর মুখে। তবে কি মুখ্যমন্ত্রী তাঁর নিজস্ব ‘সোর্স নেটওয়ার্ক’ থেকে এ বিষয়ে কিছু আভাস পেয়েছেন? এই প্রশ্ন তুলছে ওয়াকিবহাল বহাল মহল। যদিও পরক্ষণেই সেগুলিকে আমল না দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী জোরের সঙ্গে বলেছেন, “আমি ভয় পাই না, আমি লড়ে নেব।” তবে মুখ্যমন্ত্রী যাই বলুন না কেন রাজনৈতিক মহল মনে করে বেশ অস্থির অবস্থার মধ্য দিয়ে চলছে তৃণমূল। আর সেটা ভাল করেই বুঝতে পারছেন খোদ তৃণমূল নেত্রী। এই পরিস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রী বিজেপি তথা অন্যান্য বিরোধীদের বিরুদ্ধে পাল্টা আক্রমণের রাস্তাই বেছে নিয়েছেন। পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে সেই আক্রমণে যে আরও গতি আসবে তা স্পষ্ট করে দিলেন খোদ তৃণমূল সুপ্রিমো।
