নয়াদিল্লি: এবার কি মামলার গেরোয় আটকে যাবে আবাস যোজনা প্রকল্প? ফের মামলার হুঁশিয়ারি শুভেন্দু-সহ অন্যান্য বিজেপি নেতাদের! শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে বিগত কয়েক মাস ধরে ঝড় বয়ে যাচ্ছে রাজ্য রাজনীতিতে। টাকা দিয়ে প্রভাব খাটিয়ে বহু পরীক্ষার্থী চাকরি পেয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। আর সেই বিষয়গুলি নিয়ে বহু আগেই কলকাতা হাইকোর্টের মামলা দায়ের করেছেন বহু চাকরিপ্রার্থী। কলকাতা হাইকোর্ট তার ভিত্তিতে একের পর এক নজিরবিহীন পর্যবেক্ষণ শোনাচ্ছে। নিয়োগ দুর্নীতি মামলা আগামী দিনে কোন পথে যাবে সেদিকে অবশ্যই সবার নজর থাকবে। কিন্তু এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা প্রকল্প নিয়েও ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে শাসক দলের একাংশের বিরুদ্ধে। অভিযোগ অনেকের পাকা বাড়ি রয়েছে, তা সত্ত্বেও প্রভাব খাটিয়ে তাঁদের নাম আবাস যোজনার লিস্টে তুলে দেওয়া হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে কলকাতা হাইকোর্টে আবাস যোজনা প্রকল্প নিয়ে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করলেন পুরুলিয়া জেলা বিজেপি সভাপতি বিবেক রঙ্গা। মামলার আবেদনে তিনি দাবি করেছেন প্রকৃত প্রাপকদের খুঁজে বের করা হোক। যাদের পাকা বাড়ি বা প্রচুর সম্পত্তি রয়েছে তাঁদের যেন বাড়ি তৈরির জন্য টাকা দেওয়া না হয়, এই মর্মেই আবেদন করেছেন তিনি। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে এবার কি তবে মামলার গেরোয় আটকে যেতে পারে আবাস যোজনা প্রকল্প?
দীর্ঘদিন পর পশ্চিমবঙ্গে আবাস যোজনা প্রকল্পের জন্য অর্থ মঞ্জুর করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। কিন্তু শুরু থেকেই এই প্রকল্পে নাম তোলা নিয়ে শাসকদলের নেতাকর্মীদের একাংশের বিরুদ্ধে লাগাতার অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে। যে ঘটনায় অস্বস্তি বেড়েছে তৃণমূল সরকারের। সদ্য বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী উলুবেড়িয়া এবং ভগবানপুরের সভায় তৃণমূলকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন আবাস যোজনায় প্রকৃতদের নাম না উঠলে তিনি আদালতের দ্বারস্থ হবেন। এরপরই দেখা যাচ্ছে মঙ্গলবার পুরুলিয়া জেলা বিজেপি সভাপতি বিষয়টি নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেছেন।
কয়েকদিন আগেই বিষয়টি নিয়ে আদালতে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন ঘাটালের বিজেপি বিধায়ক শীতল কপাট। বিজেপি বিধায়কের অভিযোগ, সেখানে আবাস যোজনা সমীক্ষার কাজ ঠিকমতো হয়নি। তাঁর দাবি বাড়ি প্রাপকদের নামের তালিকায় থাকা অনেকেরই পাকা বাড়ি রয়েছে। সেই সঙ্গে তিনি দাবি করেছেন এই তালিকায় এমন অনেকের নাম রয়েছে যারা আগে গীতাঞ্জলি আবাস প্রকল্পে বাড়ি পেয়েছিলেন। এরপরই তিনি এ বিষয়ে আদালতে যাওয়ার কথা বলেছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, “দলগতভাবে আমরা ঠিক করেছি নতুন বছরে প্রথমেই সে সমস্ত কর্মীর নামে মামলা করব যারা সার্ভের কাজে যুক্ত রয়েছেন। এই কাজ করতে গিয়ে দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিয়ে তাঁরা ভুল তথ্য দিয়েছেন।”
স্বাভাবিকভাবেই বিষয়টি নিয়ে আশা কর্মী, আইসিডিএস কর্মীরা উদ্বেগের মধ্যে রয়েছেন। কারণ সার্ভে প্রক্রিয়ার সঙ্গে তাঁরা যুক্ত রয়েছেন। যদিও স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের অভিযোগ এভাবে বিজেপি বিধায়ক আশা কর্মীদের ভয় দেখানোর চেষ্টা করছেন। সেই সঙ্গে বিজেপি বিধায়ক অভিযোগ করে বলেছেন, এই তালিকায় যাদের নাম রয়েছে তাঁরা সকলেই তৃণমূল নেতাদের ঘনিষ্ঠ। এমনকী তৃণমূলের বিভিন্ন পদেও তাঁরা রয়েছেন। শুধু ঘাটাল নয়, সার্বিকভাবে আবাস যোজনা প্রকল্প নিয়ে বাংলা জুড়ে দুর্নীতি হয়েছে বলে বিজেপির অভিযোগ। পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে এই ঘটনা তৃণমূলের অস্বস্তি বহু গুণে বাড়িয়ে দিয়েছে। এই অবস্থায় কলকাতা হাইকোর্ট দায়ের হওয়া জনস্বার্থ মামলা নিয়ে কি অবস্থান নেয় সেটাই দেখার।