নিজস্ব প্রতিনিধি: কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রকল্পে টাকা না পাওয়ার অভিযোগ তুলে বহুদিন ধরেই বঞ্চনার অভিযোগে সরব হয়েছে তৃণমূল। বিশেষ করে একশো দিনের কাজের প্রকল্পের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা প্রকল্প, রাজ্য সরকার বিপুল টাকা কেন্দ্রের কাছ থেকে পায় বলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারবার দাবি করেছেন। এই অবস্থায় পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে কিছুটা জট কাটল। প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় বাড়ি তৈরির জন্য ৮২০০ কোটি টাকা দেওয়া হল রাজ্যকে। তবে এই টাকা দেওয়ার সময় কেন্দ্র শর্তে জানিয়েছে প্রকল্পে শুধু প্রধানমন্ত্রীর নামই থাকবে। সেখানে মুখ্যমন্ত্রীর নাম রাখা যাবে না। যদিও রাজ্যের দাবি এটি একটি যৌথ প্রকল্প। রাজ্য ও কেন্দ্রের অর্থে নির্মিত হয় বাড়িগুলি। তাই প্রকল্পে প্রধানমন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রী দু’জনের নামই থাকা উচিত বলে দাবি উঠেছিল। কিন্তু সেই দাবি মানেনি কেন্দ্র।
জানা গিয়েছে যে ৮২০০ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে তাতে ১১ লক্ষ ৩৬ হাজার বাড়ি তৈরি করতে হবে। সেক্ষেত্রে বাড়ি তৈরির ৬০ শতাংশ টাকা কেন্দ্র দিল। বাকি ৪০ শতাংশ রাজ্যকে দিতে হবে। এর আগে প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা প্রকল্পে ৫৮৪ কোটি টাকা পশ্চিমবঙ্গকে দেওয়া হয়েছিল। অর্থাৎ ধাপে ধাপে কেন্দ্র টাকা দিচ্ছে রাজ্যকে। যেটিকে বিজেপির কৌশলী চাল হিসেবেই দেখছে রাজনৈতিক মহল। যদিও রাজ্য সরকারের অভিযোগ একশো দিনের প্রকল্পের প্রাপ্য টাকা এখনও বাকি রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ বারবার দাবি করলেও সেই টাকা পাওয়া যাচ্ছে না। বুধবার নেতাজি ইন্ডোরে জমির পাট্টা বিলি অনুষ্ঠানেও এই বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গিয়েছে মুখ্যমন্ত্রীকে।
পঞ্চায়েত নির্বাচন কয়েক মাসের মধ্যেই হবে। ইতিমধ্যেই প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দল কম বেশি প্রচারে নেমে পড়েছে। তার আগে কেন্দ্রীয় সরকার যেভাবে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা প্রকল্পের জন্য টাকা পাঠাল সেটিকে কৌশলী চাল হিসেবেই দেখছে রাজনৈতিক মহল। কারণ গ্রামাঞ্চলে বিজেপির বিরুদ্ধে এই ইস্যুতে লাগাতার অভিযোগ করছিল তৃণমূল। এবার পাল্টা বিষয়টি নিয়ে প্রচারে নামতে পারবে বিজেপি। উল্লেখ্য ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে দিল্লি যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সফরে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর মুখোমুখি সাক্ষাৎ হবে। তার আগেই কেন্দ্রের তরফে আবাস যোজনার টাকা পাঠানো বেশ তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে। সদ্য পুরুলিয়া ও বাঁকুড়া সফরে গিয়ে বিজেপি নেতা অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তীকে এই সংক্রান্ত প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার কেন প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার টাকা পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে দিচ্ছে না, সেই প্রশ্ন তুলেছেন বহু গ্রামবাসী। জবাবে মিঠুন বলেছেন টাকা কেন্দ্র নিশ্চয়ই দেবে, তবে রাজ্য সরকারকে অবশ্যই পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসেব দিতে হবে। উল্লেখ্য রাজ্য বিজেপির অভিযোগ কেন্দ্র টাকা পাঠালেও সেই টাকা ঠিক জায়গায় খরচ না করে নয়ছয় করছে তৃণমূল সরকার। কিন্তু বিজেপি নেতারা যাই বলুন না কেন, বিষয়টি নিয়ে তাঁরাও যে যথেষ্ট চাপে ছিলেন তা স্পষ্ট। সেক্ষেত্রে পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিজেপির বিরুদ্ধে বঞ্চনার অভিযোগ তুলে তৃণমূল ভোটবাক্সে তার ভালই ফায়দা তোলার জন্য রীতিমতো প্রস্তুত রয়েছে। তাই পরিস্থিতি আঁচ করে কেন্দ্রীয় সরকার টাকা পাঠাতে আর দেরি করেনি বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। এই অবস্থায় কেন্দ্রীয় সরকারের গুণকীর্তন করে পঞ্চায়েত ভোটে বিজেপি নতুন উদ্যমে যে ঝাঁপাবে, তা নিশ্চিত।